সব হারিয়ে এখন নতুন করে শুরু করতে হবে ব্রাজিলকে। শুরুটা হোক তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ দিয়েই। আমি মনে করি, খেলাটা ব্রাজিলের গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত। শেষটা যেন অন্তত একটু সম্মানজনক হয়।
একই সঙ্গে বলব, সময় এসেছে ব্রাজিলের মনোভাব পাল্টানোর। শুধু ইতিহাস ম্যাচ জেতাবে এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে সবার আগে বাছাইপর্বে খেলতে হবে কঠিন সব প্রতিপক্ষের সঙ্গে। এই প্রজন্মকে বুঝতে হবে ব্রাজিলের সহজাত খেলা কোনটা আর কোনটা অন্যদের অনুকরণ।
মিনেইরাওতে জার্মানি ব্রাজিলকে শেখাল কীভাবে ফুটবল খেলতে হয়। আমরা যে যাই বলি না কেন এটাই হয়েছে প্রথম সেমিফাইনালে। এখন শুধু আশা করতে পারি এই ম্যাচটা থেকে আমরা শিক্ষা নেব, এমন যেন আর কোনো দিন না হয়।
তবে এটা খুব যে অপ্রত্যাশিত ছিল তা বলব না। চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাতেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম ব্রাজিল ফুটবল ধুঁকছে। হল্যান্ডের বিপক্ষে সেলেসাওদের কোনো প্ল্যান ‘বি’ ছিল না, আর তাই টুর্নামেন্ট থেকে তাদের বিদায় নিতে হলো খালি হাতে। তবু চার বছর ধরে লোকজন বলেই যাচ্ছিল ব্রাজিলের দলটাই সেরা। আর যেই দল পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে তাদের চিন্তার কিছু নেই। বেলো হরিজন্তেতে কিন্তু সবার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। এখন সময় লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে, ভেবেচিন্তে সবকিছু নতুন করে শুরু করার। সেটা শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও।
খেলাটা কেমন হলো দেখুন। জার্মানি ব্রাজিলের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়েছে কোনোরকম দয়ামায়া না দেখিয়ে। সেলেসাও কোচ লুইস ফেলিপে স্কলারি ২০ মিনিটে ৪ গোল খাওয়াকে বলেছেন ‘দিশেহারা হয়ে যাওয়ার ফল’। অজুহাতটা আমার কাছে হাস্যকর ঠেকেছে। ব্রাজিল হেরেছে এমন একটি দলের কাছে যারা মাঠে তাদের পরিকল্পনা কাজে লাগিয়েছে একদম প্রথম থেকেই। সপ্তাহান্তে বিশ্বের সেরা দলগুলোর হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলা খেলোয়াড়েরা একদিন সবাই মিলে দিশেহারা হয়ে গেল, ব্যাপারটা আমি মানতে পারলাম না। ব্রাজিল একেবারেই জঘন্য খেলেছে। মাঝমাঠে ছিল না কোনো মার্কিং, যার সুযোগে জার্মানি ইচ্ছেমতো আক্রমণ গড়েছে। ১ গোল খেয়েই ব্রাজিলের মতো দল কেন দিশেহারা হয়ে যাবে? আমি বুঝলাম না ওরা কেন ঠান্ডা মাথায় না খেলে জার্মানদের আক্রমণ করতে গেল, যেটা আদতে ওদের জন্য কাজটা আরও সহজ করে দিল!
আমি খুব ক্ষুব্ধ। জীবনে ভাবিনি ব্রাজিলকে এমনভাবে হারতে দেখব। যারা ক্লাব দলেই নিয়মিত না তাদের কেন নিয়মিত খেলানো হলো? ভেবে দেখুন তো হাল্ক বা লুইজ গুস্তাভোর মতো খেলোয়াড় কেন কোন বড় ক্লাবের হয়ে খেলে না? এমনকি নেইমারও তো বার্সেলোনার হয়ে আহামরি খেলেনি। আর দলটা এত সহজে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ল! পুরো টুর্নামেন্টের ৬ ম্যাচে শুধু কলম্বিয়ার সঙ্গেই ওরা ৩০ মিনিট ভালো খেলেছিল। আর ওরা কখন কী করবে সবই প্রতিপক্ষ সহজে অনুমান করে ফেলেছিল।