>ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো
আমার বাসা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। আমাদের ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের আবাসিক ভবনের সঙ্গেই। করোনার মধ্যে কিছুদিন আগ পর্যন্তও ক্লাব ভবনের বেজমেন্টে গোলরক্ষক কোচের (ক্লাবেই থাকেন বিদেশি গোলরক্ষক কোচ) সঙ্গে অনুশীলন করেছি। এমনকি মাঝে মাঝে মাঠেও গিয়েছি। এখন একেবারেই ক্লাবে যাওয়া বন্ধ।
দিনে সময় কাটে না বলে এখন ইচ্ছে করেই জীবনের রুটিন পরিবর্তন এনেছি। দেরিতে ঘুমিয়ে বেলা বারোটার দিকে উঠি। সকাল আর দুপুরের খাবার বাসায় সবাই এক সঙ্গে খাই। বিকেলে দেড় ঘণ্টার মতো অনুশীলন। ঘরের মধ্যে অনুশীলন করে ৬০ ভাগ ফিটনেস ঠিক রাখতে পারলেও আমি সন্তুষ্ট। স্ট্রেচিং, ফ্রি হ্যান্ড, কোর, বেলি, ফোম রােলার দিয়ে ম্যাসাজ। বাসায় কিছু ডাম্বেল ও মেডিসিন বল থাকায় ওয়েট ট্রেনিংও করতে পারছি। প্রতিদিন এক রকম অনুশীলন করি না। বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি শরীরের ওজনের দিকে। অনুশীলন করে পারি বা কম খেয়ে পারি, কোনো ভাবেই ওজন বাড়তে দেওয়া যাবে না। এটা আমার সঙ্গে আমার চ্যালেঞ্জ।
সন্ধ্যার পর থেকে সিনেমা দেখতে শুরু করি। সবচেয়ে বেশি সময় কাটছে প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের সিনেমা দেখে। তাঁর নাটক, সিনেমাগুলো পরিবারের সঙ্গে বসে দেখা যায়। আনন্দের সঙ্গে শিক্ষাও পাওয়া যায়। এটা লেখাই যাই যে, হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গেই এখন বেঁচে আছি। বাকি সময়ে দুই বাচ্চাকে সময় দেই, ঘরের টুকিটাকি কাজ করি।
২০০৯ সালে বিয়ে করলেও এই প্রথম পরিবারের সঙ্গে এত সময় থাকতে পারছি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি ও খেলার সুবাদে পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারিনি এতদিন। সেনাবাহিনী থেকে ২০১৩ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকেই পেশাদার ফুটবল খেলছি। দুই বছরের মধ্যে জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যাই। এরপর থেকে প্রায় সারা বছর ধরে তো ক্লাব আর জাতীয় দলের ক্যাম্পেই।
পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটানো বলতে যা বোঝায়, তা এখনই বেশি হচ্ছে। সাত বছরের ছেলে আর দুই বছরের মেয়েটা আমাকে কাছে পেয়ে খুব খুশি। ক্লাস টুতে পড়া ছেলেকে এক আধটু পড়াই, মেয়েকে দুই বেলা খাওয়াই। স্ত্রীকে ঘরের কাজে সাহায্য করি। ঘর ঝাড়ু দেই, ঘর মুছি। বাচ্চাদের সঙ্গে স্ত্রীও খুশি। করোনা নিয়ে দুশ্চিন্তাটুকু ছাড়া বলতে পারেন ভালোই আছি।
হ্যাঁ, করোনাভাইরাস নিয়ে বেশ আতঙ্কেই আছি। এই জন্যই বোধহয় অবসরের আনন্দটা পুরোপুরি আসছে না। কত মানুষ মারা যাচ্ছে, না খেয়ে আছে! এগুলো খুব কষ্ট দেয়। নিজের জন্য নয়, সন্তান আর বাবা-মায়ের জন্যই চিন্তাটা বেশি।
বাবা-মা মানিকগঞ্জে থাকেন। তাঁরা জানেন ঢাকায় করোনা সমস্যাটা বেশি। সব সময় দশ্চিন্তায় থাকেন আমাদের নিয়ে। ফোনে খোঁজ খবর নেন। এখন তো আমার মনে হচ্ছে কেন যে গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে চলে গেলাম না! সেখানে সবাই এক সঙ্গে থাকতে পারলেই ভালো হত মনে হয়।
এছাড়া খেলা কবে থেকে শুরু হবে, এটা নিয়েও অনিশ্চয়তা। যদি জানতাম অমুক মাস থেকে খেলা শুরু, তবুও একটা স্বস্তি থাকত। এখন সব কিছুই অনিশ্চয়তার মধ্যে।