শতকের পর সিকান্দার রাজা। পরপর দুই ম্যাচে শতকের দেখা পেলেন তিনি।
শতকের পর সিকান্দার রাজা। পরপর দুই ম্যাচে শতকের দেখা পেলেন তিনি।

তামিম বলছেন, ‘ওদের চারটি, আমাদের একটিও নেই’

সিকান্দার রাজার গলাটা যেন ধরে আসছিল, তবে সেটি কষ্টে নয়, আনন্দে। ৯ বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়, প্রথম দুই ম্যাচেই এভাবে পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর নেতৃত্ব দেওয়া। রাজা তো আবেগে ভাসবেনই! আর তামিম ইকবালের কণ্ঠে যা ফুটে উঠছিল, সেটিকে অসহায়ত্বই বলা যায়। ম্যাচ শেষের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ফুটে উঠল এমন বৈপরীত্য। সেখানে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হারের কারণ হিসেবেও বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম বললেন এক বৈপরীত্যের কথাই।

যেখানে এক মেরুতে জিম্বাবুয়ে—দুই ম্যাচে চারটি শতক নিয়ে। অন্যদিকে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের সে সংখ্যাটা শূন্য। দুই ম্যাচে রাজা করেছেন দুটি শতক, অংশ ছিল দুর্দান্ত দুটি জুটির। প্রথম ম্যাচে শতক করা ইনোসেন্ট কাইয়ার পর আজ রেজিস চাকাভার সঙ্গে রাজা গড়েছেন দুটি রেকর্ড জুটি। আগের দিন কাইয়া পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। আজ পেলেন চাকাভা। অথচ প্রথম ম্যাচে চারজনের পর আজ আরও দুজন অর্ধশতক পেলেও শতক পর্যন্ত যেতে পারেননি কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান।

দুই ম্যাচের পর বোলিংয়ে নেমে শুরুতেই জিম্বাবুয়েকে চেপে ধরার পর সে চাপ আর ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। তামিম অবশ্য পার্থক্য দেখছেন দুই দলের ব্যাটিংয়েই, ‘আমার মনে হয় পার্থক্যটা এখানে—ওদের চারটি সেঞ্চুরি, আমাদের নেই। এটাই বড় পার্থক্য। ভালো একটা স্কোর গড়েছিলাম (আজ)। শুরুটা ভালো হয়েছিল, কিন্তু চালিয়ে যেতে পারেনি। ছোটখাটো একটা ধসের পর মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ ভালো করেছিল। ২৯১ রানও ভালো স্কোরই ছিল, আমার বোলিংয়ে লড়াই করার মতো কিছু পেয়েছিলাম।’

জয় নিশ্চিত করে ফেরার পর ল্যান্স ক্লুজনারের অভিনন্দনে সিক্ত রাজা, পাশে দাঁড়িয়ে প্রধান কোচ ডেভ হটন

ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও, ‘জিম্বাবুয়েকে কৃতিত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে রাজাকে। দুটি দারুণ ইনিংস চাপের মুখে। গতকাল হয়তো ২০ রান কম করেছি। আজও ২০ রানের মতো কম করেছি। আর বিকালে এমন স্কোর ডিফেন্ড করা খুবই কঠিন। তবে কোনো অজুহাত দিতে চাই না।’

আজও খেলা হয়েছে আগের দিনের উইকেটেই। ব্যবহৃত উইকেট হলেও ব্যাটিংয়ের জন্য খুব একটা কঠিন ছিল না সেটি। আজ শুরু থেকেই শট খেলা শুরু করেন তামিমরা। সে কারণেই কি না, একদিকের ছোট বাউন্ডারি উপেক্ষা করে বড় বাউন্ডারি তাক করেও বড় শট খেলার ‘ঝুঁকি’ নিয়েছেন তাঁরা। তামিমের পর মুশফিকুর রহিম—দুজনই আউট হয়েছেন ওই দিকের বাউন্ডারি পার করতে গিয়ে। ধরা পড়েছেন সীমানার বেশ ভেতরেই।

ক্যারিয়ারে প্রথম শতক পেয়েছেন রেজিস চাকাভা

তামিম অবশ্য বলছেন, আজ স্পিনারদের বিপক্ষে খেলাটা ততটা সহজ ছিল না, ‘উইকেট শুরুতে ভালো ছিল। তবে প্রথম ম্যাচের মতো স্পিনারদের বিপক্ষে অতটা সহজ ছিল না। তবে সব কৃতিত্ব আসলে জিম্বাবুয়ের। এ সিরিজে ওরাই আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে। তাদের কৃতিত্ব দিতেই হবে।’

টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে সিরিজেও হার—জিম্বাবুয়ের এ সফরে বিস্মৃত অভিজ্ঞতাই ফিরে আসছে বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টিতে তবুও শেষ ম্যাচটি ছিল সিরিজ নির্ধারণী। তবে ওয়ানডেতে প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজ হারার পর, তার ওপর এ সিরিজ বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ না হওয়াতে শেষ ম্যাচটি এখন নিয়মরক্ষার ‘ডেড রাবার’। তামিম অবশ্য এখনো ‘ভালো’ ক্রিকেট খেলার আশা ছাড়ছেন না, ‘আমাদের আসলে আরও ভালো খেলতে হবে। সেরাটা খেলতে হবে। এখন পর্যন্ত সেরাটা খেলিনি। এ কারণেই এ পরিস্থিতিতে পড়েছি আমরা।’

আর ডমিঙ্গো ভুল দেখছেন বোলিংয়েও, ‘দুটি ম্যাচেই ৬০/৩, ৪০/৪ ছিল। ছেলেরা চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি। বেশি আলগা বল করে ফেলেছে, ভুল ফিল্ডিংয়ে বল করেছে। ভুল অপশন বেছে নিয়েছে। তারা চেষ্টা করছে অনেক, তবে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারছে না। এটিই সবচেয়ে হতাশাজনক। ভালো দল আপনাকে শাস্তি দেবেই।’

এ সিরিজ হারলেও ওয়ানডে দলকে নিয়ে বড় সমালোচনা করতে চান না ডমিঙ্গো। বরং এটিকে দেখছেন শিক্ষা হিসেবেই, ‘গত দুই দিনের পারফরম্যান্সে ওয়ানডে দলকে সমালোচনা করা ঠিক হবে। তবে অনেক কাজ করার বাকি। তারা ৪টি শতক করেছে, আমরা একটিও করিনি। কোচিং স্টাফের সদস্য এবং দলের সবাই বড় শিক্ষা পেয়েছে। বিশ্বকাপ আসছে। ভাগ্যক্রমে এসব ম্যাচে পয়েন্ট নেই।’