বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলেই বিশ্ব ফুটবলে নিজেকে চিনিয়েছিলেন জেডন সাঞ্চো। ভবিষ্যৎ তারকা হওয়ার সব সম্ভাবনাই যখন উঁকি দিচ্ছিল, তখনই সিদ্ধান্ত নেন ডর্টমুন্ড ছাড়ার। ২০২১ সালে ডর্টমুন্ড ছেড়ে যোগ দেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। তাতে স্বদেশি ক্লাবে খেলার ইচ্ছেটা পূরণ হয় সাঞ্চোর।
তবে তারকাখ্যাতি পাওয়ার আগেই বড় ক্লাবে নাম লেখানো অনেকের ক্ষেত্রেই হীতে বিপরীত হয়। সাঞ্চোর ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে। ইউনাইটেডে প্রায় ৩ বছর খেলেও মানিয়ে নিতে পারেননি। দলটির কোচ এরিক টেন হাগের কৌশলের সঙ্গে তো আরও নয়। একসময় টেন হাগের দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ডর্টমুন্ডই সাঞ্চোকে ‘উদ্ধারে’ এগিয়ে আসে। এবারের শীতকালীন দলবদলে জার্মান ক্লাবটি তাঁকে ইউনাইটেড থেকে ধারে নিয়ে আসে।
পুরোনো ঠিকানায় ফেরার পর নিজেকে নতুন করে গড়তে শুরু করেন সাঞ্চো। ডর্টমুন্ড কোচ এডিন টেরজিচ প্রায় সব ম্যাচেই তাঁকে শুরুর একাদশে রেখেছেন। সাঞ্চোও কয়েক ম্যাচে দারুণ খেলেন। তবে কাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে পিএসজির বিপক্ষে সাঞ্চো যা করেছেন, সেটাকে আস্থার প্রতিদান দেওয়ার চেয়েও বেশি কিছু বলতে হয়।
ফুটবলের পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অপ্টা’ জানিয়েছে, ঘরের মাঠ সিগনাল ইদুনা পার্কে কাল পিএসজির বিপক্ষে ডর্টমুন্ডের ১–০ গোলের জয়ে ১২টি ড্রিবল করেছেন সাঞ্চো, যা চ্যাম্পিয়নস লিগের এক ম্যাচে ইংল্যান্ডের কোনো খেলোয়াড়ের সবচেয়ে বেশি ড্রিবলের রেকর্ড।
শুধু কি তাই? সানচো কাল তাঁর ফুটবলশৈলী দেখিয়ে ১৬ বছর আগের লিওনেল মেসিকেও মনে করিয়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের সেমিফাইনালে কমপক্ষে ১২টি ড্রিবল দেখা গিয়েছিল। ১৬ বছর আগের সেই সেমিফাইনালে বার্সেলোনার মেসি ১৬টি ড্রিবল করেছিলেন সাঞ্চোর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেরই বিপক্ষে।
কালকের চোখধাঁধানো পারফরম্যান্সের পর ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘গোল ডট কম’ সানচোকে নিয়ে তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, জেডন সাঞ্চো ৩ বছর কোথায় ছিলেন?
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ টেন হাগ সাঞ্চোকে দল থেকে বাদ দেন। ২৪ বছর বয়সী ইংলিশ উইঙ্গার তখন দাবি করেন, তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে। তবে সাঞ্চোকে বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে তাঁর অপর্যাপ্ত অনুশীলনের কথা বলেছিলেন টেন হাগ। অথচ বরুসিয়া ডর্টমুন্ড কোচ এডিন টেরজিচ সানচোর অনুশীলনের ঘাটতির কথা কখনো তো বলেনইনি; উল্টো দাবি করেছেন সানচো কাল মাঠে যেভাবে পিএসজির খেলোয়াড়দের কাটিয়ে বল নিয়ে ছুটেছেন, সেটা অনুশীলনে প্রায়ই করেন।
সেমিফাইনালের মতো বড় মঞ্চে সাঞ্চো কাল কতটা ভালো খেলেছেন, সেই প্রশংসা করতে গিয়ে টেরজিচ বলেছেন, ‘সে ট্রেনিংয়ে এটা (প্রচুর ড্রিবল) প্রায়ই করে থাকে। তবে মূল ম্যাচে তা করে দেখানো হয়তো এত সহজ নয়, বিশেষ করে যখন আপনি কিছু সময়ের জন্য ছন্দে থাকবেন না। আমরা ওর দক্ষতা সম্পর্কে অবগত। আজ (কাল) আমরা আবার তা দেখলাম। জেডনের কাছ থেকে এ ধরনের পারফরম্যান্স আমাদের দরকার ছিল।’
তবে সাঞ্চো জানেন, এখনো অর্ধেক কাজ বাকি। তাই কোচের দরাজ প্রশংসাতেও গা ভাসাচ্ছেন না। ম্যাচ শেষে সিবিএস স্পোর্টসকে সাঞ্চো বলেছেন, ‘খেলা এখনো শেষ হয়নি। (আগামী সপ্তাহে) আমাদের প্যারিসে যেতে হবে এবং বাকি কাজ সারতে হবে।’
ইনস্টাগ্রামে কালকের ম্যাচের ড্রিবলের কয়েকটি ছবি পোস্ট করে সেখানে প্রায় একই কথা লিখেছেন সাঞ্চো, ‘আমরা পরের সপ্তাহে প্যারিসে যাব। আবার এমন কিছুর চেষ্টা করব।’ তাঁর সেই পোস্টে আলোর বিস্ফোরণ সম্বলিত একটি তারকার ইমোজি দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ফুটবলার মেম্ফিস ডিপাই। পরশু রাতে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে আরেক সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জোড়া গোল করা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র লিখেছেন, ‘দারুণ খেলোয়াড়।’
কাল পিএসজির রক্ষণভাগে ধারাবাহিকভাবে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছেন সাঞ্চো। গোলের বেশ কয়েকটি সুযোগও তৈরি করেছেন। পিএসজি অধিনায়ক মার্কিনিওসের অসাধারণ ডিফেন্ডিং আর ডর্টমুন্ড ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিং ঘাটতির কারণে সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। যেমন—ম্যাচের একদম শেষ ভাগে ইউলিয়ান ব্রান্টকে ঠিক পেনাল্টি স্পটে দুর্দান্ত পাস বাড়িয়েছিলেন সাঞ্চো। ব্রান্ট সুবর্ণ সুযোগটাও হাতছাড়া করেছেন।
অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য কাল সিগনাল ইদুনা পার্কে খেলা দেখতে যাওয়া ডর্টমুন্ডের ৮০ হাজার সমর্থককেও ধন্যবাদ দিয়েছেন সাঞ্চো, ‘দিনের পর দিন তারা (সমর্থকেরা) এভাবেই আমাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। যখন আমরা সমর্থকদের আওয়াজ শুনি, তখন আরও অনুপ্রাণিত হই।’
পরের সপ্তাহে আরও ভালো করার আশা সিবিএস স্পোর্টসকেও জানিয়েছেন সাঞ্চো, ‘আসলে আমি ম্যাচ ধরে ধরে চিন্তা করি। আশা করি এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারব।’
আগামী জুনেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে সাঞ্চোর। মৌসুম শেষে ডর্টমুন্ডের ধারের মেয়াদও ফুরাবে। সাঞ্চো কি আর ইউনাইটেডের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে চান? তাঁর উত্তর, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমি এখন শুধু বর্তমান নিয়েই ভাবছি।’