ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টানা ১০ ওয়ানডেতে হারানো, তৃতীয়বারের মতো সিরিজে ধবলধোলাই, নিজে সিরিজসেরা হওয়া। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে কোনো ম্যাচ না জেতার পরও এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো। তবে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল এ জয়গুলো নিয়ে ঠিক রোমাঞ্চিত নন, রাখতে চান না খুব উঁচু জায়গাতেও।
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে স্পিনাররা সহায়তা পেয়েছেন বেশ ভালোই। বাংলাদেশও একাদশ সাজিয়েছে সেভাবেই। প্রতি ম্যাচেই একজন করে পেসার কমিয়ে খেলানো হয়েছে বাড়তি একজন স্পিনার, শেষ ম্যাচে তো ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো এক পেসার নিয়েই নামে বাংলাদেশ। তামিম খুব বেশি রোমাঞ্চিত নন এ কারণেই, ‘আমি এ জয়গুলোকে খুব উঁচুতে রাখতে চাই না। এটা নিয়ে খুব বেশি রোমাঞ্চিত না। কারণ স্পিনারদের জন্য খুব বেশি সহায়তা ছিল। এ কারণে দুনিয়া জিতে ফেলেছি, (ব্যাপারটা অমন) না। ভালো উইকেটে খেললে আমাদের আরও ভালো খেলতে হবে।’
শেষ ওয়ানডের আগে তামিম ও প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বেঞ্চের শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে দেখার কথা বললেও ‘ডেড রাবার’-এ বাংলাদেশ নেমেছে নিজেদের পূর্ণ শক্তিমত্তা নিয়েই। কেন এ ম্যাচেও এমন সিদ্ধান্ত, ম্যাচশেষের সংবাদ সম্মেলনে তামিম ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, ‘আমি চেয়েছিলাম। তবে ম্যানেজমেন্ট বলেছে পুরোশক্তির দল চায়। আমরা জানতাম একই উইকেটে খেলা, ফলে একটাই পরিবর্তন আসতে পারে। একজন পেসারের জায়গায় তাইজুলকে খেলানো, আমিও এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছি। কারণ কথা ছিল দল যখন ভালো করছে, তখন সেভাবেই শেষ করা উচিত।’
তবে সামনে এগোতে হলে নিয়মিত একাদশের বাইরের খেলোয়াড়দের সামর্থ্য বাজিয়ে দেখা ছাড়া উপায় নেই, তামিম মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটি, ‘সামনে যেতে হলে বেঞ্চের শক্তি দেখতেই হবে। নাহলে কীভাবে বুঝতাম তাইজুলের এই গুণ আছে, বা মোসাদ্দেকের বোলিংয়ের এই সামর্থ্য আছে। কোনো না কোনো সময় দেখতেই হবে। হয়তো একসঙ্গে পাঁচজনকে করবেন না, এক-দুই জন করে করতে হবে। ওয়ানডেতে বিশ্বের বড় দলগুলো কিন্তু এভাবেই করে, সিরিজ জিতলে খেলোয়াড় বদলায়। আমাদের আরেকটু সাহস দেখিয়ে করতে হবে। আবার আমরা এর আগে করিওনি। ফলে একটা দ্বিধা থেকে যায় সবসময়। আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতে আপনারা দেখতে পাবেন।’
শেষ ম্যাচে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গড়েছে সিরিজে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোর। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন এ ম্যাচেই। তামিম বলছেন, জয়ের ব্যবধান আরও বড় হলে ভালো লাগত তাঁর, ‘ উন্নতির শেষ নেই। উইকেট কঠিন ছিল, খেলার অযোগ্য ছিল না। ৭ বা ৮ উইকেটে যদি জিততাম, তাহলে উন্নতি হয়েছে বলতাম। কারণ একটা সময় নিশ্চিত ছিল না ম্যাচ কোনদিকে যাচ্ছে। এসব ছোটখাট বিষয়ে উন্নতি করতে হবে। আরও ভালো দল, ভালো উইকেটে খেললে কী হবে বলা তো যায় না। বোলিং ব্যাটিং,সবখানেই উন্নতি লাগবে। জিতছি বলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়নি। ধীরে ধীরে সমাধান করছি। জিততে শুরু করলে মানুষ দূর্বলতা লুকিয়ে ফেলে। আমি সেভাবে ভাবি না। চেষ্টা করছি, আশা করি সামনে ভালো হবে।’
ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে আগামী বছরের বিশ্বকাপ লক্ষ্য করেই এগোচ্ছেন, সেটিও জানিয়েছেন তামিম, ‘২০২৩ বিশ্বকাপই লক্ষ্য। সে প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছি। কিন্তু আমি খুব বেশিদূর তাকাতে চাই না। কারণ কী হয় না হয়, কখনোই জানি না। কে চোটে থাকে, কে থাকে না থাকে। (তবে) আমরা ধারণা পাচ্ছি।’
তামিম যেমন নিশ্চিতভাবেই থাকছেন না এ বছর হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এ সংবাদ সম্মেলন শেষ করার কিছুক্ষণ পরই ফেসবুকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সেটি খুব বিস্ময়ের কিছু না হলেও এখন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুই সংস্করণের ক্রিকেটার হয়ে গেলেন তামিম। স্বাভাবিকভাবেই তিনি চাইবেন, ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে সামনে আরও রোমাঞ্চিত হওয়ার উপলক্ষ্য পেতে!