বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাহলে রাসেল ডমিঙ্গো অধ্যায় শেষই হয়ে গেল! বিসিবির সিদ্ধান্তে আকস্মিক কোনো রদবদল না এলে এখন শুধু তাঁর বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতাটাই বাকি। আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও তিন টি–টোয়েন্টির হোম সিরিজের আগে বা সিরিজের মধ্যেই নতুন কোচের নাম ঘোষণা করতে পারে বিসিবি।
কাল ধানমন্ডি ৪ নম্বর মাঠে বিজয় দিবস টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফাইনালে পুরস্কার বিতরণ করতে গিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও দিয়েছেন সেই আভাস। ডমিঙ্গোর পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও জাতীয় দল নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘আমরা একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। স্বল্পমেয়াদি নয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। তিন-চার বছরের পরিকল্পনা। এটার জন্য যদি পরিবর্তন দরকার হয়, তাহলে পরিবর্তন আসবে।’
নাজমুল হাসান স্পষ্টভাবে কিছু না বললেও বিসিবির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ভারত সিরিজের পর কালই দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরে যাওয়া ডমিঙ্গোকে আর না রাখার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে বোর্ড। জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে তিনি না পারছেন যথেষ্ট কর্তৃত্ব দেখাতে, না পারছেন খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করতে—এমন পর্যবেক্ষণ থেকেই ডমিঙ্গোকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
তা ছাড়া সিরিজ বা টুর্নামেন্ট না হলে শুধু অনুশীলনের জন্য তাঁর বাংলাদেশে থাকতে না চাওয়াও নাকি এর একটা কারণ। নতুন কোচের সঙ্গেও বিসিবির কথাবার্তা অনেকটা পাকা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সূত্র। তবে নতুন কোচ কে হচ্ছেন, সেটি নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। বাংলাদেশ দল ইংল্যান্ড সিরিজটা নতুন কোচের অধীনে খেলবে কি না, নিশ্চিত নয় সেটিও।
ইংল্যান্ড সিরিজে যে ডমিঙ্গোকে রাখা হবে না, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত বলতে গেলে হয়েই গেছে বলে জানিয়েছে বোর্ড সূত্র।
নোটিশের তিন মাস বিসিবি ডমিঙ্গোকে অন্য কোনো কাজে লাগাবে নাকি পুরোপুরিই দায়মুক্তি দিয়ে দেবে, তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ডমিঙ্গোর মতামত এবং আর্থিক বিষয়ে সমঝোতায় আসারও ব্যাপার আছে। নোটিশ না দিয়ে চাকুরিচ্যুত করলে চুক্তি অনুযায়ী তিন মাসের বেতন দিতে হবে তাঁকে। আয়কর বাদ দিয়ে ডমিঙ্গোর বর্তমান বেতন মাসে প্রায় ১৮ হাজার ডলার।
ইংল্যান্ড সিরিজের আগে নতুন কোচ যোগ না দিলে বিসিবির পরিকল্পনা আছে সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্টের দায়িত্ব পালন করা শ্রীধরন শ্রীরামকে দিয়ে সিরিজটি চালিয়ে নেওয়ার। সঙ্গে অন্য কোচরা তো থাকবেনই। শ্রীরামের শর্ত অনুযায়ী আইপিএলের সময়টুকু বাদ দিয়ে তাঁকে টি–টোয়েন্টি দলের কোচের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। সঙ্গে ইংল্যান্ড সিরিজে ওয়ানডে দলের কোচ থাকারও প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে এই ভারতীয়কে।
সিরিজের সূচি এখনো নিশ্চিত না হলেও ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ইংল্যান্ড দলের ঢাকায় আসার কথা। সিরিজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা মার্চ মাসের মধ্যেই। আর আইপিএল শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ১ এপ্রিল। কাজেই ইংল্যান্ড সিরিজের ওয়ানডে, টি–টোয়েন্টি দুই দলেরই দায়িত্ব নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় শ্রীরামের। তারপরও তিনি ওয়ানডে দলের দায়িত্ব নিতে না চাইলে জেমি সিডন্স–অ্যালান ডোনাল্ডদের দিয়েই কাজ চালানো হবে। অবশ্য এর মধ্যে নতুন কোচ এসে গেলে ওয়ানডে দলের দায়িত্ব বুঝে নিতে পারেন তিনিও।
শুধু ওয়ানডে ও টেস্ট দলের জন্য নতুন কোচই নয়, তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় দল ও নারী দলের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক করতে একজন পারফরম্যান্স ম্যানেজার নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।