সবকিছুরই উত্তর দিলেন মাশরাফি

মাশরাফি বিন মুর্তজা
মাশরাফি বিন মুর্তজা

এমনিতেই বাংলাদেশ যা খেলেছে, তাতে সবারই বাহবা পাচ্ছে। এমন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থাতেও মাথা তুলে লড়াই করার জন্য পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে সবাই। কিন্তু বাংলাদেশ যে বড় দল হয়ে উঠছে তার বড় প্রমাণ হয়তো এখানেও, ‘মাথা তুলে লড়াই’তেও এখন শতভাগ তৃপ্তি খোঁজা হয় না। এমনকি প্রতিপক্ষ যদি অস্ট্রেলিয়াও হয়, তবু হারের পর নিজেদের আয়নায় গিয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ‘জিততেও পারত’র সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল বলেই হয়তো ছোটখাটো ব্যাপারগুলোও পোড়াল। এ নিয়ে সমর্থকদের মনেও কিছু প্রশ্ন আছে। সৌম্য কেন ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। রান বাড়িয়ে নেওয়ার চাপ যখন তৈরি হলো, মাত্রই দলে আসা শুভাগত কেন এত ওপরে খেললেন, অন্য কেউ কেন নয়? ফিল্ডিংটাও তো আগের মতো হচ্ছে না...সব প্রশ্নেরই উত্তর আছে মাশরাফির কাছে।
সৌম্যের ব্যাপারে অধিনায়ক বললেন, ‘আসলে এ রকম হয়ই। কখনো কখনো এ রকম কঠিন সময় যায়। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে রানও করতে হবে এ রকম তাড়া সব সময় থাকে। ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের ঝুঁকি নিয়ে খেলতে হয়। একদিন রান করলে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। আশা করছি ও আবারও রানে ফিরবে। আসলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটাও এ রকম।’

বাংলাদেশের বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে ১৪-১৭—এই কয়েকটি ওভার। এ সময় যেন রানই উঠছে না। দলে নাসির থাকলে শেষের ওভারগুলোতে বাংলাদেশ বেশি রান পেত। নাসির ইদানীং বলও করছিলেন দারুণ। গতকালও তাঁর অভাব অনুভূত হলো। মাশরাফি বললেন, ‘নাসির অবশ্যই আমাদের পরিকল্পনায় আছে, সব সময় থাকবে। শেষ পর্যন্ত ওকে একাদশের ভারসাম্যের কারণে অনেক সময়ই সুযোগ দেওয়া হয় না। আশা করি ও সামনে সুযোগ পেলে ভালো খেলবে।’
মাশরাফি জানালেন, শুভাগতকে একটু ওপরে ব্যাটিং করতে পাঠানো হয়েছিল মেরে খেলার জন্যই। পরিকল্পনা ছিল, শুভাগত দ্রুত আউট হয়ে ফিরলে পরে সেই ধাক্কা সামলে নিতে পারবেন মুশফিক। আর রান রেট বাড়িয়ে নিতে মাহমুদউল্লাহর ফর্মের ওপরও আস্থা রেখেছিল দল। বাজিটা কিছুটা কাজে লেগেছে, কিছুটা লাগেনি। মাশরাফি মনে করেন, স্কোরবোর্ডে আরও কিছুটা রান হলে, মাঠে ছোটখাটো ভুলগুলো না করলে এই ম্যাচটা হতে পারত অন্য রকম, ‘ছোট ছোট ভুলের কারণে হয়তোবা অনেক কিছু করা সম্ভব হয়নি। যদি ওগুলো না হলে ম্যাচটা অন্য দিকেও যেতে পারত। তবে এখনো আমি মনে করি, যেভাবে খেলেছি সেটা থেকে আমরা সামনের ম্যাচে ভালো কিছু নিয়ে যেতে পারি।’
ম্যাচ জিততে ভাগ্যকেও পাশে লাগে। ফিফটি-ফিফটি সুযোগগুলো যেতে হয় নিজেদের পক্ষে। আর এদিন তো ভাগ্য শুরু থেকেই যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ম্যাচের দিন সকালে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। মাশরাফি বললেনও, ‘তামিমকে না পাওয়াটা আমাদের জন্য ছিল বিরাট ক্ষতি। এমনিতেই দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দুজন খেলোয়াড় আমাদের সঙ্গে নেই। এর ওপর দুর্ঘটনাক্রমে আজ (গতকাল) সকাল থেকেই তামিমের শরীর খারাপ। এটা আমাদের জন্য বড় ধাক্কা।’
খেলোয়াড়দের বেশির ভাগ সময় মনমরা লেগেছে। মনে হয়েছে যেন বাইরের চাপে ভেঙে পড়েছে সবাই। মাশরাফি জানালেন, ‘আমাদের চেষ্টা ছিল ওগুলো মাঠের বাইরে রেখেই খেলতে নামা। যতটুকু পেরেছি... আসলে কারও মনের ওপর জোর করা তো কঠিন।’
তবু এই ম্যাচে প্রাপ্তি কম নেই মাশরাফির চোখে, ‘ইতিবাচক যে জিনিসগুলো হয়েছে, রিয়াদ ফর্মে আছে। ধারাবাহিকভাবে ভালো করেছে। সাকিব বোলিংয়ে ভালো করেছে। ব্যাটিংয়েও ভালো করেছে। মুশফিকও অনেক দিন পর হাত খুলে ব্যাটিং করল। সিনিয়র ক্রিকেটাররা দায়িত্ব নিয়ে খেলেছে। এটা আমাদের সামনের ম্যাচে কাজে লাগবে।’
আগামীকালই সেই সামনের ম্যাচ। প্রতিপক্ষ ভারত।