বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম

‘নেতৃত্ব দিতে নয়, সহযোগিতা করতে এসেছি’

কদিন আগেও তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন শ্রীধরন শ্রীরাম। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন, আইপিএলের নতুন মৌসুম শুরু হতেও দেরি। এরই মধ্যে বিসিবি পরিচালক ও জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদের ফোন কল। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব।

সেই শ্রীরাম আজ দুবাইয়ে যখন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এলেন, তখন তিনি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট। খাতা কলমে ‘প্রধান’ পদবিটা না থাকলেও সে ভূমিকাটা যে তাঁকেই পালন করতে হবে—সেটি এক রকম নিশ্চিতই ছিল। আজ অবশ্য নিজের ভূমিকাটা আরেকটু পরিষ্কার করলেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার। বললেন, দলকে নেতৃত্ব দিতে নয়, সহযোগিতা করতেই এসেছেন।

গত ১৯ আগস্ট শ্রীধরন শ্রীরামকে জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগের ঘোষণা দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। এরপর বিসিবির আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেও শ্রীরামকে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট হিসেবেই উল্লেখ করা হয়। তবে তখনো পরিষ্কার ছিল না, এশিয়া কাপে দলের সঙ্গে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো যাচ্ছেন কি না। শেষ পর্যন্ত ডমিঙ্গো নয়, এশিয়া কাপে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে গেছেন শ্রীরামই।

২১ আগস্ট বাংলাদেশে পৌঁছে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সাকিব আল হাসানদের প্রস্তুতি ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন শ্রীরাম। সেদিন থেকেই সংবাদমাধ্যম তাঁর পেছনে ছুটলেও মুখ খোলেননি। অবশেষে আজ দুবাইয়ে প্রথমবারের মতো সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই সহকারী কোচ।

এশিয়া কাপের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার বিমানবন্দরে নতুন টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম (বাঁয়ে), স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ (মাঝে) ও ব্যাটিং কোচ জেমিস সিডন্স

বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আসলে তাঁর কাজটা কেমন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রীরাম বললেন, ‘খুবই সহজ ব্যাপারটা। আমি আমার ভূমিকা সম্পর্কে পরিষ্কার। আমার ভূমিকাটা হলো রিসোর্স একত্র করা। আমাদের খুব ভালো কয়েকজন স্কিল কোচ আছেন। তারা যা করেন, তার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আমার কাজ মূলত অধিনায়ক, টিম ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করা, এবং স্কিল কোচদের নিয়ে—তিনটি ভাগকে একত্রে আনা।’

এটা আসলে তারা কী ভালো করতে পারেনি, সেটি দেখার বিষয় নয়, কী করেছে— সেটি দেখার বিষয়। এর মাধ্যমে সেরাটা বের করে আনা। আমার নজর থাকবে স্বল্প সময়ে তাদের ওইসব শক্তিমত্তার ওপর নির্ভর করা, সেগুলো বাড়ানো। যেগুলো ভালো করিনি, সে সব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে, যদি আমরা যা ভালো করছি, সেগুলো করতে থাকি।
শ্রীধরন শ্রীরাম

সেটি কোন ভূমিকায় থেকে করবেন, সেটিও আলাদা করে বললেন, ‘অস্ট্রেলিয়া এবং আইপিএলে কাজ করে (পাওয়া) আমার টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কৌশল একত্র করা—যাতে রিসোর্স ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারি। আমি বলছি না যে আমি দলকে নেতৃত্ব দেব, আমি শুধু সহযোগিতা করছি।’

