শতক পেয়েছেন কাইল মায়ার্স
শতক পেয়েছেন কাইল মায়ার্স

সেই বাংলাদেশের বিপক্ষেই মায়ার্সের শতক, নিয়ন্ত্রণ উইন্ডিজের

চট্টগ্রামে অভিষেক টেস্টেই বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে খেলেছিলেন অপরাজিত ২১০ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। কাইল মায়ার্স এরপর ২১ ইনিংসে কোনো শতকের দেখা পাননি, কোনো ইনিংসে খেলেননি ১০০ বলই। সেন্ট লুসিয়ায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সেই বাংলাদেশের বিপক্ষেই শতকের ‘খরা’ কাটালেন তিনি। তাঁর ১৮০ বলে ১২৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ আবার নিজেদের হাতে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জার্মেইন ব্ল্যাকউডের সঙ্গে ১১৬ রানের জুটি গড়ার পর জশুয়া ডা সিলভার সঙ্গে মায়ার্স যোগ করেছেন আরও ৯২ রান। পরের জুটি অবিচ্ছিন্ন এখনো, দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এগিয়ে ১০৬ রানে, বাকি আছে ৫ উইকেট।

প্রথম সেশনে ৪ উইকেট নিয়ে দারুণভাবে লড়াইয়ে ফেরা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেশন কাটে উইকেটশূন্যই। ওই সময় সহ-অধিনায়ক জার্মেইন ব্ল্যাকউডের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন জুটি ছিল মায়ার্সের। শেষ সেশনের শুরুতেই ব্ল্যাকউডকে ফেরালেও এরপর আর উইকেটের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে উইকেট থেকে সহায়তা পেয়েছিলেন পেসাররা, শেষ সেশনের শুরুতে হয় বেশ আঁটসাঁট বোলিং-ও। কিন্তু শেষে চাপ ধরে রাখতে পারেননি তাঁরা।

বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন শরীফুল ইসলাম

প্রথম সেশনে ৪ উইকেটের প্রথমটি আসে দিনের দশম ওভারে, শরীফুল ইসলামের বেশ তীক্ষ্ণ বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে উইকেটকিপার নুরুল হাসানের হাতে ধরা পড়েন জন ক্যাম্পবেল, থামেন অর্ধশতক থেকে ৫ রান দূরেই। এর আগেই অবশ্য ব্রাফেটের সঙ্গে ক্যাম্পবেলের উদ্বোধনী জুটিতে ওঠে ১০০ রান। ২০১৪ সাল থেকে এ নিয়ে চার বার ওয়েস্ট ইন্ডিজ শতরানের উদ্বোধনী জুটির দেখা পেল, এর প্রতিটিই এসেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে।

সঙ্গী হারালেও ব্রাফেটকে দ্রুতই টলাতে পারেনি বাংলাদেশ। অসম বাউন্সে তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলেন ইবাদত, তাঁর সঙ্গী রেমন রিফারের ব্যাটের কানা খুঁজে পেলেও তখন উইকেট পাননি খালেদ। চিত্রটা হুট করেই বদলে যায় ৩৭তম ওভারে আকৃতি বদলে যাওয়াতে বল পরিবর্তন করার পর। পরিবর্তিত বলে ১২ বলের মধ্যে আসে ৩ উইকেট। মিরাজের একটু ঝুলিয়ে দেওয়া বলে সামনে ঝুঁকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন অর্ধশতক পূর্ণ করা ব্রাফেট। পরের ওভারে খালেদ করেন জোড়া আঘাত—ইনসাইড-এজে বোল্ড হন রিফার ও এনক্রুমা বোনার। দুইটি ডেলিভারিই লেংথ থেকে লাফিয়ে উঠেছিল, রিফারেরটি খালেদ পান রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে, বোনারেরটি পান ওভার দ্য উইকেট থেকে বোলিং করে।

