ফুটবলপাগল যত শহর

লন্ডনের ফুটবল প্রেম, রোমের দ্বৈরথ ও মাদ্রিদের রাজত্ব

ফুটবল উন্মাদনায় লন্ডনবাসীকে টেক্কা দেওয়া কঠিন। ছবি: রয়টার্স
ফুটবল উন্মাদনায় লন্ডনবাসীকে টেক্কা দেওয়া কঠিন। ছবি: রয়টার্স
>বৈশ্বিক খেলা ফুটবল। বিশ্বের সকল মানুষকে একসূত্রে গাঁথার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা আছে খেলাটার। যুগ যুগ ধরে তাই খেলা নিয়ে কত উন্মাদনা, কত ভালোবাসা, কত আবেগের ছড়াছড়ি! নিছক খেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে ফুটবল এখন বিভিন্ন শহর বা অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্বেরও অন্যতম মাপকাঠি। ফুটবলপাগল এসব শহর বা অঞ্চলের মানুষদের উন্মাদনাই খেলাটার আভিজাত্যে চড়ায় নিত্যনতুন রং। এমনই কিছু ঐতিহ্যবাহী ফুটবলীয় শহর নিয়ে প্রথম আলোর এই ধারাবাহিক।

ফুটবলকে নিজেদের জীবনযাত্রার এক অংশ করে নিয়েছে যেন ইউরোপীয়রা। মহাদেশটায় এমন কিছু শহর আছে, যার মোট স্টেডিয়াম সংখ্যা বিশ্বের অনেক দেশের চাইতেও বেশি। বিশ্বমানের খেলার স্টাইলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিজেদের ফুটবল-সংস্কৃতির সফল ও কার্যকরী প্রচার-প্রচারণা। আর তার সঙ্গে ফুটবলপ্রেমী মানুষদের উন্মাদনা তো রয়েছেই। নিছক খেলাই নয়, ফুটবল এখন যেকোনো দেশ, অঞ্চল বা শহরের শ্রেষ্ঠত্বেরও অন্যতম মাপকাঠি। ফুটবলপাগল এই শহরগুলোই খেলাটার আধিপত্যে নতুন মাত্রা যোগ করে প্রতিনিয়ত। আর এ দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে মূলত ইংল্যান্ড, ইতালি আর স্পেন। ইউরোপের এমনই কিছু শহরের গল্প থাকছে প্রথম পর্বে- 

লন্ডন, ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ডের মধ্যে কোন শহরটা ফুটবলের দিক দিয়ে সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে এগিয়ে? প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই একবাক্যে লন্ডনের নাম বলবেন। চলতি মৌসুমে ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে লন্ডন থেকেই শুধু পাঁচটি ক্লাব খেলেছে। আরও বেশ কয়েকটি ক্লাব নিয়মিত শীর্ষ লিগে আসা যাওয়া করে। চেলসির সঙ্গে আর্সেনাল যখন লন্ডন ডার্বিতে মুখোমুখি হয়, আর্সেনাল যখন উত্তর লন্ডনের শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষার লড়াইয়ে মাঠে নামে টটেনহামের সঙ্গে, লন্ডনবাসীদের চোখ সেঁটে থাকে টিভি স্ক্রিনে। আর থাকবে না-ই বা কেন? জয়-হারের সঙ্গে যে যুক্ত আছে নিজেদের মর্যাদাও! ওদিকে মিলওয়াল প্রিমিয়ার লিগে খেলে না বলে রক্ষা, তাহলে ওয়েস্ট হ্যামের সঙ্গে তাঁদের শত্রুতা তো প্রায়ই সহিংস সংঘর্ষে রূপ নেয়। ঘরোয়া ফুটবলে সাফল্যের দিক দিয়ে আর্সেনাল বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে আছে অন্যান্য ক্লাবগুলোর চেয়ে। কিন্তু মহাদেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিবেচনা করলে আবার চেলসি সবার চেয়ে এগিয়ে এ শহরে।

উল্লেখযোগ্য ক্লাব: চেলসি, আর্সেনাল, টটেনহাম হটস্পার, ফুলহাম, ক্রিস্টাল প্যালেস, ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড, কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স, চার্লটন অ্যাথলেটিক, ব্রেন্টফোর্ড, উইম্বলডন, মিলওয়াল

শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, জন টেরি, জিয়ানফ্রাঙ্কো জোলা, দিদিয়ের দ্রগবা, পিটার চেক, ববি ট্যাম্বলিং, পিটার অসগুড, প্যাট নেভিন, রবার্তো দি মাত্তেও (চেলসি)
টনি অ্যাডামস, থিয়েরি অঁরি, ডেনিস বার্গক্যাম্প, ইয়ান রাইট, প্যাট্রিক ভিয়েরা, লিয়াম ব্র্যাডি, রবার্ট পিরেস, সল ক্যাম্পবেল, রে পার্লার (আর্সেনাল)
ডেভিড জিনোলা, ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান, ড্যারেন অ্যান্ডারটন, পল গ্যাসকোয়েন, টেডি শেরিংহাম, সল ক্যাম্পবেল, ক্রিস ওয়াডল, গ্যারি লিনেকার (টটেনহাম)
ববি রবসন, গর্ডন ডেভিস, জনি হেইনেস, ক্লিন্ট ডেম্পসি, মার্ক শোয়ার্জার, ড্যানি মারফি (ফুলহাম)
জিওফ থমাস, উইলফ্রায়েড জাহা, অ্যান্ডি জনসন, জুলিয়ান স্পেরোনি (ক্রিস্টাল প্যালেস)
ববি মুর, স্কট পার্কার, জিওফ হার্স্ট, পাওলো ডি ক্যানিও, মার্ক নোবেল (ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড)

উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
চেলসি—ইংলিশ লিগ (৬), চ্যাম্পিয়নস লিগ (১), এফএ কাপ (৮), লিগ কাপ (৫), কমিউনিটি শিল্ড (৪), দ্বিতীয় বিভাগ (২), উয়েফা কাপ (২), উয়েফা সুপার কাপ (১), কাপ উইনার্স কাপ (২)
আর্সেনাল—ইংলিশ লিগ (১৩), এফএ কাপ (১৩), লিগ কাপ (২), কমিউনিটি শিল্ড (১৫), কাপ উইনার্স কাপ (১), সেন্টেনারি কাপ (১)
টটেনহাম হটস্পার—ইংলিশ লিগ (২), এফএ কাপ (৮), লিগ কাপ (৪), কমিউনিটি শিল্ড (৭), কাপ উইনার্স কাপ (১), উয়েফা কাপ (২), দ্বিতীয় বিভাগ (২)
ফুলহাম—উয়েফা ইন্টারটোটো কাপ (১)
ক্রিস্টাল প্যালেস—দ্বিতীয় বিভাগ (৩)
ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড—এফ এ কাপ (৩), কমিউনিটি শিল্ড (১), দ্বিতীয় বিভাগ (২)

ম্যানচেস্টার, ইংল্যান্ড
কয়েক বছর আগেও ম্যানচেস্টারের চার প্রতিনিধি ছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। এখন আর সে দিন নেই। শীর্ষ লিগে শহরের পতাকা ওড়ানোর দায়িত্ব তাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর ম্যানচেস্টার সিটির কাঁধেই। নতুন মালিক পেয়ে ভোজবাজির মতো ভাগ্য বদলে যাওয়া সিটির উড়নচণ্ডী স্বভাব দেখে ইউনাইটেডের কিংবদন্তি ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন একবার সিটিকে 'কোলাহলকারী প্রতিবেশী' নামে ডেকেছিলেন। সেই থেকে শুরু। দুই ক্লাবের শত্রুতা যেন এর পর থেকেই নতুন রূপ নিয়েছে। ফার্গুসনের ইউনাইটেড ছাড়ার পর ইউনাইটেডের পতনের সঙ্গে সিটির উত্থানকাল মিলেছে বেশ ভালোভাবে। বর্তমান সময়ে সাফল্যের দিক দিয়ে ইউনাইটেডের চেয়ে সিটি বহুগুণে এগিয়ে থাকলেও ফুটবল তো শুধু বর্তমান ফর্ম নিয়েই হয় না, এখানে দাম আছে ঐতিহ্যেরও। আর সে দিক থেকেই শুধু ম্যানচেস্টার নয়, বরং ইংল্যান্ডেরই সফলতম দুই ক্লাবের একটি ইউনাইটেড। সিটির সার্জিও আগুয়েরোর শেষ মূহুর্তের গোলে ইউনাইটেডের লিগ শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া, পরের বছরেই সিটিকে দূরে ঠেলে রবিন ফন পার্সির ইউনাইটেডে গিয়ে লিগ জেতাতে সাহায্য করা, ইউনাইটেড থেকে কার্লোস তেভেজের হুট করে সিটিতে যাওয়া, তারপর সিটির শহরের প্রবেশমুখে তেভেজের ছবি সংবলিত 'ম্যানচেস্টারে স্বাগতম' বিলবোর্ড বানানো, ইউনাইটডকে ৬-১ গোলে হারানো ম্যাচে বালোতেল্লির 'কেন সবসময় আমি' গেঞ্জি দেখিয়ে উদযাপন করা, বেতনবৃদ্ধির খায়েশ মেটানোর জন্য ওয়েইন রুনির ইউনাইটেড থেকে সিটিতে যাওয়ার 'ভয়' দেখানো, আবার সেই রুনির দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল কিকে সিটির পরাজয়-গত এক যুগে এই দুই ক্লাব শত্রুতার নতুন নতুন অধ্যায় রচনা করছে প্রতিনিয়ত।

