ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে এরিক টেন হাগের সম্পর্ক কেমন ছিল, তা তো সবারই জানা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডাচ কোচের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ নেই—কাতার বিশ্বকাপ শুরুর কদিন আগে সাংবাদিক পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়ে দেন পর্তুগিজ মহাতারকা।
মূলত টেন হাগের দলে ব্রাত্য হয়ে পড়াতেই ওল্ড ট্রাফোর্ড ছেড়েছেন রোনালদো। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে সম্ভাব্য সব শিরোপা জিতে পাড়ি জমিয়েছেন এশিয়ায়। বছরে ২ হাজার ২০৭ কোটি টাকার ঈর্ষণীয় বেতনে নাম লিখিয়েছেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে।
তা রোনালদো যেহেতু ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ইউনাইটেড ছেড়ে চলেই গেছেন, তাহলে ক্লাবের বেতনকাঠামোয় এখনো ‘রোনালদো-নীতি’ অনুসরণ করার কোনো মানেই হয় না। এমন যুক্তি তুলে ধরে নিজের ও দলের খেলোয়াড়দের বেতন সংস্কারের দাবি করেছেন কোচ টেন হাগ।
২০২১ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রত্যাবর্তনের পর সপ্তাহে ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন রোনালদো। সেই তুলনায় অন্যদের বেতন ছিল অনেক কম। রোনালদো বড় তারকা হওয়ার কারণেই তাঁর জন্য আলাদা নীতি গড়ে তুলেছিল ক্লাবের মালিকপক্ষ গ্লেজার পরিবার। পারফরম্যান্সের গ্রাফ ক্রমে নিম্নমুখী হয়ে গেলেও মোটা অঙ্কের বেতন নিতেন ৩৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
অনেক খেলোয়াড়ই রোনালদোর চেয়ে ভালো খেললেও তাঁদের বেতন কখনো বাড়ানো হয়নি। কোচ টেন হাগ এখন এই নীতির বদল চান। যত বড় তারকাই হোক না কেন, সপ্তাহে সর্বোচ্চ আড়াই কোটি টাকা বেতন দেওয়ার দাবি করেছেন তিনি। এটা বাস্তবায়ন হলে খেলোয়াড়দের মধ্যকার বেতনবৈষম্য ও দলে ঈর্ষার সংস্কৃতি অনেকাংশেই কমে যাবে বলে মত তাঁর।
টেনের হাগের দাবিকে যৌক্তিক মেনে নিয়ে একমত পোষণ করেছেন ক্লাবের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড আরনল্ড ও ফুটবল পরিচালক জন মুরটাফ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ আর্থিক বিষয় নিয়ে ড্রেসিংরুমে অশান্ত পরিবেশ, খেলোয়াড়দের অসন্তুষ্টি বা কারও মধ্যকার সম্পর্কে ফাটল দেখতে চায় না।
‘রোনালদো-নীতি’ থেকে বেরিয়ে এসে নতুন বেতনকাঠামো তৈরিতে মত দিয়েছেন অনেক ইউনাইটেড সমর্থক। টুইটারে একজন লিখেছেন, ‘যে খেলোয়াড় ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে ভালো খেলবেন, তাঁর বেতন সর্বোচ্চ হওয়া উচিত।’
তবে টেন হাগ ও সমর্থকদের চাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্যারি নেভিল। ইউনাইটেডের হয়ে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতা সাবেক রাইটব্যাক বলেছেন, ‘আসলেই কি তেমনটা (বেতনকাঠামো বদলানো) হওয়া উচিত? আর্লিং হলান্ড ও অন্য বড় তারকারা আসার আগে ম্যানচেস্টার সিটিরও একই নীতি ছিল। পরে বদল আনা আনা হয়েছে। বেতন বৃদ্ধি একটি সহজাত নীতি। জুড বেলিংহাম, ডেলকান রাইসদের চাইলেই কি কম বেতনে আনতে পারবেন?’
গ্লেজার পরিবার ক্লাব বিক্রি করে দিতে পারে—এমন গুঞ্জন অনেক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে। ইউনাইটেডেই পুরো খেলোয়াড়ি জীবন কাটিয়ে দেওয়া নেভিল মনে করেন, নতুন মালিকের জন্য নতুন বেতন-নীতি তৈরি করা আরও কঠিন হবে, ‘ক্লাব নতুন মালিকানার অধীন চলে যাওয়া যখন অনিবার্য, তখন নতুন বেতন-নীতি নিয়ে আলোচনা করার মানেই হয় না। কিলিয়ান এমবাপ্পেকেও কেনার পরিকল্পনা করতে পারেন নতুন মালিক। তখন রাইস-বেলিংহাম দুজনের সমপরিমাণ বেতন শুধু এমবাপ্পেকেই দিতে হবে।’
ইউনাইটেডে বর্তমানে সপ্তাহে সর্বোচ্চ আড়াই কোটি টাকা বেতন দেওয়া হয়। এই বেতনের তালিকায় আছেন অধিনায়ক হ্যারি ম্যাগুয়ার, রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে আসা ব্রাজিলিয়ান তারকা কাসেমিরো, ফরাসি ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারান ও পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ব্রুনো ফার্নান্দেজ।