বিশ্বকাপের দলগুলো

সুইসদের 'মধুচন্দ্রিমা'

বিশ্বকাপটা উপভোগের হলেও স্বপ্ন দেখতে চায় সুইসরা
বিশ্বকাপটা উপভোগের হলেও স্বপ্ন দেখতে চায় সুইসরা

২০৩টি দেশ আর ৮২০টি ম্যাচ! বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের এই মহাযজ্ঞ পেরিয়েই চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেয়েছে মাত্র ৩২টি দল। এই ৩২ দল নিয়ে আমাদের নতুন ধারাবাহিক। আজ থাকছে সুইজারল্যান্ড—

টেনিস তারকা রজার ফেদেরারের দেশ সুইজারল্যান্ড বিখ্যাত আরও একটি কারণে মধুচন্দ্রিমা গন্তব্য হিসেবে জগদ্বিখ্যাত এই দেশ। বিশ্বকাপও তাদের কাছে তা-ই। কোনো চাপ নেই, নেই প্রত্যাশা, পুরো ব্যাপারটিই উপভোগের। যেন এক মধুচন্দ্রিমা। কিন্তু এই মধুচন্দ্রিমার মধ্যেও তাদের স্বপ্ন বড় কিছুরই।

এবার আসুন এক ধ্রুপদি ম্যাচের গল্পে। ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপ। আয়োজক ভূস্বর্গখ্যাত সুইজারল্যান্ড। সেই আসরে সুইস দলের রমরমা অবস্থা। নিজ সমর্থকদের সমর্থন পেয়েই দলটি উঠে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষ আটে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রিয়া।

ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিট ০-০ সমতা। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সুইজারল্যান্ড এগিয়ে গেল ৩-০ গোলে। এই ম্যাচের কী আর কিছু বাকি থাকে? নাহ্, বাকি ছিল অনেক কিছুই। তিন গোলে পিছিয়ে পড়ার পরের ৮ মিনিটে অস্ট্রিয়ান ঝড় উঠল মাঠে। গুনে গুনে পাঁচ গোল। তারা এগিয়ে গেল ৫-৩ গোলে।

সুইজারল্যান্ড এরপর আরও দুই গোল দিতে পারল বটে, কিন্তু সেই দুই গোলের জবাবে অস্ট্রিয়া দিল আরও দুই গোল। খেলাটি হচ্ছিল প্রচণ্ড গরমের মধ্যে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঘেমে-নেয়ে অস্ট্রিয়া শেষ অবধি ম্যাচটি জেতে ৭-৫ গোলে। ‘দ্য হিট ব্যাটল অব লউসেন’ নামে পরিচিত এই ম্যাচটি বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ও ধ্রুপদি লড়াই হিসেবেই বিখ্যাত।

এই খেলাটির গল্প বলার কারণ অবশ্য অন্য। খেলাটি হয়েছিল জুন মাসে। ওই দিনের পর থেকে জুন মাসকে একটু সন্দেহের চোখেই দেখে সুইসরা। এই ম্যাচটির জন্য জুন মাসকে তারা ‘অপয়া’ বিচার করে দেখেই কি না, বিশ্বকাপে এর পর থেকে তাদের বড় কোনো সাফল্য নেই। বিশ্বকাপ আয়োজনের মাস তো ওই জুনই।

এবারের পরিস্থিতি অবশ্য ভিন্ন। জুন মাসে আয়োজিত বিশ্বকাপেই তারা একটু বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছে। উপভোগের মূলমন্ত্রটা পুঁজি করে বড় সাফল্য নিয়েই ঘরে ফিরতে চায় তারা।

এই বড় কিছুর স্বপ্নটা তাদের দেখিয়েছেন জার্মান কোচ অটমার হিজফেল্ড। বিশ্বখ্যাত এই কোচের আছে বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কোচ হিসেবে মোট সাতবার বুন্দেসলিগা জয়ের অভিজ্ঞতা। ২০১০ সাল থেকে সুইস দলের কোচ হিজফেল্ড। তাঁর অধীনেই গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে হারিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। বিশ্বকাপের শুরুতেই ওটা ছিল স্পেনের জন্য বিরাট এক ধাক্কা। এবার বড় কিছুর স্বপ্নটা আসলে সুইজারল্যান্ড দেখছে চার বছর আগে স্পেনকে হারানোর সুখস্মৃতি থেকেই।

সুইজারল্যান্ডের মোট ২০ শতাংশ অভিবাসী। তাদের বিশ্বকাপ দলেও আছে কয়েকজন অভিবাসী। কোচ নিজেই বলেছেন, ‘দলের প্রায় অর্ধেক খেলোয়াড়ই অভিবাসী। অভিবাসী ছাড়া আমাদের পক্ষে দল গঠন সম্ভব নয়।’ এবারের বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের তুরুপের তাস তারাই। তাদের মূল তারকা জেরডান শাকিরি। বায়ার্ন মিউনিখের এই তারকা নিঃসন্দেহে সুইজারল্যান্ডের নির্ভরতার প্রতীক। তাঁর দূরপাল্লার শট নেওয়ার ক্ষমতা ও প্রেসিং কেতার খেলা বিপাকে ফেলতে পারে প্রতিপক্ষের রক্ষণ সেনাদের।

২৯ বছর বয়সী গোখান ইনলারের রয়েছে নাপোলির মতো ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা। জুভেন্টাসের হয়ে খেলা, ৩০ বছর বয়সী রাইট ব্যাক স্টিফেন লিস্টেইনারের ওপরেও চোখ থাকবে সবার। এরাই আসলে হিজফেল্ডকে ভরসায় জোগাচ্ছেন। খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার ওপর হিজফেল্ডের রয়েছে দারুণ আস্থা।

বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা: এ পর্যন্ত মোট ১০ বার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার অভিজ্ঞতা আছে সুইজারল্যান্ডের। ১৯৩৪, ১৯৩৮ ও ১৯৫৪ সালে সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল। ১৯৯৪ ও ২০০৬ সালে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল দলটি। কিন্তু গতবার প্রথম পর্বেই বিদায় নিতে হয় তাদের। ১৫ জুন ইকুয়েডরের বিপক্ষে তাদের প্রথম ম্যাচ। তাদের অন্য দুই গ্রুপ প্রতিপক্ষ ফ্রান্স ও হন্ডুরাস।

শক্তি:
ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ খেলোয়াড়েরা সুইজারল্যান্ডের সাফল্যের নিয়ামক হতে পারেন। তরুণেরাও একেবারে ফেলনা নয়। বিশ্বকাপের আসরে স্নায়ু হারিয়ে ফেলার মতো কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কমই।

দুর্বলতা:
লাতিন আমেরিকার কোনো দেশে সুইজারল্যান্ড শেষবারের মতো পা রেখেছিল ১৯৮৫ সালে। এই দলের কোনো খেলোয়াড়েরই ব্রাজিলীয় কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। ব্যাপারটি তাদের সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।