একটা পেনাল্টি। প্রতিপক্ষ গোলকিপারের একটা ভুল। আর সবশেষে সবচেয়ে সুন্দর গোলটা। চোখধাঁধানো ফ্রিকিক! আজ কী দেখাবেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো?
বিশ্বকাপের শুরুটা তাঁর এর চেয়ে ভালো আর হতে পারত না! হ্যাঁ, স্পেনের সঙ্গে গত শুক্রবারের সেই ম্যাচটা পর্তুগাল জিতে গেলে সর্বাঙ্গসুন্দর হতো তাঁর জন্য। কিন্তু রোনালদো নিজে যা করেছেন, নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপে এটি তাঁর সেরা পারফরম্যান্স! শুধু এই বিশ্বকাপ কেন, বিশ্বকাপের ইতিহাসেই পার্থক্য গড়ে দেওয়া ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের তালিকা করলে তাতে রোনালদোর এই ম্যাচটা আসবেই। ম্যাচটার স্কোরলাইন পর্তুগাল আর স্পেনের নাম দেখাবে, কিন্তু আদতে তো সেটি স্পেন ৩ : ৩ রোনালদো!
এবারের বিশ্বকাপ প্রথম হ্যাটট্রিকটা দেখেছে সেদিন তাঁর পায়ে, তাতে একটা অদ্ভুত মিলও হয়েছে। রোনালদোর ক্যারিয়ারের ৫১তম এই হ্যাটট্রিক বিশ্বকাপ ইতিহাসেও ৫১তম। আরও কত শত রেকর্ডও গড়েছেন, কিছু ছুঁয়েছেন। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা আটটি বড় টুর্নামেন্টে (ইউরো ও বিশ্বকাপ) গোল করার রেকর্ড গড়েছেন, হয়েছেন চারটি বিশ্বকাপে গোল করা চতুর্থ খেলোয়াড়।
আজ সামনে যখন ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৪১তম মরক্কো, রোনালদো না–জানি কী করবেন!
কিছু করাটা পর্তুগালের খুব দরকারও। স্পেনের বিপক্ষে ওই ম্যাচের আগেই দলের উইঙ্গার বার্নার্দো সিলভার ওই কথাটা আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া যাক, ‘ওকে (রোনালদো) দিয়েই আমাদের দলকে চেনে সবাই। আশা করি ও সেরা ফর্মে থাকবে। কারণ, ও ভালো খেললেই পর্তুগাল ভালো কিছু করার আশা করতে পারে।’ স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচে সেটা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। প্রথম দুই গোলে পর্তুগালকে দুবার এগিয়ে দিয়েছেন, আর সবচেয়ে সুন্দর ওই তৃতীয় গোলটা এসেছে দলের সবচেয়ে প্রয়োজনের সময়ে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে, পর্তুগাল যখন পিছিয়ে ৩-২ গোলে।
মরক্কো ধারে-ভারে পর্তুগালের আশপাশেও নয়। কিন্তু এই বিশ্বকাপে তথাকথিত ছোট দলগুলো যেভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাতে কোনো ম্যাচকে আগে থেকে সহজ বলতে যাওয়াটা ঝুঁকি হয়ে যায়। তবে আজ মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচটা যখন শেষ ষোলোয় পর্তুগালের এক পা নিয়ে যাওয়ার, রোনালদো কি আর নির্বিকার বসে থাকবেন!
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে চতুর্থ হলেও এই পর্তুগালে রোনালদোকে বাদ দিলে বড় কোনো তারকা নেই। সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ তারকা বেশ কজনই আছেন, তবু পর্তুগাল বড়জোর এই বিশ্বকাপে চমক দেখানোর মতো দল। যে পরিচয় তাদের ছিল দুই বছর আগে ইউরোতেও। সেবার সত্যিকারের চমক দেখিয়েই নিজেদের ইতিহাসে প্রথম বড় শিরোপাটা জিতেছিল। একজন রোনালদো ছিলেন বলেই তো!
৩৩ বছর বয়সী পর্তুগিজ যুবরাজের এটি সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স বলে, বিশ্বকাপটা রাঙানোর চোয়ালবাঁধা প্রত্যয় নিয়েই এসেছেন রোনালদো। এভাবেই ভাবুন না! কাল সব কটি দলের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে, তাতে সেরা খেলোয়াড়ের নামটি কী হতে পারে? রোনালদোই তো! মেসি ফ্লপ, নেইমার রং ছড়িয়েছেন শুধু চুলেই। সময়ের তিন সেরা তারকার মধ্যে আলোকিত শুধু পর্তুগিজ অধিনায়ক।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইরানের কাছে শেষ মুহূর্তে আত্মঘাতী গোলে হেরে যাওয়া মরক্কোর দিক থেকে আজ অবশ্য একটু লড়াইয়ের ঝাঁজ আসছে। আফ্রিকা অঞ্চলে নিজেদের বাছাইপর্বের শেষ রাউন্ডের ছয় ম্যাচে একটা গোলও খায়নি ২০ বছর পর বিশ্বকাপে ফেরা মরক্কো।
সেই আত্মবিশ্বাস, পাশাপাশি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আইসল্যান্ডের লড়াকু পারফরম্যান্সের উদাহরণ টেনে মরক্কোর মিডফিল্ডার ফয়সাল ফজর আওড়াচ্ছেন নীতিকথা। কখনো বলছেন, ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’, তো পর মুহূর্তেই বলছেন, ‘ওদেরও দুই পা, দুই হাত আছে, ওরাও আমাদের মতো মানুষ!’
সত্যিই তাই? রোনালদো যে নিজেকে প্রায়ই মানবের অবয়বে অতিমানব বলে মনে করান!
আন্তর্জাতিক ফুটবলে পর্তুগাল–মরক্কো একবারই মুখোমুখি হয়েছে। একমাত্র সেই ম্যাচটি ১৯৮৬ বিশ্বকাপে। গ্রুপপর্বের ওই ম্যাচে মরক্কো জিতেছিল ৩-১ গোলে |
আজ একটি গোল পেলেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোলসংখ্যায় ফেরেঙ্ক পুসকাসকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে যাবেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সামনে থাকবেন শুধুই আলী দাইয়ি |
আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোল | ||
খেলোয়াড় | দল | ম্যাচ/গোল |
আলী দাইয়ি | ইরান | ১৪৯/১০৯ |
ফেরেঙ্ক পুসকাস | হাঙ্গেরি/স্পেন | ৮৯/৮৪ |
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো | পর্তুগাল | ১৫১/৮৪ |