শেষ হোক নিষ্ঠুরতম মাস

>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস-আক্রান্ত অনিশ্চিত এই সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। এক অণুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো
করোনার সংক্রমণ শেষের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন গলফার সিদ্দিকুর। ফাইল ছবি
করোনার সংক্রমণ শেষের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন গলফার সিদ্দিকুর। ফাইল ছবি

কেন যেন বারবার টি এস এলিয়টের কবিতার লাইনটা মনে পড়ছে, ‘এপ্রিল ইজ দ্য ক্রুয়েলেস্ট মান্থ...।’ এপ্রিল মাসের প্রথম দিনই বাবাকে হারিয়েছি। করোনাভাইরাসে মারা যাননি বাবা। বয়স হয়েছিল, বার্ধক্যে মারা গেছেন। এমনিতেই এপ্রিলের প্রথম দিনে এত বড় শোক, তার ওপর করোনাভাইরাসের কারণে এই মাসটিকে জীবনের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম মাস বলে মনে হচ্ছে। চারদিকে মৃত্যুর মিছিল।

গত ৫ মার্চ নিউজিল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় খেলা শেষ করে দেশে ফিরেছি। তখন করোনাভাইরাসের প্রভাব বেশি ছিল চীনে। দেশে আসার পরপরই আমি এবং আমার স্ত্রী হোম কোয়ারেন্টিনে ঢুকে যাই। তখন থেকেই খবর পাচ্ছিলাম একের পর এক খেলা স্থগিত, না হয় বাতিল হচ্ছে। বিশেষ অনুশীলনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল ১২ মার্চ। সেখান থেকে কানাডায় গিয়ে আমার মনস্তাত্ত্বিক কোচ আলী খানের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু তত দিনে যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন শুরু হয়ে গেছে। উনি আমাকে বললেন পরিস্থিতি দেখতে। এরপর দেখি সারা পৃথিবীই লকডাউন! ভাগ্য ভালো শেষ পর্যন্ত যেতে পারিনি। তত দিনে বিশ্বে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে।

খেলছি না বলে বসে নেই। গলফ কোর্সে অনুশীলন করতে না পারলেও ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। বাসাতেই অনেক কাজ করতে পারি। নিয়মিত অনুশীলন করছিলাম। বাবা মারা যাওয়ার পর ১০-১২ দিন বন্ধ ছিল অনুশীলন। এরপর আবার শুরু করেছি। এখন যে অনুশীলন করছি তা ইনডোরেই সম্ভব। কিন্তু এর আগে ইনডোরে এই অনুশীলন বেশি করার সুযোগ মিলত না। কারণ, তখন তো ঠিকমতো বাসায় থাকতামই না।

এখন হাতে অবসর অনেক। টেলিভিশনে পিজিএ ট্যুরের খেলাগুলো দেখি। স্বপ্ন দেখি একদিন পিজিএ ট্যুরে খেলব। ররি ম্যাকইলরয়, থমাস জাস্টিনরা খেলছেন সেখানে। আমি সাধারণত জেতার মুহূর্তগুলোই দেখি। ওদের ব্যতিক্রমী শটস দেখি। টিভিতে খবর কম দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু তার পরও দেখা হয়ে যায়। গলফের পাশাপাশি ফুটবল খেলা দেখতাম। কিন্তু এখন তো কোনো ম্যাচই হচ্ছে না।

আমি সিনেমা দেখতে ভালোবাসি। বাংলা নাটকও দেখি। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর একটা সিনেমা দেখতেই হবে। বেশি দেখি অনুপ্রেরণামূলক ও হাসির সিনেমা। হঠাৎ করেই লম্বা ছুটি পেয়ে গেলাম। তাই পরিবারকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার স্ত্রী অরণি আমার সঙ্গে অনেক সফরেই গেছে। তার পরও পরস্পরকে সেভাবে সময় দিতে পারি না। যখন বের হই, তখন লক্ষ্য থাকে কখন গন্তব্যে পৌঁছাব। হোটেলে পৌঁছেই টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি। ভালো খেললে এক রকম, আর খারাপ খেললে আরেক রকম সময় পার করি। কিন্তু দাম্পত্য জীবনের মুহূর্তগুলো ঠিকঠাক মেলানো যায় না তখন। এখন পরিবারকে সময় দিতে পারছি।

খেলোয়াড়দের জীবনে খারাপ ফর্মের পরই আসে ভালো ফর্ম। আমি সেভাবেই দেখছি এই পরিস্থিতিটাকে। আমি আশাবাদী, করোনাভাইরাস থেকে একদিন মুক্তি পাব আমরা। ফিটনেসের সঙ্গে, প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলার মাঠে সব সময় লড়ছি। এই কঠিন পরিস্থিতিতে যদি সবাই সবাইকে সাহায্য করতে পারি, তাহলেই আমরা দুরূহ সময়টাকে জয় করতে পারব।