তাহলে কলার খোসাই জিতিয়ে দিল বাংলাদেশকে! ম্যাচ শুরুর আগে ড্রেসিংরুমের ময়লার পাত্রে একটু দূর থেকে কলার খোসা ছুড়ে মারছিলেন সাকিব আল হাসান। মারার আগে সতীর্থদের বললেন, খোসাটা ময়লার পাত্রে পড়লে আফগানিস্তান ৪০ রানে অলআউট হবে। আর বাইরে পড়লে ৮০ রানে।
সাকিবের কলার খোসাতত্ত্ব যে দুই রকম সম্ভাবনার কথা বলল, কোনোটাতেই জেতার কথা নয় আফগানিস্তানের। তবে সাকিবের ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক। কারণ কলার খোসা ময়লার পাত্রে পড়েনি এবং আফগানিস্তানও রান করল ৪০-এর ওপরে এবং সেটা ৮০-র কাছাকাছি—৭২।
কাল ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে কথাটা বলে সাকিব নিজেই হেসে দিলেন। তিনি ভালোভাবেই জানেন কলার খোসা ছুড়ে একটা ম্যাচের ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া যায় না। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যে হারের বিন্দুমাত্র শঙ্কাও তাঁদের মনে উঁকি দেয়নি, সেটা বললেন খুব জোর দিয়ে, ‘আজকের (গতকালের) ম্যাচের আগে আমি যতটা রিল্যাক্সড ছিলাম, খুব কম ম্যাচের আগেই এতটা থাকি। আমার তো মনে হয়, আমরা পুরো দলই জানতাম, আজকের (গতকাল) ম্যাচ আমরাই জিততে যাচ্ছি, ম্যাচটা একপেশে হতে যাচ্ছে।’
সাকিব ভুল বলেননি। প্রস্তুতি ম্যাচ দুটির পর বাংলাদেশ দলের চিন্তাচেতনায় আসলেই কখনো আফগান-জুজু ছিল না। ছিল আফগান ম্যাচের আনুষ্ঠানিকতা সেরে সামনে তাকানোর তাড়না। কাল তো তাঁরা সত্যি সত্যিই প্রমাণ করে দিলেন, এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের কাছে হারটা ছিল একটা দুর্ঘটনামাত্র। সাকিবের কথায়ও বিষয়টা পরিষ্কার, ‘আমরা আমাদের মতো খেললে আফগানিস্তান আমাদের সামনে দাঁড়ানোর মতো দল নয়। একটা ম্যাচে ওই রকম হতেই পারে।’
এশিয়া কাপের ম্যাচটা ‘ওই রকম’ হওয়াতে খুব ছোট হলেও একটা কাঁটা বিঁধে ছিল বাংলাদেশের অনুভূতিতে। মুশফিকের দলের জন্য কালকের সহজ জয়টা তাই স্বস্তিরও কারণ। সে জন্য বোলিং-ব্যাটিং-ফিল্ডিং—তিন বিভাগকেই কৃতিত্ব দিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ সাকিব, ‘আমরা তিন বিভাগেই ভালো খেলেছি। ফিল্ডিংটা খুব ভালো ছিল। বোলিংও ভালো করেছি, বিশেষ করে স্পিনাররা। প্রথম বলেই মাশরাফি ভাইয়ের ব্রেক থ্রুটা খুব জরুরি ছিল।’
প্রথম পর্বের ‘এ’ গ্রুপে আরও দুটি ম্যাচ আছে বাংলাদেশ দলের। চট্টগ্রামে ১৮ মার্চের প্রতিপক্ষ নেপাল, ২০ মার্চ খেলা হংকংয়ের বিপক্ষে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এত সহজ জয়ের পরও নেপাল-হংকংকে হালকাভাবে নিতে রাজি নন সাকিব। তবে কালকের ম্যাচের মতো প্রতিপক্ষ নিয়ে না ভেবে নিজেদের খেলায় উন্নতি আনার ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন সাকিব, ‘নেপাল-হংকংয়ের খেলা ইউটিউবে দেখছি। ওদের ভিডিও-ও দেখব। আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওরা কে কী করতে পারে তার চেয়ে আমরা নিজেদের খেলাটা কতটা ভালো করতে পারি সেটা। আজকের (গতকাল) মতো খেলতে পারলে বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না।’
সাকিব অবশ্য মানছেন, খেলাটা অচেনা এসব প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই অনেক সময় বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিপক্ষকে নিয়ে খুব বেশি ‘হোমওয়ার্ক’ করার থাকে না তখন, ‘এসব দলের সঙ্গে খেলা এক দিক থেকে কঠিন। কারণ আপনি জানেন না এর পরে কী আসছে। কোনো কিছু ধারণা করে নেওয়া যায় না। দেখা গেল সাত-আট নম্বরে নেমে একজন মার শুরু করল। হঠাৎ করে একজন ভালো বোলিং শুরু করতে পারে। এই জন্য কোনো কিছু অনুমান করা যায় না।’
কালকের উইকেট বোলারদের জন্য যথেষ্ট সহায়ক ছিল। সাকিব-রাজ্জাকরা কাজে লাগিয়েছেন সেটাই। তবে ভালো উইকেটে বোলিংটাও ভালো না হলে সেই ভালোর আর দাম থাকে না। সাকিবও বলছিলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমরা কত ভালো জায়গায় বল করতে পারি। আর উইকেট আমাদের পক্ষেই ছিল বলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। এ রকম উইকেট হলেই আমাদের জন্য ভালো।’
তবে সব ভালো তার, শেষ ভালো যার। শুরুটা ভালো হওয়ার পর এখন সেই ‘শেষ ভালো’র অপেক্ষায় বাংলাদেশ।