একের পর এক ভুলে গোল খেতে খেতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যেন ভাঁড়দের দলে পরিণত হয়েছে, যার সর্বশেষটা দেখা গেল গত রাতে।
ঘরের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে কাল গালাতাসারাইয়ের কাছে ৩-২ ব্যবধানে হেরেছে ইউনাইটেড। ইংল্যান্ডের মাটিতে তুরস্কের ক্লাব গালাতাসারাইয়ের এটাই প্রথম জয়। গালাতাসারাইয়ে কাছে ধরাশায়ী হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়ার শঙ্কা জেগেছে এরিক টেন হাগের দলের।
ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ এ প্রতিযোগিতায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৪-৩ ব্যবধানে হেরেছিল ইউনাইটেড। টানা দুই হারে ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার তলানিতেই রয়ে গেছে ইউনাইটেড। প্রতিযোগিতায় এবারই প্রথম শুরুর দুই ম্যাচ হারল রেড ডেভিলরা।
চলতি মৌসুমে গোলের পর গোল খেয়ে বিব্রতকর রেকর্ডই গড়ে ফেলেছে ইউনাইটেড। এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১০ ম্যাচ খেলে তারা গোল খেয়েছে ১৮টি, যা এ শতাব্দীতে মৌসুমের প্রথম ১০ ম্যাচ পর সবচেয়ে বেশি। আর ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমের (২০ গোল খেয়েছিল) পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গ্রুপের আরেক দল কোপেনহেগেনের সঙ্গে পরের ম্যাচ হারলেই বিদায় একরকম নিশ্চিত হয়ে যাবে রেড ডেভিলদের।
বায়ার্নের কাছে হারের পর কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল ইউনাইটেড গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানাকে। ওই দিন তাঁর শিশুতোষ ভুলেই ম্যানচেস্টার ক্লাবটিকে হারতে হয়। ম্যাচ শেষে হারের দায় নিজের কাঁধেও নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে যে খুব একটা শিক্ষা তিনি নেননি, সেটা গত রাতেই বোঝা গেল। ইউনাইটেডের ড্যানিশ স্ট্রাইকার রাসমুস হইলুন্দের জোড়া গোল আর গালাতাসারাইয়ের উইলফ্রেড জাহা ও কেরেম আকতুরকোগলুর গোলে ম্যাচ তখন ২-২ সমতায়।
সে সময় বড় ভুল করেন ওনানা। সামনে গালাতাসারাইয়ের বদলি খেলোয়াড় দ্রিয়েস মের্তেন্স আছেন দেখেও বল পাস দিতে চান কাসেমিরোকে। কিন্তু কাসেমিরো কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন মের্তেন্স। তাঁর সামনে ওনানা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। ওনানা থাকলেও যে পজিশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাতে তাঁকে বোকা বানানো মের্তেন্সের জন্য কোনো ব্যাপারই ছিল না। বেচারা কাসেমিরো বাধ্য হয়ে তাই মের্তেন্সকে ফাউল করে বসেন।
সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। অনুমিতভাবেই কাসেমিরো দেখেন হলুদ কার্ড। কিন্তু এর আগেও একবার হলুদ কার্ড দেখায় ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারকে মাঠ ছাড়তে হয়।
গালাতাসারাইয়ের হয়ে পেনাল্টি নিতে আসেন মাউরো ইকার্দি। তবে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের বাঁ প্রান্তে নেওয়া শট যায় বাইরে দিয়ে। সে দফায় ইউনাইটেড পার পেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ওনানার ভুলে ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া ইউনাইটেডের দুর্বলতার সুযোগে এবার সদ্ব্যবহার করেন ইকার্দি। ফাঁকায় বল পেয়ে দারুণ চিপে ওনানাকে ফাঁকি দেন এই আর্জেন্টাইন। গালাসারাইকে এনে দেন উৎসবের উপলক্ষ।
বারবার ভুল করলেও ওনানার পাশে দাঁড়িয়েছেন ইউনাইটেড কোচ টেন হাগ। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমি ওনানাকে উৎসাহ দিয়ে যাব, ওকে সমর্থন করব। সে বড় মাপের গোলরক্ষক। বিশ্বসেরাদের একজন হতে পারে। আমরা এরই মধ্যে ওর দুর্দান্ত সামর্থ্য ও ব্যক্তিত্ব দেখেছি। আমি নিশ্চিত সে ঘুরে দাঁড়াবে।’
কালকের রাতটা শুধু ইউনাইটেডই নয়, ইংল্যান্ডের আরেক ক্লাব আর্সেনালও ভুলে যেতে চাইবে। আর্সেনালও যে কাল হেরে গেছে। গানারদের ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে ফরাসি ক্লাব লাস। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মৌসুমে এটাই মিকেল আরতেতার দলের প্রথম হার।