জোড়া আঘাত করেন খালেদ

পরের সেশনে মায়ার্স ও ব্ল্যাকউডের জুটি লিড এনে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ওই সেশনে ৩০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে আরও ১১১ রান যোগ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ওভারপ্রতি ৩.৭০ রান তুলে। মধ্যাহ্নবিরতির পর প্রথম ২ ওভারে ২ রান এলেও মূলত এরপর থেকেই চড়াও হতে থাকেন মায়ার্স ও ব্ল্যাকউড, বাউন্ডারি আসতে থাকে প্রায় নিয়মিত বিরতিতেই। ৫০তম ওভারে মিরাজকে ম্যাচের প্রথম ছয়টি মারেন মায়ার্স, বোলারের মাথার ওপর দিয়ে।

প্রথম সেশনে উইকেট বোলারদের সহায়তা করলেও দ্বিতীয় সেশনে অপেক্ষাকৃত পুরোনো বলে সেভাবে সুবিধা করতে পারেননি বাংলাদেশিরা। এক পর্যায়ে শর্ট বলের দিকে ভালোভাবেই ঝুঁকেছিলেন ইবাদত-খালেদরা, তাতে ব্যাটসম্যানদের একটু অস্বস্তি হলেও ঠিক পরাস্ত হননি তাঁরা। শরীফুলের বল খুঁজে পেয়েছিল কাইল মায়ার্সের ব্যাটের কানা, সেটি যায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্লিপের মধ্যে থাকা বড় গ্যাপের মধ্য দিয়ে। পরের ওভারে ইবাদতের বলে টপ-এজড হয়েছিলেন ব্ল্যাকউড, এবার সেটির নাগাল পাননি উইকেটকিপার নুরুল হাসান।

চা-বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই অবশ্য ব্রেকথ্রু দেন মিরাজ। তাঁর দ্রুতগতির সোজা যেতে থাকা বলটা ব্যাকফুটে বেশ পেছনে গিয়ে আড়াআড়ি খেলার চেষ্টায় মিস করে এলবিডব্লু হন ৪০ রান করা ব্ল্যাকউড। বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রিভিউ নিলেও কাজে আসেনি তা, বিরতির পর কোনো রান না যোগ করেই ফেরেন তিনি। সে সময় বাংলাদেশ করছিল বেশ আঁটসাঁট বোলিং, সেশন শুরুই হয় টানা ৪টি মেডেনে। দ্বিতীয় নতুন বল নিতে ৮৪তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, ওই সময়ে ১২ ওভারে ওঠে মাত্র ১০ রান।

শেষ দুই সেশনে বাংলাদেশ নিতে পেরেছে মাত্র ১টি উইকেট

উইকেটে টিকে থাকার ফায়দা একটু পরই আদায় করা শুরু করেন মায়ার্সরা। ৩ রানে মিরাজের বলে একবার ডা সিলভার ক্যাচের মতো উঠলেও নিতে পারেননি নুরুল হাসান। এ ছাড়া নড়বড়ে নব্বইয়ে থাকার সময় শরীফুলকে একবার তুলে মেরেছিলেন মায়ার্স, তবে বল পড়ে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’। আর শেষ দিকে ইবাদতের বলে ডা সিলভার বিপক্ষে কট-বিহাইন্ডের একটা রিভিউ নেয় বাংলাদেশ, ব্যর্থ হয় সেটিও।

এর বাইরে বাংলাদেশকে হতাশই করে গেছেন মায়ার্স ও ডা সিলভা। ১৪৫ বলে ৯০ রানে যাওয়া মায়ার্স তিন অঙ্কে যান ১৫০ বলেই। শরীফুলকে এক পা তুলে মারা ছয়ে পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক। ইনিংসে এখন পর্যন্ত ১৫টি চারের সঙ্গে তিনি মেরেছেন ১৫টি চার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

২য় দিন শেষে

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৬৪.২ ওভারে ২৩৪ (তামিম ৪৬, নাজমুল ২৬, এনামুল ২৩, লিটন ৫৩, ইবাদত ২১, শরীফুল ২৬, খালেদ ১; জোসেফ ৩/৫০, সিলস ৩/৫৩, ফিলিপ ২/৩০, মেয়ার্স ২/৩৫)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস : ১০৬ ওভারে ৩৪০/৫ (মায়ার্স ১২৬, ব্রাফেট ৫১, ক্যাম্পবেল ৪৭, ডা সিলভা ২৬*; খালেদ ২/৭৭, মিরাজ ২/৬৮, শরীফুল ১/৬৭)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংসে ১০৬ রানে এগিয়ে