সাকিব আল হাসান ছন্দে ফেরা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার বলে মনে করেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ
সাকিব আল হাসান ছন্দে ফেরা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার বলে মনে করেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ

স্টাম্প ভিশন

সাকিবের ছন্দে ফেরাটাই বড় ব্যাপার

ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে সাকিব আল হাসান

এখনো আশানুরূপ না হলেও বাংলাদেশের ব্যাটিং আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। বোলাররাও বেশ ভালো করেছে ওমানের বিপক্ষে। তবে সবকিছুর পরও আমি বলব, ম্যাচটা ওমানের বাজে ফিল্ডিংই জিতিয়েছে বাংলাদেশকে।

লিটন দাস ও মেহেদী হাসান দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ার পর মোহাম্মদ নাঈম ও সাকিব আল হাসান ভালো জুটি গড়েছে। তৃতীয় উইকেটে মাত্র ৫৩ বলে ৮০ রান করে ইনিংসের ভিতটা গড়ে দিয়েছে তারাই। নাঈম একটু ধীরে খেললেও সাকিব উইকেটে এসে রানরেটটা ঠিক রেখেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে ব্যাট হাতে সাকিবের ছন্দে ফেরা। ও এমন একজন খেলোয়াড়, চাপের মধ্যেও নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলে যেতে পারে।

তৃতীয় উইকেটে সাকিব ও নাঈম গড়েছেন ৮০ রানের জুটি

সাকিবের দুর্ভাগ্য যে ও অর্ধশতক পায়নি, ভালো খেলতে খেলতেই রানআউট হয়ে গেছে। সরাসরি থ্রোটা ছিল দুর্দান্ত। সাকিবকে রানআউট করতে এই থ্রোটা ভালো হলেও পুরো ইনিংস বিবেচনায় ওমানের ফিল্ডিং মোটেই ভালো ছিল না। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে অনেক ভুল তো ওমান করেছেই, একই সঙ্গে ওরা চারটি ক্যাচও ছেড়েছে। এর মধ্যে নাঈমের ক্যাচই দুবার ছেড়েছে ওরা। একটি ১৮ রানে, আরেকটি ২৬ রানে। এ দুটি ক্যাচের একটি হয়ে গেলে দৃশ্যপট পাল্টেও যেতে পারত।

আসলে ক্রিকেটটা এমনই। নাঈম ‘জীবন’ পাওয়ার সুযোগটা নিতে পেরেছে। আউট হওয়ার আগে ৫০ বলে ৬৪ রান করেছে। তবে নাঈম আর সাকিব মিলে যে ভিতটা গড়ে দিয়ে গেছে, এর সুবিধা নিয়ে বাকি ব্যাটসম্যানরা রানটাকে বাড়িয়ে নিতে পারেনি। এ কারণে একটু হতাশা থেকেই যায়। স্কোরটা আরও বড় হতে পারত আমাদের।

ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা

বোলিংয়ে আগের ম্যাচের চেয়ে এ ম্যাচে বেশ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। দেড় শর বেশি রান তাড়া করতে নেমে ওমানও অসাধারণ শুরু করে। এমন নয় যে শুরুর দিকে তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান বা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন খারাপ বোলিং করেছে। আসলে ওমানের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। বিশ্বমানের কিছু শট খেলেছে ওরা। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বুঝি আমরা হারতেই চলেছি।

ব্যাটিংয়ের পর সাকিব বল হাতেও ছন্দে ছিল। ২৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছে সে। মোস্তাফিজ তার প্রধান অস্ত্র কাটারের ব্যবহারটা খুব ভালোভাবে করেই ৪ উইকেট নিয়েছে। একটি উইকেট নিয়েছে সাইফউদ্দিনও এবং সেটা আঁটসাঁট আর গোছানো বোলিং করেই। তাদের পাশাপাশি আমি আরেকজন বোলারেরও নাম বলব। ওমান যখন খুব ভালো ব্যাটিং করছিল, সেই সময় বল হাতে নিয়ে ওদের রানের গতিটা কমিয়ে দিয়েছে মেহেদী।

ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা বিনিময়

মাত্র একটি উইকেট পেয়েছে মেহেদী, এই উইকেটের চেয়েও ভালো ব্যাপার ছিল ৪ ওভারে সে মাত্র ১৪ রান দিয়েছে। প্রতিপক্ষের যখন জয়ের জন্য ওভারপ্রতি ৮ রান করে লাগত, সে ওভারপ্রতি রান দিয়েছে চারের নিচে। এটা দলের অন্য বোলারদের সুবিধা করে দিয়েছে। বলতে পারেন, ও যে চাপটা তৈরি করে দিয়েছে, তার পথ ধরেই সাকিব–মোস্তাফিজরা সহজে উইকেট পেল।

ওমানের মতো বাংলাদেশের ফিল্ডিংও ভালো হয়নি। একটা ক্যাচ মাহমুদউল্লাহও ফেলেছে। আমি যত দূর দেখেছি, ফিল্ডার হিসেবে ওর হাত খুব নিরাপদ। কিন্তু এর পরও ওর হাত থেকে ক্যাচ পড়ার কারণ হতে পারে একটাই—স্কটল্যান্ডের কাছে হারার পর থেকেই খুব চাপে মাহমুদউল্লাহ। ওই হারের কারণে ওমানের মতো একটি দলের বিপক্ষে ম্যাচও আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ আর চাপের হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে ছেলেরা সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে।

সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হচ্ছে ম্যাচটা বাংলাদেশ ২৬ রানে জিতেছে। এতে রান রেটটা একটু বেড়েছে। এখন গ্রুপের শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ভালোভাবে জিতলেই আমাদের পরের রাউন্ডে যাওয়া সহজ হবে। গ্রুপের শেষ ম্যাচটা ওমান–স্কটল্যান্ডের হওয়ায় আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। তিন দলের রান রেটের পার্থক্য খুব বেশি নয়। দুই দলের মধ্যে যে দলই হারবে, তাদের রানরেট কমবে। আর বাংলাদেশ পাপুয়া নিউগিনিকে হারালে রানরেট আরও বাড়বে। সেদিক বিবেচনায় বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে জিতলে সুপার টুয়েলভে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকছে।