'চট্টগ্রামের ফুটবল দেখে দুঃখই লাগে'

আশীষ ভদ্র
আশীষ ভদ্র

চট্টগ্রাম থেকে উঠে এসে ১৯৭৮ থেকে ’৯০ পর্যন্ত দাপটে খেলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলে। সেই বন্দরনগরের দল চট্টগ্রাম আবাহনী দুই মৌসুম পর দেশের শীর্ষ লিগে ফিরছে। কিন্তু চট্টগ্রাম ফুটবলের বর্তমান অবস্থায় হতাশ আশীষ ভদ্র। কাল চট্টগ্রাম থেকে টেলিফোনে কথা বললেন সেটা নিয়েই

l দুই মৌসুম পর চট্টগ্রাম আবাহনী পেশাদার লিগে জায়গা পেল। চট্টগ্রাম ফুটবলের জন্য এটাকে কীভাবে দেখছেন?

আশীষ ভদ্র: ভালোই তো, চট্টগ্রাম আবাহনী দেশের শীর্ষ লিগে ফিরছে। তবে এটা চট্টগ্রামের ফুটবলের জন্য আশাবাদের কোনো ইঙ্গিত নয়।

l কেন এমন মনে করছেন?

আশীষ: অনেক কারণ। প্রথমত, এই একটা দলের পেশাদার লিগ খেলা দিয়ে চট্টগ্রামে ফুটবলচিত্র বদলাবে না। এখানে সমস্যা অনেক গভীর। আমাদের আসলে সত্তর-আশির দশকের সেই সোনালি সময়টা ফিরিয়ে আনা দরকার।

l সত্তর-আশির দশকের সঙ্গে বর্তমান সময়ের পার্থক্য কী দেখছেন?

আশীষ: তখন ক্লাব সংগঠকদের অনেক আন্তরিকতা দেখেছি। তাঁরা সময় দিতেন, নিঃস্বার্থ কাজ করতেন। এখন দু-একজন ব্যতিক্রম বাদে সংগঠকদের মধ্যে এসব নেই।

l আপনার সময়ে চট্টগ্রাম থেকে অনেক বড় বড় খেলোয়াড় উঠে এসেছেন। এখন এই দুরবস্থা দেখে ব্যথিত হন না?

আশীষ: অবশ্যই। আগে চট্টগ্রাম থেকে ২০-২৫ জন ফুটবলার প্রতিবছর ঢাকা লিগে খেলত। ৭-৮ জন নিয়মিত জাতীয় দলে ডাক পেত। এখন খেলোয়াড় গড়তে সংগঠকেরা তেমন ফলপ্রসূ কিছু করছেন না। বেশির ভাগই পকেট ক্লাব হয়ে গেছে, এভাবে আসলে সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

l আপনার উঠে আসার সময়ের সঙ্গে এখনকার কেমন পার্থক্য?

আশীষ: অনেক পার্থক্য। আমাদের সময়ে বদরপট্টি ক্লাব, আন্দরকিল্লা ক্লাব...কত ক্লাব ছিল। আমি যে ক্লাব থেকে উঠে এসেছি, সেই কেকেআরসি (কাজীর দেউড়ি খাজা রিক্রিয়েশন ক্লাব) ক্লাব চালাতেন ইকবাল ভাই, মানে নাফিস-তামিমদের বাবা। তখন স্পনসর ছিল না, এখন স্পনসর থাকলেও সাংগঠনিক দক্ষতার অভাব দেখছি।

l এখনকার সঙ্গে তুলনা করলে আপনাদের সময়ে চট্টগ্রামের ফুটবলটা আসলে কেমন ছিল?

আশীষ: আমাদের সময়ে এমনও দেখেছি, বেলা ১১টায় স্টেডিয়াম পূর্ণ। মাঠের বাইরেও হাজারো মানুষ। শেষ পর্যন্ত ম্যাচই বাতিল করতে হয়েছিল। এখন মাঠ অনেকটা ফাঁকা। চট্টগ্রামের এই ফুটবল দেখে এখন দুঃখই লাগে। আসলে বড় তিনটি দল সমঝোতার ম্যাচ খেললে দর্শক মুখ ফেরাবেই।

l চট্টগ্রাম আবাহনীতে আপনি খেলেছেন, বেশ কয়েক বছর অধিনায়কও ছিলেন। এখন তো দলটির সেই জৌলুশ নেই...

আশীষ: এর কারণ, নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক কমে গেছে। আমার উঠে আসার সিঁড়ি সেই কেকেআরসি দলটাই চট্টগ্রাম আবাহনী হয়েছে পরে। এখন শামসুল হক চৌধুরী এমপি সাহেব এটা চালান। সবই তাঁকে করতে হয়। স্থানীয় খেলোয়াড় না থাকায় বাইরের জেলার একদল ছেলে এসে খেলে যায়। এভাবে উন্নতি করা কঠিন।

l আপনি ফুটবলের সঙ্গে থাকলেন না কেন?

আশীষ: খেলা ছেড়ে আমি আবাহনীর ফুটবল সম্পাদক হই, রিজেন্সিসহ আরও কয়েকটা দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু এখনকার সিস্টেমটাই আমার পছন্দ হয়নি। তাই পুরোপুরি ব্যবসা-বাণিজ্যে মন দিয়েছি।