সাকিব-মুশফিক-জিমি হতে চাইলে...

বিকেএসপির মূল ফটক। ছবি: ফেসবুক
বিকেএসপির মূল ফটক। ছবি: ফেসবুক
>

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চলতি মাসের ১৬ তারিখ থেকে শুরু হবে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ( বিকেএসপি) ভর্তি বাছাই প্রক্রিয়া।

গত শতাব্দীর শেষ দিকেও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে পেশাদারির ছোঁয়া ছিল না বললেই চলে। ভালো লাগা বা শরীরচর্চার অংশ হিসেবে খেলাতে নাম লেখাতেন সবাই। এ ছাড়া কোনো মা-বাবা শখের বশেই সন্তানদের হাতে তুলে দিতেন ব্যাট অথবা ফুটবল। আবার যে ছেলেটার পড়ার টেবিলে মন বসে না, তার বাঁধভাঙা আগ্রহের কাছেও হার মানতেন অভিভাবকেরা। সময়ের পালাবদলে ক্রীড়া এখন অন্যতম সেরা সম্মানজনক পেশা। ভালো খেলতে পারলেই অর্থকড়ির সঙ্গে যশ-খ্যাতি! ফলে বর্তমানে অভিভাবকেরাও চান তাঁর সন্তান খেলোয়াড় হোক। আর এ জন্য চাই সঠিক গাইডলাইন।

এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। যেখান থেকে উঠে এসে বিশ্ব ক্রিকেট মাতাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, নাসির হোসেন, আবদুর রাজ্জাকদের মতো ক্রিকেটার। তাই অনেকেই ভেবে থাকেন, ছেলেকে একবার বিকেএসপিতে দিতে পারলেই সে-ও বুঝি হয়ে গেল মস্ত বড় ক্রিকেটার। বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারলে ভালো একটা গাইডলাইন পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই। কিন্তু ব্যক্তিগত মেধা ও পরিশ্রম ছাড়া ক্রীড়ায় সাফল্য পাওয়া যায় না বললেই চলে। আবার সঠিক উপায়ে পরিশ্রমের পথটা জানা উচিত। সে পথটা দেখিয়ে দিতে পারে বিকেএসপি।

শুধু ক্রিকেট নয়, সব খেলাতেই আছে খেলোয়াড় তৈরির এ কারখানার ছাত্রছাত্রীদের প্রাধান্য। ফুটবলে উঠে এসেছেন মাসুদ রানা, হাসান আল মামুন, ফিরোজ মাহমুদ টিটু, জাহিদ হাসান এমিলির মতো তারকারা, যাঁরা দীর্ঘ সময় দেশের ফুটবলে পতাকা বহন করেছেন। হকিতে আছেন মামুনুর রশিদ ,রাসেল মাহমুদ জিমিরা। এ ছাড়া একক খেলাগুলোতে তৈরি হয়েছেন শুটার আসিফ হোসেন, আবদুল্লাহ হেল বাকি, সাঁতারু মাহফুজার আক্তার শিলার মতো তারকারা।

ভর্তির সময়
১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে চারদিন ব্যাপী বাছাই প্রক্রিয়া। আর্চারি, অ্যাথলেটিকস, বাস্কেটবল, বক্সিং, ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, জুডো, শুটিং, সাঁতার, টেনিস, টেবিল টেনিস, তায়কোয়ান্দো, কারাতে, উশু ও ভলিবল—এই ১৭টি খেলায় আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বিকেএসপিতে।

