অসুস্থ ছিলেন অনেক দিন ধরেই। যাওয়া-আসা চলছিল হাসপাতালেও। কাতারে বিশ্বকাপ চলার সময় আরেকবার হাসপাতাল গমনের খবরে তাই খুব বেশি চমকে ওঠেননি কেউ। তবে গত ২৯ নভেম্বর সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আর বের হওয়া হয়নি পেলের। ২৯ ডিসেম্বর হাসপাতালের বিছানায়ই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন ফুটবলের রাজা। তিন বিশ্বকাপজয়ী ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার বিদায় নেন বিশ্বকাপের বছরে।
পেলের জীবনাবসানের বছরে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন হারিয়েছে আরও কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়কে। এর মধ্যে গত ৪ মার্চ ক্রিকেটাঙ্গন স্তব্ধ হয়ে যায় শেন ওয়ার্নের মৃত্যুতে। মাঠ ও মাঠের বাইরের নৈপুণ্য ও বিতর্কের কারণে অনেকে তাঁকে ‘ক্রিকেটের ম্যারাডোনা’ বলতেন।
অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি এই লেগ স্পিনার ৫২ বছর বয়সে থাইল্যান্ডের কোহ সামুই দ্বীপে মৃত্যুবরণ করেন। এর কয়েক ঘণ্টা আগে অস্ট্রেলিয়া হারায় দেশটির ইতিহাসের আরেক নক্ষত্র রডনি মার্শকে। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই উইকেটরক্ষক হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এক সপ্তাহের মাথায় সেখানেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। আচমকা দুই সাবেক ক্রিকেটারের মৃত্যু-শোকের রেশ থাকতেই ১৪ মে মারা যান অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬-এ থেমে যায় সাবেক এই অলরাউন্ডারের জীবন।
২০২২ সালে জাতীয় ক্রিকেটার হারিয়েছে বাংলাদেশও। দীর্ঘ দিন মস্তিষ্কের টিউমারের সঙ্গে লড়াই করে গত ১৯ এপ্রিল মারা যান বাংলাদেশের হয়ে ৫টি ওয়ানডে খেলা মোশাররফ হোসেন রুবেল। একই দিন রুবেলের কয়েক ঘণ্টা আগে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন বাংলাদেশ দলের প্রথম ওয়ানডের অন্যতম পেসার সামিউর রহমান সামি।
বছরের শুরুতে দেশের ফুটবলাঙ্গন হারায় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শহীদ উদ্দিন সেলিমকে। ১৯৯১ সাফ গেমসে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া সেলিম ক্যানসারে ভুগে ৫ জানুয়ারি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। ৩১ জানুয়ারি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারজয়ী সাবেক জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন নাজিয়া আক্তার যুথী।
আরেক নারী ক্রীড়াবিদ জুলেখা আক্তার মারা যান ১৭ আগস্ট। আশি-নব্বই দশকের টেবিল টেনিস তারকা জুলেখা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। সেখানেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে ২০২২ সাল দেখেছে একাধিক ক্রিকেট আম্পায়ারের বিদায়। ৯ আগস্ট ৭৩ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান দক্ষিণ আফ্রিকান আম্পায়ার রুডি কোয়ের্টজেন। ১২৮ টেস্ট ও ২৫০ ওয়ানডে ম্যাচ পরিচালনা করা কোয়ের্টজেন ২০১০ সালে অবসর নেওয়ার সময় ছিলেন সবচেয়ে বেশি ম্যাচ পরিচালনা করা আম্পায়ার।
পরের মাসে পৃথিবী ত্যাগ করেন পাকিস্তানের সাবেক আম্পায়ার আসাদ রউফ। ২০০৬ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত আইসিসির এলিট প্যানেলে থাকা এই আম্পায়ার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর মারা যান। আম্পায়ার ও ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার জেরেমি লয়েডসের প্রয়াণ হয় ২১ নভেম্বর। ওই মাসের প্রথম দিন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন অ্যালান থমসন। ছোট্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মাত্র একটিই উইকেট নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এই পেসার। তবে ওই এক উইকেটই ছিল ইতিহাস গড়া—ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম উইকেট।
পেলের আগে ফুটবলাঙ্গনে আলোড়ন তোলে উয়ে সিলারের মৃত্যু। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে জার্মানিকে নেতৃত্ব দেওয়া এই স্ট্রাইকারকে বিবেচনা করা হয় জার্মান ফুটবলের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে। পুরো ক্লাব–ক্যারিয়ার হামবুর্গে কাটিয়ে দেওয়া সিলার ২১ জুলাই ৮৫ বছর বয়সে মারা যান।
স্পেন ও রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি ফ্রান্সেসকো হেন্তো শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন ১৮ জানুয়ারি। ৬ বার ইউরোপিয়ান কাপ ও ১২ বার লা লিগা জেতা হেন্তো ২০১৪ সালে আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর মৃত্যুর পর রিয়ালের অনারারি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিটি মৃত্যুই বেদনার, একেকটি স্বর্ণালি জীবনের অবসানের। তবে বছরের শেষ দিকে পেলের মৃত্যু নাড়া দিয়ে গেছে ফুটবল আর ক্রীড়াঙ্গন ছাপিয়ে গোটা বিশ্বকেই।