উল্লেখযোগ্য ক্লাব: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, উইগান অ্যাথলেটিক, বোল্টন ওয়ান্ডারার্স, রচডেল, ওল্ডহাম অ্যাথলেটিক

শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: জর্জ বেস্ট, রায়ান গিগস, ওয়েইন রুনি, ববি চার্লটন, পিটার স্মাইকেল, এরিক ক্যান্টোনা, ডেভিড বেকহাম, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, রিও ফার্ডিনান্ড, রয় কিন (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
বিল মেরেডিথ, এরিক ব্রুক, সার্জিও আগুয়েরো, ভিনসেন্ট কম্পানি, ইয়ায়া তুরে, ডেভিড সিলভা, ফার্নান্দিনহো, রিচার্ড ডান (ম্যানচেস্টার সিটি)
হ্যারি লিওন, ইয়ান গিলিব্র্যান্ড, নাইজেল অ্যাডকিন্স, রবার্তো মার্তিনেজ, এমারসন বয়েস (উইগান অ্যাথলেটিক)
ন্যাট লফটহাউজ, জুসি জাসকেলাইলেন, জে জে ওকোচা, ইয়ুরি ডিউরকায়েফ (বোল্টন ওয়ান্ডারার্স)
উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড—ইংলিশ লিগ (২০), চ্যাম্পিয়নস লিগ (৩), এফএ কাপ (১২), কমিউনিটি শিল্ড (২১), লিগ কাপ (৫), কাপ উইনার্স কাপ (১), উয়েফা সুপার কাপ (১), ইউরোপা লিগ (১), ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ (১), ক্লাব বিশ্বকাপ (১), দ্বিতীয় বিভাগ (২)
ম্যানচেস্টার সিটি—ইংলিশ লিগ (৬), এফএ কাপ (৬), লিগ কাপ (৭), কমিউনিটি শিল্ড (৬), কাপ উইনার্স কাপ (১), দ্বিতীয় বিভাগ (৭)
উইগান অ্যাথলেটিক—এফএ কাপ (১)
বোল্টন ওয়ান্ডারার্স—এফএ কাপ (৪), লিগ কাপ (২), কমিউনিটি শিল্ড (১), দ্বিতীয় বিভাগ (৩)
ওল্ডহাম অ্যাথলেটিক—দ্বিতীয় বিভাগ (১)

লিভারপুল, ইংল্যান্ড
লন্ডন বা ম্যানচেস্টারের মতো লিভারপুল শহরের ক্লাব সংখ্যা অত বেশি না হলেও, যে দুটি ক্লাব রয়েছে শীর্ষ লিগে, যুগ যুগ ধরে ইংলিশ ফুটবলের শোভাবর্ধন করে চলেছে। লিভারপুলকে তো তর্কযোগ্যভাবে ইংল্যান্ডেরই শ্রেষ্ঠতম ক্লাব মানা হয়। ওদিকে এভারটন নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মতো অত সফল না হলেও নিজ ঐতিহ্যে ভাস্বর। স্টিভেন জেরার্ড, ডানকান ফার্গুসন, জেমি ক্যারাঘার, লিওন ওসমান, রবি ফাওলারের মতো শহরের ছেলেরা বড় হয়েছে এই উত্তেজনার আঁচ গায়ে লাগিয়ে। দুই দলের 'মার্সিসাইড ডার্বি' মাঠে গড়ালে এখনও শহর হয়ে যায় দুইভাগ-লিভারপুলের লাল আর এভারটনের নীলে। ইয়ান রাশের চার গোল, স্টিভেন জেরার্ডের হ্যাটট্রিক, গ্যারি কাহিলের দুর্দান্ত হেড, প্রতিপক্ষের সমালোচনার জবাবে গোল করার পর ফাওলারের কোকেন নেওয়ার ভঙ্গী করা বা সুয়ারেজের ডাইভ দেওয়ার ভঙ্গী করা, ৯৩ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে ম্যাকালিস্টারের গোল-যুগ যুগ ধরে শহরটাকে উজ্জীবিত করেছে এমন মুহুর্তগুলো।