ভর্তির নিয়মকানুন
সাধারণত চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবে। প্রতিবছর একেকটি খেলায় যে কটি আসন খালি হয়, তার বিপরীতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়। বিকেএসপির প্রশিক্ষণকেন্দ্রে নির্দিষ্ট দিনে প্রশিক্ষণার্থীদের চূড়ান্ত ভর্তির জন্য বাছাই করা হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে সাধারণত স্বাস্থ্য ও বয়স দেখা হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে দেখা হয় শারীরিক সক্ষমতা। তৃতীয় পর্বে শিক্ষার্থীকে মাঠে পাঠানো হয়। সেখানে আবেদন অনুযায়ী নেওয়া হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণদের পরবর্তী সময় সাত দিনের বাছাই ক্যাম্পে ডাকা হয়। সপ্তাহব্যাপী সকাল-বিকেল অনুশীলনের পর নেওয়া হয় লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষা হয় ১০০ নম্বরে। বিষয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান।

শুধু মাঠের খেলাতেই নয়, সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পিছিয়ে নেই বিকেএসপির শিক্ষার্থীরা।এক শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনিছুর রহমান। ছবি: ফেসবুক


স্বাস্থ্য পরীক্ষা (প্রথম ধাপ)
প্রথমেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসকেরা নির্ধারণ করে থাকেন আবেদনকারীর বয়স, উচ্চতা, ওজন ও শারীরিক কোনো ত্রুটি আছে কি না। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ‘ইয়েস’ কার্ড পেলেই আবেদনকারী নিজ নিজ খেলার মাঠে গিয়ে শারীরিক সক্ষমতা ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ যে ক্রিকেটে আবেদন করেছে, সে যাবে ক্রিকেট মাঠে। যে ফুটবলে, সে যাবে ফুটবল মাঠে।

শারীরিক সক্ষমতা ( দ্বিতীয় ধাপ)
আবেদন অনুযায়ী নিজ নিজ মাঠেই হয়ে থাকে শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা। সাধারণত দেখা হয় স্পিড (গতি), স্ট্রেংথ (শক্তি), অ্যান্ডুরেন্স (দম), এজিলিটি (ক্ষিপ্রতা), ব্যালান্স (ভারসাম্য), ফ্লেক্সিবিলিটি (নমনীয়তা)।

ব্যবহারিক পরীক্ষা (তৃতীয় ধাপ)
সাত দিনব্যাপী দ্বিতীয় দফায় চূড়ান্ত লড়াইয়ে জায়গা করে নেওয়ার জন্য ব্যবহারিক পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবেদনকারীদের খেলা অনুযায়ী নেওয়া হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। যেমন ক্রিকেটে ভর্তি-ইচ্ছুকদের জন্য ব্যাটিং-বোলিং ড্রিল ও ফুটবলারদের জন্য স্কিল-গেম। 

প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য এই তিনটি ধাপই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এক দিনে। এখান থেকে বাছাই করে নেওয়া হয় সাত দিনব্যাপী বাছাই পরীক্ষায়।

সাত দিনব্যাপী বাছাইপর্ব
সপ্তাহব্যাপী বাছাইপর্বের ধাপটি পুরোপুরি আবাসিকভাবে পরিচালনা করা হয়। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের বিকেএসপির নিজস্ব হোস্টেলে রেখে আয়োজন করা হয় চূড়ান্ত নির্বাচনী পরীক্ষা। সপ্তাহব্যাপী সকাল-বিকেল অনুশীলনে তাদের মেধা ও দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে লক্ষ্য করা হয় আবেদনকারীর আচার-আচরণ।
শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় লিখিত পরীক্ষা। ১০০ নম্বরের পরীক্ষার বিষয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইলে তার জন্য ষষ্ঠ শ্রেণির সিলেবাসে পরীক্ষা হবে। আবার যে প্রতিযোগী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, তার জন্য পঞ্চম শ্রেণির সিলেবাস।

নিয়মকানুন তো সব জানাই হলো। তাহলে এবার ছেলে বা মেয়েকে দাঁড় করিয়ে দিন পরীক্ষার লাইনে—যদি ইচ্ছে থাকে ছেলে বা মেয়েটিকে সাকিব, মুশফিক, আসিফ, এমিলি বা শিলার মতো তারকা হিসেবে দেখার।