রাসেল ডমিঙ্গো—গত কয়েক দিন শিরোনামে এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচের নামটা দেখলেই মনে হয়, খবরে হয়তো চমকপ্রদ কিছু আছে। সেই অনুমান কখনোই মিথ্যা হয়নি। ডমিঙ্গোকে নিয়ে বোর্ডের মন্তব্য হোক কিংবা ডমিঙ্গোর নিজের—এসব নিয়ে তুমুল শোরগোল চলছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। যেটিতে সর্বশেষ সংযোজন প্রথম আলোকে দেওয়া রাসেল ডমিঙ্গোর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার এবং তাঁর পদত্যাগের খবর।
একটু পেছনে গিয়ে শুরু করলে প্রথমেই আসবে ডমিঙ্গোকে টি-টোয়েন্টি থেকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জনের বিষয়টি। সেই গুঞ্জনের সত্যতা আছে, তা অবশ্য অনুমান করা গিয়েছিল। কারণ, বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সরাসরিই টি-টোয়েন্টিতে রাসেল ডমিঙ্গোর কোচিং স্টাইলের সমালোচনা করেছিলেন।
বিসিবি টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট হিসেবে শ্রীধরন শ্রীরামকে নিয়োগ দেওয়ার পর ডমিঙ্গোকে টি-টোয়েন্টি থেকে সরিয়ে ওয়ানডে ও টেস্টে রাখার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটিই শুধু বাকি ছিল। সেই ঘোষণা যখন এল, তখন প্রশ্ন ছিল, ডমিঙ্গো এতে রাজি হবেন কি না। বিসিবির অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন, এমন সিদ্ধান্তের পর ডমিঙ্গো হয়তো না-ও থাকতে পারেন।
কিন্তু আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানের পাশে দাঁড়িয়ে ডমিঙ্গো নিজেই ঘোষণা দিলেন, শুধু ওয়ানডে ও টেস্ট দল নিয়ে কাজ করার ধারণাটা দারুণ। টি-টোয়েন্টি থেকে অব্যাহতি পাওয়াটা তাঁর জন্য বরং স্বস্তিরই। তিনি পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে পারবেন, অতিরিক্ত ক্রিকেটের কারণে যা পারছেন না। চুক্তি অনুযায়ী এমনিতেই ডমিঙ্গোর অনেক ছুটি পাওনা ছিল।
আর এটাও তো সত্যি, টি-টোয়েন্টি দল নিয়ে তিনি বেশি কিছু করতে পারছিলেন না। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যে সংস্করণ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই সংস্করণে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার নানা কারণ তিনি তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির রুগ্ণ দশাও ফুটে উঠেছে তাঁর কথায়। প্রধান কোচ হিসেবে তিনি যে দলের ক্রিকেটীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বাইরের হস্তক্ষেপ সামলাতে পারছিলেন না, সেই অসহায়ত্বের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। সব মিলিয়েই টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে ডমিঙ্গোকে খুব একটা ক্ষুব্ধ মনে হয়নি। দেশ ছাড়ার আগে ডমিঙ্গোর শিশুসুলভ আনন্দ দেখলে বরং কারও মনে হতেই পারত, তিনি যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।
তা-ই যদি হয়, এরও কারণ আছে। আগামী নভেম্বরে ভারত বাংলাদেশ সফরে আসার আগপর্যন্ত বাংলাদেশ দল টেস্ট ও ওয়ানডে খেলবে না। এ সময়ে বাংলাদেশ খেলবে টানা ৩টি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট—এশিয়া কাপ, নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপ। ডমিঙ্গোকে টি-টোয়েন্টি থেকে সরিয়ে দেওয়ায় তাঁকে এসব নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। তিনি এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ‘এ’ ও আফগানিস্তান ‘এ’ দলের সিরিজের সময় কাজ করবেন।
ডমিঙ্গো আরেকটা কারণেও স্বস্তি বোধ করতে পারেন। বিসিবির সঙ্গে তাঁর চুক্তির মেয়াদ আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এর আগে তাঁকে বরখাস্ত করলে বিসিবিকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেতন দিতে হবে। আর ডমিঙ্গো নিজেই যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে নোটিশ পিরিয়ড হিসেবে তাঁকে তিন মাস কাজ করতে হবে। এসব হিসাব-নিকাশ করেই ডমিঙ্গো এখনই পদত্যাগ করছেন না। বরং এটা মোটামুটি নিশ্চিত, পাওনা ছুটি কাটিয়ে আমিরাতে ‘এ’ দলের সঙ্গে কাজ করতে ফিরবেন তিনি। তবে সেখান থেকে ডমিঙ্গোর আর বাংলাদেশে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই জানা গেছে। ৩০ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে রাসেল ডমিঙ্গোর আনুষ্ঠানিক বিদায় বলে দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তত দিন পর্যন্ত ডমিঙ্গোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শুধু কাগজে-কলমেই। সংবাদমাধ্যমে অবশ্য এরই মধ্যে ডমিঙ্গোর পদত্যাগ করার খবর চলে এসেছে। বিসিবি অবশ্য এখনো ডমিঙ্গোকেই বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে ও টেস্ট দলের প্রধান কোচ বলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডমিঙ্গোই এই দুই সংস্করণে বাংলাদেশের কোচের ভূমিকা পালন করবেন বলে জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী।
ডমিঙ্গোর পদত্যাগ প্রসঙ্গে গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আজ ডমিঙ্গোর সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়েছে। রাসেলও একটু বিব্রত বিষয়গুলো নিয়ে। যে সংবাদগুলো এসেছে, সেগুলো আসলে সঠিক না। আমরাও বিষয়টা দেখেছি। আমি মনে করি যে বিষয়টা পুরোটাই ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। রাসেল দ্রুতই দল নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা বোর্ডে জমা দেবে। এরপর “এ” দলের সফরে যাবে।’
রাসেল ডমিঙ্গো বিসিবিকে যা জানিয়েছেন, সেটাই বলেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী। ডমিঙ্গোর মনে কী আছে, তা জানতে একটু অপেক্ষাই করতে হচ্ছে।