শ্রীরাম এমন সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন, যখন টি-টোয়েন্টি সংস্করণে দলটি ধুঁকছে। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজও হেরেছে । তবে দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্টের কথা শুনে মনে হবে, তিনি সে সব মাথাতেই রাখতে চান না, ‘আমি খোলা চোখ নিয়ে এসেছি। আমার পিছুটান নেই। আপনি যেটি (টি-টোয়েন্টিতে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভালো না) বলছেন, সেটি আসলে আমার কাছে ‘আজই শুনলাম’ ধরনের ব্যাপার। আমি ওভাবে দেখছি না। খোলা চোখে দেখছি, আমার আইডিয়া, নতুন জীবনীশক্তি আনতে চাই। দলকে একত্র করতে চাই, নতুন শুরু করতে চাই।’

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে শ্রীরামের সাক্ষাৎ

এ ক্ষেত্রে অধিনায়ক সাকিবকে বড় একটা শক্তি মনে করেন শ্রীরাম, ‘সাকিবকে অধিনায়ক করা দারুণ একটা কাজ বলে মনে করি। এর আগে প্রতিপক্ষ হিসেবে তাকে সম্মান করেছি। এবারই প্রথম আসলে সেভাবে মেশার সুযোগ হয়েছে। টি-টোয়েন্টি নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি দেখাটা খুবই হৃদয়গ্রাহী একটা ব্যাপার। সে খুবই আধুনিক। আমাদের ভাবনাও মিলে যায়। তরুণদের নিয়ে তার ভাবনা দুর্দান্ত। তরুণেরা তাকে অনুসরণ করে, সম্মান করে। তার কাছে সহজেই যাওয়া যায়। এটা অনন্য একটা মিশ্রণ—যেখানে সম্মানও থাকে, চাইলেই তার সঙ্গে মেশা যায়। অধিনায়ক এবং দলের এই সমন্বয়টা দারুণ। আমার মনে হয় এটি খুব ইতিবাচক।’

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে বরাবরই স্কিলের ব্যাপারটি সামনে আসে। ব্যাটসম্যানরা পাওয়ার হিটিং পারেন না, এ আলোচনাও পুরোনো। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের ক্রিকেটের কথা বলা হলেও সেটি আসলে মাঠে অনূদিত হতে দেখা যায়নি সেভাবে। শ্রীরামও নতুন শুরুর কথা বলেছেন এরই মধ্যে। বলছেন নিজেদের শক্তিমত্তার ওপর ভরসা রাখার পুরোনো কথাটাও, ‘পরিসংখ্যান দেখেছি। উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে—প্রথম ৩ উইকেট নেওয়ার গড়ের ক্ষেত্রে বিশ্বে আমরা অন্যতম সেরা, প্রথম ৫ উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা বিশ্বে অন্যতম সেরা। বাংলাদেশ অনেক কিছুই ঠিকঠাক করেছে এর আগে। এটা আসলে তারা কী ভালো করতে পারেনি, সেটি দেখার বিষয় নয়, কী করেছে— সেটি দেখার বিষয়। এর মাধ্যমে সেরাটা বের করে আনা। আমার নজর থাকবে স্বল্প সময়ে তাদের ওইসব শক্তিমত্তার ওপর নির্ভর করা, সেগুলো বাড়ানো। যেগুলো ভালো করিনি, সে সব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে, যদি আমরা যা ভালো করছি, সেগুলো করতে থাকি।’

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পর আইপিএল, এবার বাংলাদেশ—শ্রীরামের যাত্রাটা বিচিত্রই। ভারতের হয়ে ৮টি ওয়ানডে খেলা সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার বলছেন, তাঁর অতীত অভিজ্ঞতা কাজে দেবে বাংলাদেশের হয়ে কাজ করতে, ‘ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে কাজ করা—আইপিএলে ভারতীয় ছেলেদের সঙ্গে কাজ করা, অজি সেট আপে কাজ করা—পূর্ব-পশ্চিমের একটা ভালো মিশ্রণ আছে (আমার)। বাংলাদেশে এসে আমি আসলে এদের বেড়ে ওঠা, খেলার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বুঝি। একই সঙ্গে পেশাদারত্ব, প্রত্যাশার ব্যাপারটিও নিয়ে আসতে পারি। আমি মুখিয়ে আছি।’