তৃতীয় নয়ন

হার না-মানা মানসিকতাই জেতাল হল্যান্ডকে

গোলাম সারোয়ার টিপু
গোলাম সারোয়ার টিপু

শুধু জেতার সামর্থ৵ই সব নয়। জেতার তীব্র ইচ্ছাও থাকতে হবে। সেটাই দেখাল হল্যান্ড।

পরশু ​মেক্সিকোর বিপক্ষে ডাচরা জিতল, হারের আগেই না-হারার প্রতিজ্ঞায়। শেষ মিনিট পর্যন্ত জানবাজি রেখে খেলল। যেভাবে আক্রমণের ঢেউ তুলেছিল ডাচরা, একটা সময় মেক্সিকোর দুর্গ ভেঙে পড়​তই। প্রবল পানির স্রোতের সামনে টিকতে পারে না কংক্রিটের দেয়ালও। 

একটা সময় তাই মনে হচ্ছিল, মেক্সিকো গোল ধরে রাখতে পারবে না। গোল করার পর থেকেই ওরা চিন্তায় পড়েছে কীভাবে গোলটা ধরে রাখবে। সেটা করতে গিয়ে একটু একটু করে গুটিয়ে নেয় নিজেদের। যদিও নিজেদের সীমানায় প্রতিপক্ষকে বাধা দেওয়া, সামনে এগোতে না দেওয়া, এগুলো একটা সময় পর্যন্ত ভালোই করছিল মেক্সিকো। কিন্তু বেশি সময় এটা করা কঠিন। হল্যান্ড সেই সুযোগই নিয়েছে ভালোভাবে।

হল্যান্ডের জয়সূচক গোলের উৎ​স হয়ে আসা পেনাল্টি ​নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। তবে আমার মতে, ​ওটা পেনাল্টিই। অনেকে বলছেন, রোবেন একটু অভিনয় করে পেনাল্টি আদায় করেছে, হতে পারে একটু সুযোগ তিনি নিয়েছেন। তবে তাঁর পায়েই লেগেছে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের পা। সুতরাং রেফারি পেনাল্টি দিয়ে হল্যান্ডের পক্ষে বাঁশি বাজিয়েছেন, কারও কারও এমন সমালোচনায় আমি গলা মেলাব না।

তবে একটা ব্যাপারে আমি নিঃসংশয়—আরিয়েন রোবেনই ডাচদের নায়ক। অসম্ভব পরিশ্রমী। এ​ই কলামে আগেও বলেছিলাম, রোবেন এমন এক ফুটবলার​, যিনি মাঠে সারাক্ষণই নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। এই চরিত্রের ফুটবলার পাওয়া কঠিন। মাঠে কিছু খেলোয়াড় লুকিয়ে থাকেন, কলম্বিয়ার জেমস রদ্রিগেজ সে রকমই এক খেলোয়াড়। মেসি যেমন কখনো কখনো চুপচাপ থাকেন মাঠে, বোঝা যায় না মাঠে আছেন কি না। কিন্তু কাজের কাজটা করে দেন সময়মতো। রোবেন এঁদের​ চেয়ে আলাদা। সারাক্ষণ দৌড়ান, ডান-বাঁ, কোনো দিকে নেই! খেলার গতি বদলাতে পারেন খুব ভালো । মাঠে কী হচ্ছে, কী করা দরকার, এটা সারাক্ষণই মাথায় ঘোরে তাঁর। যে কারণে খেলা থেকে হারিয়ে যান না এক মিনিটও। ফন পার্সিকে তুলে নেওয়া পর রোবেনের কাঁধেই দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব বর্তাল। সেটা তিনি পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।

স্নাইডার আবার একটু অন্য ধরনের খেলোয়াড়। তাঁর দায়িত্বটা মূলত রক্ষণের সঙ্গে আক্রমণের সেতু হয়ে থাকা। মাঝমাঠে বল স্ন্যাচ, আক্রমণ গড়তে ভূমিকা রাখা, এসব দায়িত্বের সঙ্গে গোল করতেও পারদর্শী স্নাইডার। যে গোলে মেক্সিকোর বিপক্ষে দলকে শেষ মুহূর্তে ম্যাচে ফেরালেন, এককথায় দুর্দান্ত। শটে যেমন জোর, তেমনি নিশানা । ইন্টার মিলানে স্নাইডারের পায়ে এমন গোল অনেক দেখেছি। এই গোলটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, হল্যান্ডের আরেকটি বিশ্বকাপ-স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখা গোল এটি।

প্রশংসা পাবেন কোচ লুই ফন গালও। ভদ্রলোক খুব ভালো ট্যাকটিশিয়ান। খেলোয়াড় বদলালে তাঁর ছকও পাল্টে যায়। ​কখন কোন কৌশল নেবেন, এটা আসলে খেলোয়াড়ের দক্ষতার ওপরই নির্ভর করে। হল্যান্ড গোল খাওয়ার কিছু সময় পর দেখলাম, স্নাইডারকে সামনে তুলে ‘ফলস নাইন’ হিসেবে ব্যবহার করলেন । আক্রমণ বাড়ানোর জন্যই এটা করা। দুটি উইংও খুব ভালোভাবে কাজ শুরু করল। সব ​মিলিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে দাঁড়িয়ে নিজেদের প্রমাণ করেছে হল্যান্ড। কিছু ভুল পাস হয়েছে, ওটা একপাশে রেখেই বলব, জয় ছিনিয়ে নিতে গোটা দল যেভাবে সব শ্রম নিংড়ে দিয়েছে, সত্যিই এটা লড়াকু মানসিকতার পরিচয়। ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই একটা দলকে ভালোভাবে বোঝা যায়।

ম্যাচটাও ছিল উপভোগ্য। আমার চোখে এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ম্যাচ। কিন্তু হতাশ হয়েছি কোস্টারিকা-গ্রিস ম্যাচ দেখে। খেলার মধ্যে সৌন্দর্য খুঁজে পেলাম না। গ্রিস টেক​নিক্যালি দুর্বল, প্রচুর ভুল পাস দিয়ে বিরক্তিই ছড়িয়েছে শুধু।