বেন স্টোকস অনুমিত নাম। তবে কদিন আগেই মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় অনির্দিষ্টকালের বিরতি নিয়েছিলেন এ অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ডের হয়ে তিন সংস্করণেই খেলেন বলে আছে ফিটনেসের ব্যাপারও। আঙুলের চোট দীর্ঘদিন ভুগিয়েছে, আপাতত মাঠের বাইরে হাঁটুর চোটে। স্টোকস না হলে ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিসেবে জো রুটের উত্তরসূরি হবেন কে? অ্যাশেজের পর বাদ পড়া স্টুয়ার্ট ব্রড? অ্যাশেজের পর বাদ পড়া জস বাটলার? অ্যাশেজের পর বাদ পড়া কিন্তু কাউন্টিতে সফল অধিনায়ক ররি বার্নস? ২০১৮ সালে সর্বশেষ টেস্ট খেলা কাউন্টি ক্রিকেটের আরেক সফল অধিনায়ক জেমস ভিন্স?
স্টোকস ছাড়া দলে জায়গা মোটামুটি নিশ্চিত জনি বেয়ারস্টোর। তবে অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে সেভাবে দেখা হয়নি কখনো। ইংল্যান্ড অবশ্য ভাবতে পারে মঈন আলীর কথাও। তবে সেক্ষেত্রে ‘শর্ত’টা হচ্ছে—অবসর ভেঙে ফিরিয়ে আনতে হবে এ অলরাউন্ডারকে।
সময়টা ইংল্যান্ড ক্রিকেটের জন্য কেমন গোলমেলে, তাতে ওপরের প্রশ্নগুলোই খানিকটা ইঙ্গিত দেয়। তবে ইংল্যান্ডকে শুধু টেস্ট দলের অধিনায়ক নয়, খুঁজতে হবে শীর্ষ পর্যায়ে আরও কয়েকটি পদের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে। প্রধান কোচ, ছেলেদের ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিলুপ্ত করে দেওয়া প্রধান নির্বাচক—গুরুত্বের দিক দিয়ে তালিকার কোনোটিই পিছিয়ে থাকার মতো নয়।
রুটের অধিনায়কত্ব ছাড়ার বিবৃতিতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শুধু ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রধান নির্বাহী টম হ্যারিসন। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান কোচের বিবৃতিও থাকে। তবে আপাতত এসব পদে স্থায়ীভাবে যে নেই কেউই!
অ্যাশেজে ভরাডুবির পরই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সাবেক স্পিনার অ্যাশলি জাইলসকে। অন্তবর্তীকালিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসকে। স্ট্রাউসের সময়েই সাদা বলে বিপ্লব ঘটিয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রীর মৃত্যুর পর পরিবারকে সময় দেওয়ার দিকে মনযোগটা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছে স্ট্রাউসের, ফলে পূর্ণমেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন না, সেটি জানিয়ে দিয়েছেন আগেই।
এ পদে সম্ভাব্য হিসেবে আলোচনায় ছিল সারের ক্রিকেট পরিচালক অ্যালেক স্টুয়ার্ট, নিউজিল্যান্ডের সাবেক কোচ মাইক হেসন, সাবেক প্রধান নির্বাচক এড স্মিথের নাম। তবে তাঁদের কেউই শেষ পর্যন্ত আগ্রহী হননি। দৌড়ে থাকা ডারহামের ক্রিকেট পরিচালক ও সাবেক অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার মার্কাস নর্থও আপাতত এ পদের দিকে ছুটছেন না পারিবারিক কারণে। টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসিবির পরবর্তী ক্রিকেট পরিচালক হচ্ছেন কেন্টের সাবেক অধিনায়ক ও এখনকার ধারাভাষ্যকার রব কি। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে এ ব্যাপারে আসতে পারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তির অন্যতম কাজ হবে প্রধান কোচ হিসেবে কাউকে বাছাই করা। অ্যাশেজের পর ছাঁটাই করা হয় ক্রিস সিলভারউডকে। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করেন বেশ কিছুদিন ধরেই সহকারি কোচের দায়িত্বে থাকা সাবেক অধিনায়ক পল কলিংউড। এ পদে সম্ভাব্য হিসেবে আছে অস্ট্রেলিয়ার কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করা জাস্টিন ল্যাঙ্গারের নাম। গত মাসে আকস্মিক প্রয়াত কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন এ ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন, সেটিও জানা গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড সীমিত ওভার ও দীর্ঘ সংস্করণের জন্য বেছে নিতে পারে দুইজন ভিন্ন কোচকেও।
ইংল্যান্ড দলের জন্য স্বীকৃত প্রধান নির্বাচক নেই এড স্মিথ ছাঁটাই হওয়ার পর থেকেই। নির্বাচক জেমস টেলর, প্রধান কোচের সঙ্গে অধিনায়ক—নির্বাচক প্যানেলের কাঠামো ছিল এমন। তবে স্বীকৃত একজন প্রধান নির্বাচকের অনুপস্থিতির অভাবটাও মাঝে মাঝেই টের পেয়েছে তারা।
সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের অবস্থা ভজকট, সেটি বলাই যায়। ঠাসা সূচি অবশ্য পিছু ছাড়বে না তাদের। আপাতত তাদের গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হবে আগামী জুনে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্ট দিয়ে। এ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের সঙ্গে একটিসহ মোট সাতটি টেস্ট খেলার কথা তাদের। এরপর তাদের শীতে আছে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড সফর, যেখানে হবে আরও পাঁচটি টেস্ট।
এর বাইরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের চাপ তো আছেই। একাধিক সংস্করণে খেলা ক্রিকেটারদের ব্যস্ত থাকতে হবে বেশ কয়েকটি সিরিজ নিয়ে। এ বছর আছে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। এমনিতে এউইন মরগানের ফর্মটাও সুবিধার নয়, তবে রুটের মতো এখনোই চলে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়নি তাঁর। আপাতত মরগানের ওপরই সীমিত ওভারে আস্থা ইংল্যান্ডের।
কিন্তু ইংল্যান্ড ক্রিকেটের যে অবস্থা, তাতে মরগান চলে গেলে তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরি নিয়ে ভাবার সময় কই তাদের!