তৃতীয় উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন জো রুট ও ওলি পোপ
তৃতীয় উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন জো রুট ও ওলি পোপ

লিচের দশের পর রুট-পোপে ম্লান নিউজিল্যান্ড

দ্বিতীয় স্লিপে থাকা টিম সাউদি ও উইকেটকিপার টম ব্লান্ডেল মাথা তুলে ঘুরে তাকালেন বলটি কোথায় গেল দেখতে। প্রথম স্লিপে থাকা ড্যারিল মিচেল সেটির প্রয়োজন বোধ করলেন না, যেন তিনি জানেনই, বলটির ভাগ্যে কী আছে। হাতটা মুখের কাছে এনে একটু কাষ্ঠ হাসি দিয়ে বোলার নিল ওয়াগনার কিছু একটা বলছিলেন, যেটি শুনেই হয়তো হাসছিলেন জো রুট। ওই ওভারে ফুললেংথে বল করে যাচ্ছিলেন ওয়াগনার, উদ্দেশ্য রুটকে ড্রাইভের প্রলোভনে ফেলা। রুট এরপর খেললেন ওই শটটা—অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলটিকে রিভার্স স্কুপ করে উড়িয়ে পাঠালেন সীমানার বাইরে।

এ সিরিজে রুটের এমন শট নতুন নয়, ট্রেন্ট ব্রিজেই টিম সাউদিকে অমন রিভার্স স্কুপে ছয় মেরেছিলেন তিনি। এ সিরিজে রুটরা এমন কিছু বারবারই দেখাচ্ছেন, বেন স্টোকস আর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যুগে নতুন চেহারা নিচ্ছে ইংল্যান্ডও। তারই সর্বশেষ সংযোজন হেডিংলি টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে রুটের ওই শট আর ইংল্যান্ডের ব্যাটিং। যেখানে ২৯৫ রান তাড়ায় চতুর্থ দিন শেষে ২ উইকেটে ১৮৩ রান তুলে ফেলেছে তাঁরা। ওলি পোপ সিরিজে নিজের দ্বিতীয় শতক থেকে ১৯ রান দূরে, খেলেছেন ১০৫ বল। জো রুট অপরাজিত ৮০ বলে ৫৫ রান করে। দুজনের জুটিতে ১৬৩ বলে উঠেছে ১৩২ রান। টানা তৃতীয় ম্যাচে রান তাড়া করে জিতে নিউজিল্যান্ডকে ধবলধোলাই করতে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন আর ১১৩ রান।

ট্রেন্ট ব্রিজের মতো হেডিংলিতেও পঞ্চম দিনে বিনা পয়সায় খেলা দেখতে পারবেন দর্শকেরা, ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব সে ঘোষণা দিয়েছে। রুট-পোপের ব্যাটিং বলছে, শেষ দিন খুব বেশিক্ষণ হয়তো খেলা দেখার সুযোগ না-ও পেতে পারেন হেডিংলির দর্শকেরা। তবে বিনোদনের যে কমতি হবে না, সেটির মোটামুটি নিশ্চয়তা দেওয়াই যায়। এ সিরিজে ইংল্যান্ড তো কম বিনোদন দিচ্ছে না! নিউজিল্যান্ডের জন্য অবশ্য শেষ এক দফা লড়াইয়ের সুযোগ, যেটি বারবারই টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা করেছে এ সিরিজে।

আরেকটি শতকের অপেক্ষায় ওলি পোপ

দিনের শেষে এসে সহজ মনে হলেও রান তাড়ায় ইংল্যান্ডের শুরুটা হয়েছিল গোলমেলে, জ্যাক ক্রলির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে রান-আউট হয়ে ফেরেন অ্যালেক্স লিস। ইতিবাচক শুরুর পর ৩৩ বলে ২৫ রান করে মাইকেল ব্রেসওয়েলের বলে ক্যাচ তোলেন জ্যাক ক্রলিও। পরের গল্পটা অবশ্য রুট ও পোপের। মুখোমুখি প্রথম বলেই ব্রেসওয়েলকে রিভার্স সুইপ করে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন রুট। ইনিংসজুড়েই এ শটের কমতি ছিল না। পোপের নিয়ন্ত্রণ অবশ্য খানিকটা হলেও বেশি ছিল রুটের চেয়ে, এখন পর্যন্ত মেরেছেন ১২টি চার। ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছেন দুজন।

চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনটা অবশ্য ইংল্যান্ডের জন্য শুরু হয়েছিল হতাশায়। এ সিরিজে ইংল্যান্ড বোলারদের সবচেয়ে বড় দুই প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা ড্যারিল মিচেল ও টম ব্লান্ডেল সেশনটি কাটিয়ে দেন অবিচ্ছিন্ন থেকেই। দুজন মিলে ওই সময় যোগ করেন ৮৬ রান। ইংল্যান্ড অবশ্য প্রায় পেয়ে গিয়েছিল মিচেলের উইকেট, জ্যাক লিচের বলে এলবিডব্লু হয়েছিলেন তিনি। তবে সে দফা রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মিচেল, বল যেত স্টাম্পের ওপর দিয়ে।

ক্যারিয়ারে প্রথম বার ১০ উইকেট নিয়েছেন জ্যাক লিচ

দ্বিতীয় নতুন বলেও ইংল্যান্ডের ভাগ্য ফেরেনি দ্রুতই, এবার রিভিউ বাঁচিয়ে দেয় ব্লান্ডেলকে, ম্যাথু পটসের বলে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল এলবিডব্লু। তবে সে ওভারেই ব্রেকথ্রু এনে দেন পটস। এবার মিচেলকে এলবিডব্লু দেন আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবোরো। অফ স্টাম্পের দিকে বেশ খানিকটা সরে গিয়ে আড়াআড়ি খেলতে গিয়েছিলেন মিচেল, রিভিউ তাঁকে বাঁচাতে পারেনি সে দফা।

তবে এর আগেই ব্লান্ডেলের সঙ্গে মিচেলের জুটিতে ওঠে ১১৩ রান। ফলে সিরিজে দুজনের ৬টি জুটিতে উঠল ৭২৪ রান। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডের জন্য যেটি রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটি ছিল মার্টিন ক্রো ও অ্যান্ড্রু জোনসের, ১৯৯০-৯১ মৌসুমে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুজন তুলেছিলেন ৫৫২ রান। মিচেল এ দিন ফেরেন ৫৬ রান করে, স্বপ্নের মতো কাটানো সিরিজে ব্যক্তিগত রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৩ বা এর কম ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে তাঁর ১০৭.৬০ গড়ে ৬৭২ রানই সর্বোচ্চ, এর আগে যেটি ছিল ৫৩৫ রানের। ভারতের বিপক্ষে ২ ম্যাচ সিরিজেই অত রান তোলা ব্যাটসম্যানের নাম? ব্রেন্ডন ম্যাককালাম!

মিচেল ফেরার পর নিউজিল্যান্ডকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বটা নেন ব্লান্ডেল। তবে অন্য প্রান্তে সঙ্গীদের জ্যাক লিচের কবলে পড়া দেখেছেন তিনি। তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েন মাইকেল ব্রেসওয়েল, টিম সাউদি হন বোল্ড। নিল ওয়াগনারের উইকেটটি অবশ্য অদ্ভুতভাবেই পান লিচ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ টেস্ট থেকে ছিটকে যাওয়া বেন ফোকসের বদলে উইকেটকিপিং করতে নামা স্যাম বিলিংসের দুই হাঁটুর ফাঁকে আটকে যায় ক্যাচটি। ট্রেন্ট বোল্টকে অবশ্য ‘স্বাভাবিক’ভাবেই বোল্ড করেন লিচ, তাতেই ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মতো ম্যাচে দশ উইকেট হয়ে যায় এ বাঁহাতির।