বিগ ব্যাশ নাকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের নতুন টি-টোয়েন্টি লিগ—ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে সংকটেই পড়ে গিয়েছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্নারের সঙ্গে দর-কষাকষিতে সফল হয়েছে তারা। তবে ভারতের বিনিয়োগে শুরু হতে যাওয়া আরব আমিরাতের লিগের উত্তাপ কোনো না কোনোভাবে ঠিকই টের পাচ্ছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। সর্বশেষ বিতর্ক শুরু হয়েছে বিগ ব্যাশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ক্রিস লিনকে নিয়ে।
গতকাল প্রথম দফা ৫৪ জন খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণা করেছে আরব আমিরাতের নতুন লিগ ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি (আইএল)। সেখানে নেই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের কোনো খেলোয়াড়ের নাম। প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশে হওয়ার কথা আছে বিপিএল। আর সাধারণত ভারতের কোনো ক্রিকেটারকে বাইরের লিগে খেলার অনুমতি দেয় না বিসিসিআই। তবে আরব আমিরাতের এ লিগে তাদের বিনিয়োগের কারণে ব্যতিক্রমও ঘটতে পারে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড অবশ্য আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া মৌসুমের কারণে তাদের কোনো ক্রিকেটারকে অনাপত্তিপত্র দেবে না বলে জানা গেছে।
আরব আমিরাতের এ লিগ নিয়ে বেশ কোণঠাসা অবস্থায় আছে অস্ট্রেলিয়া। গতকাল ঘোষিত তালিকায় ওয়ার্নারের নাম না থাকলেও আছেন লিন। তবে তাঁকে এখনো অনাপত্তিপত্র দেয়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। তাদের এক মুখপাত্রের কথা অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া মৌসুম ‘রক্ষা’ করার দিকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।
গত মৌসুমের পর ব্রিসবেন হিট ছেড়ে দিয়েছে লিনকে। এখনো নতুন কোনো দলের সঙ্গে চুক্তি হয়নি এ ব্যাটসম্যানের, যদিও অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। প্রায় কাছাকাছি সময়ে হতে যাওয়া বিগ ব্যাশ ও ইন্টারন্যাশনাল আইএলের মধ্য থেকে লিন শেষ পর্যন্ত পরেরটিকে বেছে নিলে আরেকটি ধাক্কা খাবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
গতকাল আরব আমিরাতের লিগটি প্রথম দফা খেলোয়াড়ের তালিকা প্রকাশ করার পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এক মুখপাত্র আজ বলেছেন, ‘আসছে মৌসুমে বিদেশের কোনো লিগে খেলার জন্য কোনো খেলোয়াড়ের কাছ থেকেই অনাপত্তিপত্রের জন্য আবেদন পায়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।’
বোর্ডের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে না থাকলেও আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশের কোনো লিগে খেলতে হলে সে দেশের বোর্ড থেকে অনাপত্তিপত্র লাগে। অবশ্য ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওই মুখপাত্র বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের ঘরোয়া গ্রীষ্ম ও সব মিলিয়ে এই খেলার স্বার্থ রক্ষার দিকেই প্রাধান্য দেওয়ার নীতি অটুট আছে আমাদের। ফলে, অনাপত্তিপত্র শুধু অস্ট্রেলীয় মৌসুম শেষ হওয়ার পরই দেওয়া হয়ে থাকে।’
নিজেদের খেলোয়াড়দের এভাবে আটকানোর একটা উপায় থাকলেও বিদেশি ক্রিকেটার পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধাক্কাই খেয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। অতীতে বিগ ব্যাশে খেলা আন্দ্রে রাসেল, মঈন আলী, সুনীল নারাইন, কলিন মানরো, অ্যালেক্স হেলস, টম ব্যান্টন, সন্দীপ লামিচানে, কলিন ইনগ্রাম, জেমস ভিন্সের মতো ক্রিকেটাররা এরই মধ্যে বিগ ব্যাশ বাদ দিয়ে বেছে নিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওই লিগ। সেখানে প্রতি দলে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলো থেকে সর্বোচ্চ ১২ জন বিদেশি ক্রিকেটার নিতে পারবে দলগুলো। পাশাপাশি বিগ ব্যাশের সঙ্গে টাকার অঙ্কেও বড় পার্থক্য আছে—আরব আমিরাতের লিগে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পেতে পারেন খেলোয়াড়েরা, বিগ ব্যাশে সে অঙ্কটা প্রায় ২ লাখ ৩৭ হাজার মার্কিন ডলার।
শুধু আরব আমিরাতের ওই লিগ নয়, কাছাকাছি সময়ে শুরু হতে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন টি-টোয়েন্টি লিগও প্রভাব ফেলছে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেটে। আরব আমিরাতের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার লিগটিতেও আছে ভারতীয় বিনিয়োগ—ছয়টি দলই আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মালিকানাধীন। লিয়াম লিভিংস্টোন, জস বাটলার, জেসন হোল্ডারদের খেলার কথা আছে সেখানে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের লিগে ‘মার্কি’ খেলোয়াড়
মঈন আলী, আন্দ্রে রাসেল, ডেভিড ম্যালান, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, সুনীল নারাইন, এভিন লুইস, কলিন মানরো, ফ্যাবিয়েন অ্যালেন, স্যাম বিলিংস, টম কারান, অ্যালেক্স হেলস, দুষ্মন্ত চামিরা, শিমরন হেটমায়ার, আকিল হোসেন, ক্রিস জর্ডান, টম ব্যান্টন, সন্দিপ লামিচানে, ক্রিস লিন, রোভম্যান পাওয়েল, ভানুকা রাজাপক্ষে, মুজিব উর রহমান।