উল্লেখযোগ্য ক্লাব: লিভারপুল, এভারটন, ট্রানমেয়ার রোভার্স

শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: স্টিভেন জেরার্ড, কেনি ডালগ্লিশ, ইয়ান রাশ, জর্ডান হেন্ডারসন, ফিল নিল, রে ক্লেমেন্স, জন বার্নস, গ্রায়েম স্যুনেস, রবি ফাওলার (লিভারপুল)
, অ্যালান বল, নেভিল সাউথহল, রে উইলসন, টিম ক্যাহিল, লিওন ওসমান, লেটন বেইনেস (এভারটন)
রে ম্যাথিয়াস, হ্যারল্ড বেল, জন অলড্রিজ (ট্রানমেয়ার রোভার্স)
উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
লিভারপুল—ইংলিশ লিগ (১৯), চ্যাম্পিয়নস লিগ (৬), উয়েফা কাপ (৩), উয়েফা সুপার কাপ (৪), ক্লাব বিশ্বকাপ (১), এফএ কাপ (৭), লিগ কাপ (৮), কমিউনিটি শিল্ড (১৫), লিগ সুপার কাপ (১), দ্বিতীয় বিভাগ (৪)
এভারটন—ইংলিশ লিগ (৯), এফএ কাপ (৫), কমিউনিটি শিল্ড (৯), কাপ উইনার্স কাপ (১), দ্বিতীয় বিভাগ (১)

গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড
এ শহরের দুটি ক্লাব মিলে ভাগাভাগি করে নিয়েছে ১০৫টি লিগ শিরোপা, ৭২ কাপ শিরোপা ও ৪৬ লিগ কাপ। বাকিরা ধারেকাছেও নেই। বুঝে নিন, তাহলে এই দুই দলের সমর্থকদের উত্তেজনার রেশ কেমন হবে! সেল্টিক ও রেঞ্জার্সের 'ওল্ড ফার্ম' ডার্বি ফুটবলীয় গণ্ডি পেরিয়ে স্পর্শ করেছে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক বিশ্বাসের বিভিন্ন স্তর।

উল্লেখযোগ্য ক্লাব: সেল্টিক, রেঞ্জার্স, প্যাট্রিক থিসল

শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: কেনি ডালগ্লিশ, ববি লেনক্স, হেনরিক লারসন, জিমি ম্যাকগ্রোরি (সেল্টিক)
ব্যারি ফার্গুসন, জন গ্রেগ, ব্রায়ান লাউড্রপ, অ্যালি ম্যাকোয়েস্ট, টেরি বুচার (রেঞ্জার্স)
উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
সেল্টিক—স্কটিশ লিগ (৫১), চ্যাম্পিয়নস লিগ (১), স্কটিশ কাপ (৩৯), লিগ কাপ (১৯)
রেঞ্জার্স—স্কটিশ লিগ (৫৪), কাপ উইনার্স কাপ (১), স্কটিশ কাপ (৩৩), লিগ কাপ (২৭), দ্বিতীয় বিভাগ (১)

রোম, ইতালি
ডার্বির উত্তাপ কত প্রকার ও কী কী, রোম ডার্বি না দেখলে বোঝা যাবে না। উত্তর ইতালির ক্লাবগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব খর্ব করার লক্ষ্যে একনায়ক বেনিতো মুসোলিনি রোমের সবগুলো ক্লাব একত্র করে নতুন এক ক্লাব সৃষ্টি করেছিলেন—এএস রোমা। আরেক নেতা জর্জিও ভাক্কারোর হস্তক্ষেপে লাৎসিও সেই একত্রীকরণে যোগ না দেওয়ায় শুরু হয় শত্রুতা। ফুটবলের কারণে ইতালিতে সর্বপ্রথম প্রাণহানিও হয়েছে এই শত্রুতার কারণে। দাঙ্গা-ফ্যাসাদ, এই দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে সাধারণ বিষয়। রোমের লাৎসিও সমর্থনপুষ্ট এলাকায় রোমার জার্সি গায়ে, কিংবা রোমা সমর্থনপুষ্ট এলাকায় লাৎসিওর জার্সি পরে ঘুরে বেড়ানো এখনও অসমসাহসিকতার পরিচায়ক।

