টেস্টের তৃতীয় দিনকে বলা হয় ‘মুভিং ডে’, ম্যাচ কোন দিকে যাচ্ছে সেটি নিয়ে বেশ স্পষ্ট একটা ধারণা পাওয়া যায় বলে। অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং-ই অবশ্য অনেকটাই ঠিক করে দিয়েছিল তা। তবে প্রথম ইনিংসে বোলারদের পারফরম্যান্স আশা জুগিয়েছিল, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা ‘কিছু’ করতে পারলে ভালো একটা লড়াইয়ে সম্ভাবনাও ছিল। তৃতীয় দিন সকালের ব্যাটিংয়ের পর অবশ্য বলতেই হচ্ছে—সে ‘লড়াই’য়ের সম্ভাবনা মিলিয়ে গেছে অনেকটাই।
১১২ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শুরু করা বাংলাদেশ সকালের সেশনেই হারিয়েছে ৪ উইকেট—নাজমুল হোসেন, মুমিনুল হক, লিটন দাসের পর ফিরেছেন মাহমুদুল হাসানও। কাইল মায়ার্সের পর ২টি উইকেট নিয়েছেন কেমার রোচ। ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ, ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবার ব্যাটিং করাতে এখনো ৪৭ রান করতে হবে তাদের। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের (৫) সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন থেকে মধ্যাহ্নবিরতিতে গেছেন নুরুল হাসান (২)।
অ্যান্টিগার উইকেট এখনো ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ নয়, ধারণা করা হয়েছিল আগেই। তবে দিনের তৃতীয় বলে কেমার রোচকে দারুণ ড্রাইভে চার মেরে শুরুটা ইতিবাচক করেন নাজমুল হোসেন। অন্যদিকে মাহমুদুল হাসান বেশ সতর্ক থাকলেও নাজমুলের শট খেলার ইচ্ছা স্পষ্টই ছিল। জেইডেন সিলসের বেশ বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে আরেকটি চার পান এরপর। তবে মায়ার্সের রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বাড়তি বাউন্সের বলে ভড়কে যান, ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে। দিনের নবম ওভারে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
মুমিনুল নড়বড়ে ছিলেন শুরু থেকেই। তাঁর প্রথম রানই আসে মায়ার্সের বলে ইনসাইড-এজ থেকে পাওয়া চারে। এরপর রান-আউট হতে নিয়েছিলেন, বেঁচে যান অল্পর জন্য। তবে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা মায়ার্সের ফুললেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বলের জন্য যেন প্রস্তুতই ছিলেন না, ব্যাট নিয়েই যেতে পারেননি বলের কাছে। এর আগে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে তাঁকে দারুণ সেট-আপে ফেলেন মায়ার্স। এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত রিভিউ করেছিলেন মুমিনুল, তবে উইকেটে হয়েছে আম্পায়ার্স কল।
লিটনের শুরুটা হয় কিছুটা মুমিনুলের মতোই। জোসেফের একটা বল ছেড়ে দেওয়ার ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপদে পড়েছিলেন প্রায়, শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের নেওয়ার রিভিউ তখন সফল হয়নি। এরপরই স্ট্রোক খেলা শুরু করেন তিনি, জোসেফকেই মারেন টানা দুই চার—পুল করার পর দারুণ টাইমিংয়ে মিড-অফ দিয়ে মারেন আরেকটি। জোসেফের পরের ওভারে কাট করে মারেন আরেকটি। তবে এমন উইকেটে টানা শট খেলাটা নিরাপদ নয় মোটেও, লিটন একটু পরই বুঝেছেন সেটি। জোসেফের জায়গায় বোলিংয়ে আসা কেমার রোচের বেশ বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে বিপদ ডেকে আনেন, ম্যাচে দ্বিতীয় বার উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি, এ বার ১৫ বলে ১৭ রান করে।
ইনিংসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে সবচেয়ে বড় আশা জুগিয়েছিলেন মাহমুদুল। আজ দিনের শুরুতে দুই-একবার বল ছাড়া নিয়ে একটু দ্বিধায় ভুগেছেন বলে মনে হলেও বেশ দৃঢ়ই ছিলেন, প্রথম ইনিংসের ভুল শুধরে উইকেটে টিকে ছিলেন বেশ খানিকটা সময়। কিন্তু লিটনের মতো শরীর থেকে দূরে শট খেলার দোষে দুষ্ট তিনিও। অফ স্টাম্পের বাইরের ব্যাক অব আ লেংথ বলে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি, ব্যাট চালিয়ে উইকেটকিপার জশুয়া ডা সিলভার হাতে ধরা পড়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। ১৫৩ বলে ৪২ রানের আশাজাগানিয়া ইনিংসের শেষটা হয়েছে তাই হতাশারই।