তৃতীয় নয়ন

হিগুয়েইনের ফেরা, ফন পার্সির অফসাইড

গোলাম সারোয়ার টিপু
গোলাম সারোয়ার টিপু

প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির যোগসূত্র মেলাল আর্জেন্টিনা-হল্যান্ড। কোয়ার্টার ফাইনালে নিজ নিজ ম্যাচে এ দুদলই ছিল ফেবারিট। কাগজ-কলমের সঙ্গে মিলে গেল ম্যাচের ফলও। তবে হল্যান্ডকে পাড়ি দিতে হয়েছে লম্বা পথ। টাইব্রেকারে জয় তুলে তবেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল লুই ফন গালের দল। অন্যদিকে দ্রুত গোল পেয়ে যাওয়ায় নির্ভার একটা ম্যাচই খেলল আর্জেন্টিনা।
মেসিকে দেখে এদিন বেশ ভালো লাগল। উজ্জীবিত হয়েই খেলেছেন। কিছু করতে হলে তাঁকেই মাঠে উদ্যোগটা নিতে হবে, সেটা জানেন মেসি। এমনিতে তাঁর এক-দুটি সুন্দর মুহূর্তই ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিতে যথেষ্ট। সেটিই আবার দেখালেন বেলজিয়ামের বিপক্ষে। একটা সুন্দর টাচে বল বের করে দিলেন, তা থেকেই ম্যাচের একমাত্র গোল।
গোলদাতা হিগুয়েইন, যাঁকে এ ম্যাচ ফিরিয়ে আনল নতুন করে। ব্রাজিল দলে ফ্রেড যেমন কিছুই করতে পারছেন না, আর্জেন্টিনার হয়েও একই অবস্থা যাচ্ছিল হিগুয়েইনের। অবশেষে মাঠে নিজের উপস্থিতি বোঝাতে পারলেন নাপোলি স্ট্রাইকার, প্রচুর দৌড়েছেন এদিন। প্রতিপক্ষ রক্ষণকে ঝাঁকুনি দিয়ে গোলটাও করলেন দারুণ। চলন্ত বলের ওপর যেভাবে আড়াআড়ি পা চালালেন, দেখার মতো। সাধারণত এমন বল পেয়ে প্রথমে একটা টাচ নিতে চান খেলোয়াড়েরা। হিগুয়েইন সেটা করতে গেলে হয়তো গোল পেতেন না। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগালেন। সেটাই গড়ল ম্যাচের ভাগ্য।
গোল পেয়ে আর্জেন্টিনা শক্তি ক্ষয় করতে চায়নি। আর্জেন্টিনা জানত তাদের রক্ষণ বড় কোনো ভুল না করলে বেলজিয়াম ম্যাচে ফিরতে পারবে না। তাই রক্ষণটাকে আঁটসাঁট রাখার চেষ্টা করেছে। ম্যাচের আগে বলছিলাম, রক্ষণ সমস্যায় বিপাকে পড়তে পারে আর্জেন্টিনা। কিন্তু বেলজিয়াম এমন অবস্থা তৈরি করতে পারেনি যাতে জাবালেতোদের রক্ষণে ফাঁক বেরোয়।
দলটির বড় অস্ত্র হ্যাজার্ডকে তো একটা সময় তুলেই নিতে হলো। দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু করতে হয় মাঠে। সেটা করতে না পারা মানে হার।
হল্যান্ড সেমিফাইনালে উঠেছে। কোস্টারিকার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে জয়টা তাদের প্রাপ্যই। কিন্তু এত গোল নষ্ট, এত অফসাইড হল্যান্ডের সঙ্গে ঠিক যায় না। তবে তাদের ভাগ্য ভালো যে গোল নষ্ট করার মাশুল টাইব্রেকারে দিতে দিলেন না বদলি গোলকিপার টিম ক্রাল। তাঁকে ১২০ মিনিটে বদলি নামিয়ে একটা বড় ফাটকাই খেলেছেন কোচ লুই ফন গাল। ক্রালও আস্থার প্রতিদান দিলেন। এটাই একজন কোচের আসল ক্যারিশমা। ফন গাল খুবই চিন্তাশীল কোচ। ম্যাচের মধ্যেই ফর্মেশন বদলান, ট্যাকটিকস পাল্টে ম্যাচের চেহারা বদলে দেন। হল্যান্ডের এই জয়ে বাড়তি প্রশংসা পাবেন ফন গাল।
কোস্টারিকার পুরো ম্যাচে অফসাইড হয়েছে মাত্র দুবার আর হল্যান্ডের কিনা ১৩ বার! প্রতিপক্ষ অফসাইডের ফাঁদ পাতবে স্বাভাবিক। সেটিতে পা না দেওয়াই বিচক্ষণতা। ডাচ অধিনায়ক ফন পার্সি একাই পাঁচবার অফসাইড হলেন! তাঁর মতো একজন খেলোয়াড় অসতর্কতায় বারবার অফসাইড হলে দলের আক্রমণ নষ্ট হবেই। সেটাই হয়েছে। হল্যান্ড সেমিফাইনালে নিশ্চয়ই এই দিকটায় বিশেষ নজর রাখবে।