দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে পাওয়া অবিশ্বাস্য জয় টেস্টেও ভালো কিছুর আশাটা বাড়িয়ে দিয়েছে। মুমিনুল হক আছেন সেই আশাবাদীদের দলের একেবারে সামনের সারিতে। ডারবানে কাল সকালে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক কথা বলেছেন কেপটাউনের অনুশীলন ক্যাম্প আর তাঁর সিরিজ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে—
কেপটাউনে শুধু টেস্ট দলে থাকা ক্রিকেটাররা প্রায় দুই সপ্তাহের অনুশীলন ক্যাম্প করে এলেন। কেমন হলো সেই ক্যাম্প?
মুমিনুল হক: সত্যি বলতে কি, বিপিএলের পর লাল বলের ক্রিকেটে আমাদের একদমই অনুশীলন হয়নি। টেস্ট ম্যাচের আগে, বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে টেস্ট ম্যাচের আগে আপনি যদি সে দেশের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, তাহলে খুবই ভালো। আর ফিটনেসেরও একটা ব্যাপার থাকে। দেশটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে একটু ওপরে। এখানে এসে হুট করে খেলতে নেমে যাওয়া একটু কঠিন।
কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই তাহলে মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পের...
মুমিনুল: সেটাই...মানিয়ে নেওয়ার কাজটা ভালো হয়েছে সেখানে। এটা সামগ্রিক প্রক্রিয়ারই একটা অংশ। কেপটাউনে অনুশীলন করায় দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন, উইকেট সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া গেছে। এই দেশে বোলিং করাটা নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে একটু ভিন্ন।
নতুন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সকে কেমন দেখলেন? তাঁর সঙ্গে তো এই ক্যাম্পেই ভালোভাবে কাজ করার সুযোগ পেলেন...
মুমিনুল: আসলে আমি তো ওনার সঙ্গে আগে কখনো কাজ করিনি, এবারই প্রথম। এত অল্প সময় কাজ করে কোনো মন্তব্য করাটা কঠিন। আর সিরিজের সময় বা ম্যাচের সময় কোনো কোচই টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে বেশি কাজ করেন না।
কেপটাউনে থেকেও নিশ্চয়ই ওয়ানডে সিরিজে দৃষ্টি ছিল আপনাদের...
মুমিনুল: অবশ্যই। অনুশীলন যখন থাকত, তখন হয়তো খেলা দেখতে পারতাম না। ওই সময়টুকু বাদ দিলে তিনটি ম্যাচই দেখেছি।
কেমন লেগেছে বাংলাদেশ দলকে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জিততে দেখতে?
মুমিনুল: আমার তো সব সময়ই মনে হয়েছে, বাংলাদেশ এখানে ওয়ানডে সিরিজ জিতবে। অনেকের কাছে হয়তো এটা বাজে কথা মনে হতে পারে কিন্তু আমার আসলেই সে রকম মনে হয়েছিল। ওয়ানডে সিরিজে প্রথম ১০ ওভারটাই আমাদের জন্য সমস্যা ছিল। তামিম ভাই আর লিটনের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কেপটাউনের লোকজন বাংলাদেশের জয়টাকে কীভাবে দেখেছেন? দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজ হার নিয়ে তাঁরা কী বলেছেন আপনাদের?
মুমিনুল: আমাদের দেশে যে রকম সব মানুষ খেলা নিয়ে খোঁজখবর রাখে, উত্তেজিত থাকে, এসব দেশে সে রকম নয়। নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মধ্যেই উত্তেজনাটা বেশি, বিশেষ করে যারা খেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দু-একজন মানুষ আমাদের অনুশীলন দেখতে আসত। তারা আমাদের জিজ্ঞেস করত, ‘তোমরা বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় কিন্তু তোমরা কি ওয়ানডে খেলবে না?’ আমরা বলতাম, না, আমরা শুধু টেস্ট খেলব। তখন তারা বলত, ‘তোমরাই তাহলে আসল দল...।’ তাদের কাছে তো টেস্ট ক্রিকেটটাই আসল ক্রিকেট, হয়তো এ কারণেই। আমরা তখন হেসে বলেছি, না, আমাদের দেশে ওয়ানডেটাই বেশি জনপ্রিয়। ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর ওরা খুব প্রশংসা করেছে।
প্রশ্ন: টেস্ট সিরিজ খেলতে নামার আগে ওয়ানডে সিরিজের সাফল্য নিশ্চয়ই টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে আপনারও একটা প্রেরণা হবে...
মুমিনুল: অবশ্যই, আগেই একটা সিরিজ জিতলে সেটা দলের জন্যই ভালো। দলের পরিবেশটাই পুরো অন্য রকম হয়ে যায়। ইতিবাচক মানিসকতা চলে আসে সবার মধ্যে।
সাকিব আল হাসানকে অন্তত প্রথম টেস্টে পাচ্ছেন না। কতটা মিস করবেন তাঁকে?
মুমিনুল: মিস তো সব সময়ই করি কিন্তু এটা এখন আমার অভ্যাস হয়ে গেছে (হাসি)। উনি দলে থাকলে আমাদের জন্য দল গঠন করাটা খুব সহজ হয়। এটা ওনাকেও আমি সব সময় বলি। সাকিব ভাই একাই তো দুজন খেলোয়াড়! যেকোনো অধিনায়কের কাজই উনি সহজ করে দেন। এখন না থাকলে তো কিছু করার নেই। অস্ত্র যা আছে, সেটা নিয়েই এগিয়ে চলতে হবে।
দ্বিতীয় টেস্টে তো সাকিব খেলতেও পারেন বলে শুনছি...
মুমিনুল: এটা আমি এখনো জানি না। আসতেও পারেন, না–ও আসতে পারেন।
পেস বোলাররা ভালো করছেন এখন। টেস্টের বোলিংয়েও নিশ্চয়ই অনেকটা দায়িত্ব নেবেন তাঁরা...
মুমিনুল: আমার তো মনে হয়, আরও তিন-চার বছর আগে থেকে যদি পেস বোলাররা এ রকম ভালো খেলত, আমরা আরও অনেক বেশি ওয়ানডে জিততাম। ম্যাচ বেশির ভাগ সময় পেস বোলারই জেতায়। বড় দলগুলোর পরিসংখ্যানও তা–ই বলে। অবশ্য আমরা এখানে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছি। কারণ, আমরা দল হয়ে খেলতে পেরেছি। টেস্টেও আমাদের সবাইকে দল হয়ে খেলতে হবে। সিরিজ জয়ের লক্ষ্যটা তাহলেই সত্যি হতে পারে।
শেষ প্রশ্ন, ডারবান-পোর্ট এলিজাবেথে এর আগে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেনি। এ নিয়ে বাড়তি কোনো রোমাঞ্চ?
মুমিনুল: ও রকম কিছু নয় আসলে। ডারবান, পোর্ট এলিজাবেথ সম্পর্কে তো শুধু শুনেছিই। না দেখে শুধু শোনা কথার ওপর তো আর কিছু বলা যায় না। রোমাঞ্চিত আসলে ওয়ানডে সিরিজটা জেতায়। টেস্টে ভালো খেলা এখন আরও বেশি করে সম্ভব মনে হচ্ছে। সবার প্রত্যাশা বেড়ে গেছে, আমার নিজেরও বেড়েছে।