সৌম্য–নাঈম হতাশ করেছেন
সৌম্য–নাঈম হতাশ করেছেন

হতাশার নাম সৌম্য–নাঈম

হাই পারফরম্যান্স বিভাগ আর জাতীয় দলের কয়েকজন ক্রিকেটার নিয়েই গড়া হয়েছিল ইমার্জিং এশিয়া কাপের বাংলাদেশ ‘এ’ দল। আগের চারটি ইমার্জিং এশিয়া কাপ হয়েছিল মূলত অনূর্ধ্ব-২৩ পর্যায়ের ক্রিকেটারদের নিয়ে। দলে অনূর্ধ্ব-২৩–এর চেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটার থাকতে পারত চারজন।

কিন্তু এ বছর বয়সের কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে বিসিবি তাই উদীয়মানদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকেও সুযোগ দিয়েছিল দলে। আর তাতে বাংলাদেশ ‘এ’ দলটা ছিল নাম আর অভিজ্ঞতার ভারে টুর্নামেন্টের অন্য দলগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে।

কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে তার প্রতিফলন কোথায়! গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে হেরেছে সাইফ হাসানের দল। পরে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে নিশ্চিত জেতা ম্যাচ হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায়। বাংলাদেশ জিতেছে শুধু আফগানিস্তান ‘এ’ এবং ওমান জাতীয় দলের বিপক্ষে। অথচ দলে ছিলেন সৌম্য সরকারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়ও। ছিলেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দুই ম্যাচ খেলা মোহাম্মদ নাঈমও। এ ছাড়া জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান, সাইফ হাসান, মেহেদী হাসানও খেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।

বিশ্বকাপ মাথায় রেখে ইমার্জিং এশিয়া কাপে নাঈম আর সৌম্যর দিকেই বেশি দৃষ্টি ছিল বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ একজন বিকল্প ওপেনার খুঁজছে, সঙ্গে একজন ৭ নম্বর ব্যাটসম্যানও। সে ৭ নম্বর ব্যাটসম্যান যদি হয় পেস বোলিং অলরাউন্ডার, তাহলে তো কথাই নেই। অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের কিছু ভেন্যুতে শিশিরের প্রভাবও থাকতে পারে। সে জন্যই ৭ নম্বরের আলোচনায় ঘুরেফিরে আসছে সৌম্যর নাম।

কিন্তু ৪ ম্যাচের ৩ ইনিংসে ব্যাট করে ১০৪ স্ট্রাইক রেটে ৯৫ রান করাটা কি সৌম্যর জন্য যথেষ্ট হবে? বিকল্প ওপেনার হিসেবে যে নাঈমকে ভাবা হচ্ছিল, তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৪ ইনিংসে ৯৯ স্ট্রাইক রেটে ১২৫ রান, সর্বোচ্চ ইনিংস ৪৭ রানের। ইমার্জিং এশিয়া কাপে দলের সঙ্গে সফর করা নির্বাচক হাবিবুল বাশারের কাছে টুর্নামেন্ট শেষে এই দুজনের পারফরম্যান্স নিয়ে জানতে চাইলে তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর ছিল, ‘আপনারা সবাই দেখেছেন তারা কেমন করেছে।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষেও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন নাঈম

হাবিবুলের মন্তব্যে বেজে ওঠা হতাশার প্রতিধ্বনিটা নিশ্চয়ই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না কারও। ইমার্জিং এশিয়া কাপে অন্তত নিজেদের জন্য কোনো সুখবরের জন্ম দিতে পারেননি সৌম্য-নাঈম, যেটা তাঁদের বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখাতে পারে। অবশ্য বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগে বাংলাদেশের সামনে আছে এশিয়া কাপও। সৌম্য-নাঈম যদি এখনো কোচ-নির্বাচকদের বিশ্বকাপের ভাবনায় থেকে থাকেন, সেখানেও নিশ্চয়ই নিজেদের প্রমাণের আরও সুযোগ পাবেন তাঁরা।

ইমার্জিং এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রধান কোচ ছিলেন বিসিবির হাই পারফরম্যান্স বিভাগের কোচ ডেভিড হেম্প। ভারতের কাছে সেমিফাইনালে হারটাই তাঁর কাছে বেশি হতাশার। যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দলে ছিল, তাতে শিরোপা জয়ের স্বপ্নই দেখেছিল সবাই। তবু কোচদের তো ইতিবাচক হতে হয়। কাল মুঠোফোনে হেম্পও বললেন, ‘সেমিফাইনাল হেরেছি, এটা অবশ্যই হতাশার। ম্যাচটা জেতা উচিত ছিল। আমরা ফাইনালেও যেতে পারতাম। তবু সব মিলিয়ে আমরা ভালোই খেলেছি। যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি আর পারফর্ম করেছি, তাতে একটা সামঞ্জস্য আছে। তবে ফল আরও ভালো হতে পারত, যা নিয়ে সামনে কাজ করার আছে।’

ইমার্জিং এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন তানজিদ হাসান

ইমার্জিং এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন তানজিদ হাসান (১৭৯), সর্বোচ্চ ৯ উইকেট নিয়েছেন তানজিম হাসান। এবারের আসরের প্রাপ্তি খুঁজতে হলে প্রথমে বলতে হবে এই দুজনের নামই। হেম্পও বলেছেন, ‘আমরা কিছু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নিয়েছি ঠিকই, তবে কিছু ক্রিকেটার নিয়েছি যারা ভবিষ্যতে ভালো করতে পারে। সবাই সব ম্যাচ জিততে চায়, ঠিক আছে। কিন্তু ক্রিকেটার গড়ে তোলারও ব্যাপার থাকে।’

২৭ জুলাই থেকে সে কাজেই নামবেন হেম্প। কয়েক দিন বিশ্রাম নিয়ে বগুড়ায় এইচপি ক্যাম্পে যোগ দেবেন ক্রিকেটাররা। ক্যাম্প চলবে প্রায় এক মাস।