স্তাদিও ওলিম্পিকোই রোমানদের ফুটবল উৎসবের কেন্দ্র। ছবি: ফিফা



উল্লেখযোগ্য ক্লাব: এএস রোমা, লাৎসিও

শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: ফ্রান্সেসকো টট্টি, ড্যানিয়েলে ডি রসি, কার্লো আনচেলত্তি, ব্রুনো কন্তি, কাফু, রুডি ফলার, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা, আলসিদেস ঘিগিয়া, অলদাইর (রোমা)
আলেসসান্দ্রো নেস্তা, জিউসেপ্পে ফাভালি, জর্জো শিনাগ্লিয়া, পাভেল নেদভেদ, সিমোনে ইনজাঘি, মার্সেলো সালাস, মিরোস্লাভ ক্লোসা (লাৎসিও)

উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
এএস রোমা—ইতালিয়ান লিগ (৩), কোপা ইতালিয়া (৯), সুপারকোপা (২), দ্বিতীয় বিভাগ (১)
লাৎসিও—ইতালিয়ান লিগ (২), কোপা ইতালিয়া (৭), সুপারকোপা (৫), দ্বিতীয় বিভাগ (১)

মিলান, ইতালি
ছবিটা ফুটবলীয় রূপকথারই অংশ হয়ে গেছে যেন। কোন ছবি? ওই যে, এসি মিলানের পর্তুগিজ মিডফিল্ডার রুই কস্তার কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে দর্শকদের হাঙ্গামা, আতশবাজি দেখছেন ইতালির ডিফেন্ডার মার্কো মাতেরাজ্জি। সেবার দর্শকদের উৎপাতে খেলাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই চিরায়ত অর্থ-বৈভবের পার্থক্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই শত্রুতায় মিলান ছিল শহরের দরিদ্র শ্রমিকশ্রেণীর ক্লাব, খেলা দেখতে সান সিরোয় যেত হয় হেঁটে না হয় গণপরিবহনে করে। ইন্টারের 'বড়লোক' সমর্থকদের অতশত বালাই ছিল না। তাঁরা খেলা দেখতে আসত ব্যক্তিগত বাহনে চেপে। সেই যে শত্রুতা শুরু হল, এখনও মিলান ডার্বি হলে রক্ত টগবগিয়ে ওঠে মিলানবাসীদের।

উল্লেখযোগ্য ক্লাব: এসি মিলান, ইন্টার মিলান

শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: পাওলো মালদিনি, ফ্রাঙ্কো বারেসি, রুড খুলিত, মার্কো ফন বাস্তেন, কাকা, ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড, আলেসসান্দ্রো নেস্তা, ফিলিপ্পে ইনজাঘি (এসি মিলান)
জিউসেপ্পে বার্গোমি, জিয়াচিন্তো ফাচেত্তি, ওয়েসলি স্নাইডার, দিয়েগো মিলিতো, লুসিও, এস্তেবান ক্যাম্বিয়াসো, হাভিয়ের জানেত্তি, রোনালদো (ইন্টার মিলান)

উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
এসি মিলান—ইতালিয়ান লিগ (১৮), কোপা ইতালিয়া (৫), সুপারকোপা (৭), দ্বিতীয় বিভাগ (২), চ্যাম্পিয়নস লিগ (৭), কাপ উইনার্স কাপ (২), উয়েফা সুপার কাপ (৫), ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ (৩), ক্লাব বিশ্বকাপ (১)
ইন্টার মিলান—ইতালিয়ান লিগ (১৮), কোপা ইতালিয়া (৭), সুপারকোপা (৫), চ্যাম্পিয়নস লিগ (৩), উয়েফা কাপ (৩), ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ (২), ক্লাব বিশ্বকাপ (১)

