ইংল্যান্ড থেকে যে ফ্লাইটে দেশে ফিরল বাংলাদেশ ‘এ’ দল, সেই ফ্লাইটেই এসেছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ফিরলেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট লিগ (সিপিএল) খেলে। ‘এ’ দলের মতো ব্যর্থতার ঝাঁপি নেই সাকিবের মাথায়। তবে সাফল্যের মালাও খুব বেশি গাঁথতে পারেননি। নির্দিষ্ট করে বললে, সাকিবের অলরাউন্ডার সত্তার একটি সফল, আরেকটি ব্যর্থ। তবে অখুশি নন সাকিব।
সিপিএল খেলে গত পরশু ফিরেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেক তারা। সেন্ট লুসিয়া জুকসের হয়ে সাত ম্যাচে ২৩.১৪ গড়ে ১৬২ রান করেছেন তামিম ইকবাল। সাকিবের মতো একটির ঘাটতি আরেকটিতে পুষিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই তাঁর। তবে তামিমও খুব একটা অখুশি নন। নিজের পারফরম্যান্স তাঁর কাছে, ‘খুব ভালো নয়, খুব খারাপও নয়।’ সাকিব-তামিম মিলে যাচ্ছেন আরেকটি জায়গাতেও। সিপিএলের আয়োজন, ব্যবস্থাপনা, পেশাদারি ও আবহে মুগ্ধ দুজনই!
শুধু পরিসংখ্যান দেখলে তামিমের পারফরম্যান্সকে ভালো কিছু বলা যাবে না। সাত ম্যাচে মাত্র একটি ফিফটি। তার পরও অখুশি না হওয়ায় তামিমের ব্যাখ্যা, ‘উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভীষণ কঠিন ছিল। রান করা সহজ ছিল না। কেউই খুব বেশি রান করতে পারেনি, খুব বড় কোনো দলীয় স্কোরও নেই। আরও তিন ম্যাচে ভালো শুরু করেছিলাম। ২২, ৩৩, ২০ রানের ওই ইনিংস তিনটাকে বড় করতে পারলে হয়তো খুব ভালো বলতে পারতাম।’
তবে খুব ভালো করতে না পারার হতাশাটা এবার জেঁকে বসতে পারেনি। জীবনের বাঁকই যে বদলে গেছে! শুধু ক্রিকেট নয়, ক্যারিবিয়ান অভিযান ছিল তামিমের মধুচন্দ্রিমাও। পুরো সফরে সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী আয়েশা। ব্যক্তিগত জীবনে বদলের এই ইতিবাচক ছোঁয়া টের পেয়েছেন ক্রিকেট-জীবনেও, ‘আগে ব্যাটিংয়ে খারাপ করলে ভুলতে পারতাম না। এখন মাঠের বাইরে একটা জীবন আছে, ব্যর্থতা ভুলে থাকতে পেরেছি। ক্রিকেটে এই মানসিক সমর্থনটা খুবই দরকার। শেষের দিকে অবশ্য ও একটু হাঁপিয়ে উঠেছিল, আমাকে মাঠেই সময় দিতে হয়েছে বেশি। তবে সব মিলিয়ে দারুণ সময় কেটেছে।’
সাকিব দেশে ফিরলেন অনেক দিন পর। লম্বা সফরে মধুচন্দ্রিমা সেরে ফেলেছেন তিনিও। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে শ্বশুরবাড়ি দর্শন, সঙ্গে মধুচন্দ্রিমা। পরে ইংল্যান্ডে লিস্টারশায়ারের হয়ে খেলেছেন ফ্রেন্ডস লাইফ টি-টোয়েন্টিতে। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিপিএল। লিস্টারের হয়ে ১০ ম্যাচে উইকেট ছিল ৯টি, ৯ ইনিংসে রান ১৪৬। ওয়েস্ট ইন্ডিজে বোলিংটা আরেকটু ভালো হলো, ব্যাটিং যাচ্ছেতাই। বারবাডোজ ট্রাইডেন্টের হয়ে ৮ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। গড়েছেন টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড (৬/৬)। কিন্তু ব্যাটিংয়ে ৬ ইনিংসে মাত্র ২২ রান!
তবে আক্ষেপ বলে কিছু তাঁর দর্শনেই নেই, ‘বোলিংটা অনেক ভালো হয়েছে, ব্যাটিং ভালো হয়নি। তবে আমি খুব একটা চিন্তিত নই। ঠিক হয়ে যাবে।’ ব্যাটিং-ব্যর্থতার কারণ প্রশ্নেও উত্তর ‘সাকিবীয়’ ঢঙে, ‘কারণ জানি না, এত কিছু চিন্তা করি না। এত চিন্তার সময়ও পাইনি।’
আয়োজন নিয়ে দুজনেরই মুগ্ধতা অবশ্য কৌতূহল-জাগানিয়া। ক্যারিবিয়ানের জীবনদর্শনের সঙ্গে ‘গোছানো’ ব্যাপারটি যে একদমই যায় না! সাকিব বললেন, ‘মাঠের বাইরের ব্যবস্থাপনা ছিল দারুণ। খুব গোছানো ছিল আয়োজন, সবকিছু খুব পেশাদারির সঙ্গে সামলেছে ওরা।’ তামিম তো নিজে থেকেই জানালেন ভালো লাগার কথা, ‘আয়োজন, টাকাপয়সা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ছিল দারুণ পেশাদারির ছাপ। ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের।’
বিপিএল আয়োজকেরা কি শুনছেন এসব?: