শেষ ম্যাচটা জিতেছে বটে, তবে বাংলাদেশ থেকে হতাশা নিয়েই ফিরছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটা ২-১ ব্যবধানে হেরেছে। এখন দেশে ফেরার আগে আবার কথা শুনতে হচ্ছে পুরোনো একটা ঝামেলা নিয়ে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের আগে থেকেই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের (এসএলসি) খেলোয়াড়দের বেতন নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। এসএলসি পারফরম্যান্সভিত্তিক একটা চুক্তি প্রস্তাব করেছে খেলোয়াড়দের, কিন্তু এতে বেতন-ভাতা কমে গেছে বলে দাবি ক্রিকেটারদের। সিনিয়র ক্রিকেটারদের কয়েকজন চুক্তি সই না করে ফিরিয়ে দিয়েছেন, এদিকে এসএলসি ক্রিকেটারদের আগামী ৩ জুন পর্যন্ত তারিখ ঠিক করে দিয়েছে চুক্তিতে সই করানোর জন্য।
এই ঝামেলা যখন চলছে, তখন খেলোয়াড়দের সমালোচনায় ধুয়ে দিয়েছেন ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী লঙ্কান কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান অরবিন্দ ডি সিলভা। খেলোয়াড়দের মাঠে আরও ইতিবাচক মানসিকতা দেখাতে বলছেন ডি সিলভা। চুক্তি নিয়ে গাঁইগুঁই করার চেয়ে ম্যাচ জেতার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে বলেছেন।
চুক্তির শ্রেণিভেদের ক্ষেত্রে পারফরম্যান্স, ফিটনেস, অবদানকে কীভাবে বিবেচনা করা হবে, সেটি এসএলসি তাঁদের কাছ থেকে কেন গোপন রেখেছে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিকেটাররা।
লঙ্কান বোর্ডের ক্রিকেট কমিটির প্রধান ডি সিলভা। শোনা যায়, পারফরম্যান্সভিত্তিক এই চুক্তির ধারণা তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। জাতীয় দল ও ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্স, ফিটনেস, দলে অবদান...কয়েকটি দিকের ভিত্তিতে এখানে ক্রিকেটারদের চুক্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পারফরম্যান্সভিত্তিক বোনাসও আছে। যেমন র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দলের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ জিতলে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার দেওয়া হবে দলকে, ওয়ানডে সিরিজ জিতলে ৭৫ হাজার ডলার।
কিন্তু ক্রিকেটারদের দাবি, এই চুক্তিতে তাঁদের বেতন কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে সিনিয়র অনেক ক্রিকেটারের বেতন কমে যাচ্ছে। কারণ, তাঁদের অনেকেরই আগের পারফরম্যান্স বিবেচনায় তিন সংস্করণের দলে রাখা হয়নি। পাশাপাশি চুক্তির শ্রেণিভেদের ক্ষেত্রে পারফরম্যান্স, ফিটনেস, অবদানকে কীভাবে বিবেচনা করা হবে, সেটি এসএলসি তাঁদের কাছ থেকে কেন গোপন রেখেছে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিকেটাররা। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, দিমুথ করুনারত্নের মতো অনেকে সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনেকে চুক্তি সই না করে সেটি ফিরিয়েও দিয়েছেন।
এ নিয়েই প্রশ্ন অরবিন্দ ডি সিলভার। খেলোয়াড়েরা চুক্তি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া ‘অন্যায্য’ দাবি করে ডি সিলভার কথা, ‘আমাদের ক্রিকেটাররা যে বলেছে, তারা এই স্কিমের সঙ্গে একমত নয়, এটা খুবই অন্যায্য। এ নিয়ে অভিযোগ করে যাওয়ার চেয়ে এখন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে মাঠে নেমে ইতিবাচক ক্রিকেটার খেলা, দেশের হয়ে ম্যাচ জিততে শুরু করা। আর ওরা ইতিবাচক ক্রিকেট খেললে আমাদেরও ওদের আরও বেশি সুবিধা দিতে উৎসাহ থাকবে, যেমনটা এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলো করে।’
গত সপ্তাহে এসএলসি জানিয়েছিল, ২৪ জন ক্রিকেটারকে চারটি ভিন্ন শ্রেণিতে চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। চুক্তিতে সই করার জন্য তাঁদের ৩ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এই ২৪ জনের মধ্যে শুধু ৬ জন আছেন ক্যাটাগরি ‘এ’-তে, এই শ্রেণিতে বেতন ৭০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে প্রায় ১ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত। ব্যাটসম্যান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ডলার কামাই করবেন। ‘এ’ শ্রেণিতে থাকা বাকি ৪ জনের বেতন ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার মার্কিন ডলারের মধ্যে।
টেস্ট অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নের নেতৃত্বে দীনেশ চান্ডিমাল, অ্যাঞ্জেল ম্যাথুসসহ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার চুক্তিতে সই করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ক্রিকেট কমিটির প্রধানের দায়িত্বে থাকা ডি সিলভার মতে, এই চুক্তি বরং ক্রিকেটারদের বেশি অর্থের জোগান দেবে, ‘খেলোয়াড়দের কাছে উপস্থাপনের আগে এই বিষয়গুলো বিশদভাবে আলোচনা করেছি আমরা। আগে খেলোয়াড়েরা যা পেত, দলের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে তার চেয়ে এখন ৩০০ শতাংশ বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবে তারা।’
সেই সুবিধা পেতে কী কী করতে হবে, তা-ও বিশদভাবে জানিয়ে দিলেন ডি সিলভা, ‘পুরো দল হিসেবেই সে জন্য কাজ করতে হবে। ওরা যদি একটা টেস্ট সিরিজ জেতে, সে ক্ষেত্রে ওদের আমরা ১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার দেব, যেটা আগে ছিল ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। সীমিত ওভার (ওয়ানডে) জিতলে ওদের আমরা দেব ৭৫ হাজার ডলার, যেখানে এখন ওরা পায় ২৫ হাজার ডলার। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের জন্যও একটা ভাগ রেখেছি, যেখানে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ডলার পাওয়ার কথা ওদের। আগে এখানে (টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলে) ওরা কিছুই পেত না।’