মাদ্রিদ, স্পেন
রিয়াল মাদ্রিদের মূল শত্রুতা বার্সেলোনার সঙ্গে হলেও নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো খুব বেশি পিছিয়ে নেই। গত এক দশকে ডিয়েগো সিমিওনের ছোঁয়ায় নিজেদের নতুন করে খুঁজে পেয়েছে ক্লাবটা, ফলে রিয়ালের সঙ্গে নেতিয়ে পড়া শত্রুতাও যেন তাজা হয়ে উঠেছে। দুই বছরের ব্যবধানে এই দুই নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হয়ে বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে তাঁদের শত্রুতার ঝাঁজ। সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা রিয়ালের শহর এটা, এক অর্থে তাই মাদ্রিদ আসলে ইউরোপিয়ান ফুটবলের রাজার শহরও।

উল্লেখযোগ্য ক্লাব: রিয়াল মাদ্রিদ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, গেতাফে, লেগানেস, রায়ো ভায়েকানো

শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, জিনেদিন জিদান, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ফেরেঙ্ক পুসকাস, রাউল গঞ্জালেস, ইকার ক্যাসিয়াস, রোনালদো (রিয়াল মাদ্রিদ)
লুইস আরাগোনেস, ফার্নান্দো তোরেস, ডিয়েগো গোডিন, ডিয়েগো সিমিওনে, আদেলার্দো রদ্রিগেজ, হুয়ানফ্রান, আতোয়াঁ গ্রিজমান (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ)
মানু দে মরাল, রবার্তো সলদাদো, পেদ্রো লিওন, রবার্তো আবোনদানজিয়েরি (গেতাফে)
উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
রিয়াল মাদ্রিদ—স্প্যানিশ লিগ (৩৪), কোপা দেল রে (১৯), স্প্যানিশ সুপার কাপ (১১), চ্যাম্পিয়নস লিগ (১৩), উয়েফা কাপ (২), উয়েফা সুপার কাপ (৪), ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ (৩), ক্লাব বিশ্বকাপ (৪)
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ—স্প্যানিশ লিগ (১০), কোপা দেল রে (১০), স্প্যানিশ সুপার কাপ (২), উয়েফা ইউরোপা লিগ (৩), উয়েফা সুপার কাপ (৩), ইন্টারটোটো কাপ (১), কাপ উইনার্স কাপ (১), ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ (১), দ্বিতীয় বিভাগ (১)

এই প্লাজা দে দিবেলেসেই উদ্‌যাপন করতে যান রিয়াল সমর্থকেরা। ছবি: টুইটার



বার্সেলোনা, স্পেন
সাফল্যের তুলনা করতে গেলে বার্সেলোনার ধারকাছেও নেই এসপানিওল। কিন্তু তাতে কি? শহরপ্রতিদ্বন্দ্বী তো শহরপ্রতিদ্বন্দ্বীই। দুদলের 'ডার্বি'তে জেরার্ড পিকে, লিওনেল মেসিদের নিয়মিত উল্টোপাল্টা স্লোগান, ব্যানার দিয়ে তাতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এসপানিওল ভক্তরা। মরিসিও পচেত্তিনোর মতো কোচ বার্সেলোনার দায়িত্ব নিতে চান না শুধু এই শত্রুতার কারণেই। পচেত্তিনো যে এসপানিওলের সাবেক কোচ ও খেলোয়াড়!

উল্লেখযোগ্য ক্লাব: বার্সেলোনা, এসপানিওল

শহরে উল্লেখযোগ্য যারা খেলে গেছেন: লিওনেল মেসি, জাভি হার্নান্দেজ, পেপ গার্দিওলা, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, কার্লেস পুয়োল, ইয়োহান ক্রুইফ, লুইস সুয়ারেজ, রোনাল্ড কোম্যান (বার্সেলোনা)
রিকার্ডো জামোরা, মরিসিও পচেত্তিনো, রাউল তামুদো, দানি জার্কে, ইভান দে লা পিনিয়া (এসপানিওল)
উল্লেখযোগ্য শিরোপা:
বার্সেলোনা—স্প্যানিশ লিগ (২৬), কোপা দেল রে (৩০), স্প্যানিশ সুপার কাপ (১৩), চ্যাম্পিয়নস লিগ (৫), উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ (৪), উয়েফা সুপার কাপ (৫), ক্লাব বিশ্বকাপ (৪)
এসপানিওল—কোপা দেল রে (৪), দ্বিতীয় বিভাগ (১)