ফাফ ডু প্লেসি আউট হতে পারতেন ২ রানেই। সাকিব আল হাসানের বলে তাঁকে স্টাম্পিং করার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন দীনেশ কার্তিক। ডু প্লেসি শেষ পর্যন্ত করেছেন ৫৯ বলে ৮৬ রান। ভেঙ্কটেশ আইয়ার আউট হতে পারতেন কোনো রান না করেই। জশ হ্যাজলউডের বলে সহজ ক্যাচ ছেড়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আইয়ার শেষ পর্যন্ত করলেন ৩২ বলে ৫০ রান। শেষ পর্যন্ত রাতটা দুই রকমই গেল ডু প্লেসি ও আইয়ারের, ধোনি ও কার্তিকের, চেন্নাই ও কলকাতার। ফাইনালে ১৯২ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হলেও ইনিংসের মাঝপথের পরের দিক থেকে খেই হারিয়েছে কলকাতা। সাকিবদের ২৭ রানে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসের চতুর্থ আইপিএল শিরোপা জিতেছে ধোনির চেন্নাই।
রাতটা ভুলে যাওয়ার মতো গেছে সাকিবেরও। আজ রাতেই জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের। এর আগে ফাইনালে ৩ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য, ব্যাটিংয়ে ১ বল খেলেও করতে পারেননি কোনো রান। অবশ্য যে সময় নেমেছিলেন, কলকাতাকে জেতাতে করতে হতো অলৌকিক কিছুই!
দুবাইয়ের এ উইকেটটা প্রায় নতুন, ব্যাটিংয়ের জন্যও সহায়ক ভালোই। সেখানেই টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলকাতা অধিনায়ক এউইন মরগান। ম্যাচের পরের ভাগে শিশিরের প্রভাব থাকতে পারে বলেই এমন সিদ্ধান্ত তাঁর। প্রথম ওভারেই সাকিবকে এনেছিলেন মরগান, সাকিব দিয়েছিলেন ৬ রান। পরের ওভারেই ডু প্লেসির উইকেট পেতে পারতেন, সেটা হয়নি। ডু প্লেসি বেঁচে যাওয়ার পরের দুই বলে সাকিবকে চার ও ছয় মারেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়, সে ওভারে সাকিব দেন ১২ রান।
চেন্নাইয়ের ওপেনিং জুটি ভাঙতে এরপর নবম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় কলকাতাকে। ২৭ বলে ৩২ রান করে লং-অফে সুনীল নারাইনের বলে ক্যাচ দেন গায়কোয়াড়, চেন্নাই প্রথম উইকেট হারায় ৬১ রানে। সাকিব নিজের তৃতীয় ও ইনিংসে শেষ ওভার করতে আসেন ১০ম ওভারে। তবে ডু প্লেসি ততক্ষণে চড়াও হয়েছেন কলকাতার ওপর। ৩ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থেকেই স্পেল শেষ করেন সাকিব।
দ্বিতীয় উইকেটে রবিন উথাপ্পার সঙ্গে ডু প্লেসির জুটিতে ওঠে ৩২ বলে ৬৩ রান। এরপর মঈন আলীর সঙ্গে তাঁর জুটিতে এসেছে ৩৯ বলে ৬৮ রান। ৩৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করা ডু প্লেসি শেষ পর্যন্ত থেমেছেন আইপিএলের এ মৌসুমে সর্বোচ্চ রান করা গায়কোয়াড়ের চেয়ে ২ রান দূরত্বে। তবে ফাইনালের জন্য দারুণ এক স্কোর চেন্নাই পেয়েছে তার আগেই। বোলারদের ওপর এমন ঝড়ের দিনেও ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন সুনীল নারাইন। লকি ফার্গুসন ৪ ওভারে গুনেছেন ৫৬। ১ উইকেট নিতে ৩২ রান খরচ করেছেন শিভাম মাভি।
রানতাড়ায় নাটক হয়েছে শুরু থেকেই। দ্বিতীয় ওভারে ভেঙ্কটেশ আইয়ারের সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি নিজেই। আইয়ার তখনো কোনো রানই করেননি। জশ হ্যাজলউডকে ঠিক পরের বলেই ছয় মেরে আইয়ার বার্তা দিলেন, ধোনিকে দ্রুতই স্বস্তি পেতে দিচ্ছেন না তিনি।
পাওয়ার প্লে-তে চেন্নাই তুলেছিল বিনা উইকেটে ৫০ রান, ৫৫ রান তুলে কলকাতা ছাড়িয়ে গেল তাদেরও। শুবমান গিল একটু ধীরগতির ছিলেন, ১০ম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার বলে ক্যাচও তুললেন। বলটা উঠেছিল বেশ ওপরে, নিচে বারকয়েক দিক পরিবর্তন করে ভালো ক্যাচ নিলেন আম্বাতি রাইডু। তবে গিল শেষ পর্যন্ত আউট হলেন না! নেমে আসার পথে স্পাইডার-ক্যামের দড়িতে লেগে দিক পরিবর্তন করেছিল বলে সে বলটা শেষ পর্যন্ত হলো ‘ডেড’!
ব্রেক থ্রু পেতে অবশ্য খুব বেশি অপেক্ষা এরপর করতে হয়নি চেন্নাইকে। শার্দুল ঠাকুরকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন আইয়ার, এর আগে করেছেন ৩২ বলে ৫০ রান। কলকাতা খেই হারিয়েছে এরপর। নিতীশ রানা সে ওভারেই ফিরেছেন শূন্যতে। এরপর হ্যাজলউডের বলে ক্যাচ দিয়েছেন নারাইন, ২ রান করেই। ১ ওভার পর দীপক চাহারের বলে এলবিডব্লু গিল, তিনি করেছেন ৪৩ বলে ৫১ রান।
কার্তিক এসে প্রথম বলেই ছয় মেরেছিলেন, তবে টেকেননি তিনিও। কার্তিকের পর সাকিবও জাদেজার শিকার। কার্তিক করেছেন ৭ বলে ৯ রান, এলবিডব্লু হওয়ার আগে কোনো রানই করতে পারেননি সাকিব। অন্যদিকে মরগানকে রেখে ফিরেছেন রাহুল ত্রিপাঠিও, ফিল্ডিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে উঠে গিয়েছিলেন তিনি।
এরপর ৮ বলে ৪ রান করে বাউন্ডারিতে দীপক চাহারের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হয়েছেন মরগান। শেষ দিকে ১৩ বলে ২০ রান করা শিভাম মাভি, ১১ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকা লকি ফার্গুসন, ১৯তম ওভারে ১০ বলের ওভার করা দীপক চাহার চেন্নাইয়ের উৎসবটাই বিলম্বিত করতে পেরেছেন শুধু।