রোডসের প্রত্যাশা মেটাবেন তাসকিন

>

চোটে জর্জর তাসকিন আহমেদ। অথচ কত সম্ভাবনা নিয়েই না আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটা করেছিলেন তাসকিন আহমেদ। তবে আশা করেন, চোটমুক্তির পর ঠিকই কোচ স্টিভ রোডসের প্রত্যাশা মেটাতে পারবেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে ফিরে কোচ স্টিভ রোডস বলেছেন, লম্বা আর দ্রুতগতির পেসার চাই তাঁর। কোচের চাওয়ার সঙ্গে মেলালে সবার আগে মনে আসে যাঁর নাম, তিনি তাসকিন আহমেদ। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই পেসার নজর কেড়েছিলেন দ্রুতগতির বোলিংয়ের জন্যই। তো কোচের এই চাহিদা পূরণে কতটুকু আত্মবিশ্বাসী তাসকিন? কাল প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু দেখেন আমি তো চোট থেকেই বের হতে পারছি না। চোট না থাকলে, ফিট থাকলে আমি কোচের চাওয়া পূরণ করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’

কোচের প্রত্যাশা মেটাতে উদগ্রীব তাসকিন আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো

এক দিনের ক্রিকেটে তাসকিন আহমেদের অভিষেকটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। রবিন উথাপ্পা, চেতেশ্বর পূজারা, আম্বাতি রাইডুসহ ৫ ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছিলেন গতির ঝড় তুলে। তাঁর ওই ২৮ রানে ৫ উইকেট নেওয়াতেই ১০৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ভারতের ইনিংস। পরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের গ্রাফে উত্থান-পতন ছিল। আর ছিল অপেক্ষা-কবে সাদা পোশাকের অভিজাত ক্রিকেটে গতির তুফান তুলে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ঘাম ছুটিয়ে দেবেন তাসকিন আহমেদ! সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অভিষেকের প্রায় তিন বছর পর অনেক প্রত্যাশাকে সঙ্গী করে টেস্টে অভিষেকটা হলো বটে, কিন্তু সাদা পোশাকে ফিকেই হয়ে রইলেন তাসকিন। অভিষেকের বছর ২০১৭ সালে পাঁচ টেস্ট খেলে নেন মাত্র ৭টি উইকেট, এখন পর্যন্ত টেস্ট ওই কয়টাই। এ বছর তো প্রায় শুরু থেকেই ভুগছেন চোট-আঘাতে। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটা খেলেছেন গত মার্চে নিদাহাস ট্রফিতে। এরপর থেকেই চোটের সঙ্গে লড়াই। প্রথমে পিঠের চোট, এরপর হাতে ফাটল অনুশীলনে। সে চোটের জায়গাতেই আবার আঘাত আয়ারল্যান্ডে। কেন বারবার এমন হয়? হাসতে হাসতে তাসকিন বললেন, ‘কারও বদদোয়া আছে কি না, কে জানে! কারও কাছে কোনো দোষ করলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’

চোট কাটিয়েই ‘এ’ দলের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডে গিয়েছিলেন তাসকিন। নিজেকে তিনি কতটা ফিরে পাচ্ছেন, চোটের দেখভাল কেমন করছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দেখতে চেয়েছিল সেসবই। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সিরিজের প্রথম তিনটি ৫০ ওভারের ম্যাচে খেলতে পারলেন না তাসকিন। পারবেন কী করে! শরীরে বয়ে বেড়ানো চোটগুলো যে নেটেও ঠিকভাবে বোলিং করতে দেয়নি তাঁকে!

চতুর্থ ওয়ানডেতে নেমে ৫ ওভার বল করলেন। কিন্তু এরপরই আবার আঘাত। সেই চোটকে সঙ্গী করেই দেশে ফিরেছেন গত বৃহস্পতিবার। কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশিস চৌধুরীকে হাতের অবস্থা দেখাতে। তাসকিনকে এ সময় বেশ হতাশই দেখাচ্ছিল। হতাশা মিশে থাকল তাঁর কথায়ও, ‘এটা খুবই দুঃখজনক, সাড়ে পাঁচ-ছয় মাস পর খেলতে নামলাম। এরপর আবার হাতের চোটে পড়তে হলো। কিছু করার নেই আসলে। সামনে অনেক খেলা। যদি হাত ঠিক হয়, তাহলে সুযোগের অপেক্ষায় থাকব। সত্যি বলতে আমি ভালো ছন্দে ছিলাম। বোলিং কোচ চম্পকা অনেক সন্তুষ্ট ছিলেন আমার বোলিংয়ে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও নিজের বোলিংয়ে খুশি ছিলাম।’

হতাশার উল্টো পিঠে অনুপ্রেরণার গল্পও শোনা গেল তাসকিনের কণ্ঠে। সাত-আট দিন পর সেলাই কাটা হবে। এ মাসের শেষে এশিয়া কাপের জন্য ক্যাম্প শুরুর আগেই মাঠে নেমে পড়তে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি। আপাতত তাই চোট-আঘাত ভুলে তাকাতে চান সামনে, ‘এসব জীবনের অংশ, আর আহামরি কিছু তো হয়ে যায়নি। বয়স আছে সামনে ভালো করার। তবে বলতে চাই না সামনে আমার অনেক সময় আছে। পেস বোলার হিসেবে আমাদের প্রতিটা মাস গুরুত্বপূর্ণ, এই সময়টা চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। এক বছর ধরে চোট নিয়ে খেলে যাচ্ছি, সব মিলিয়ে সময়টা একটু খারাপ গেল।’

আয়ারল্যান্ড সফরে নিজেকে খুঁজতে গিয়ে তাসকিন ফিরেছেন একরাশ হতাশা নিয়ে, তবে বোধ হয় শূন্য হাতে নয়। ‘এ’ দলের চতুর্থ ওয়ানডেতে অধিনায়ক মুমিনুল হকের ১৮২ রানের ইনিংসটি দেখার আনন্দ অনূদিত হলো তাঁর কথায়, ‘যেদিন মুমিনুল ভাই ১৮২ রান করলেন, সেদিনের ব্যাটিং যদি দেখতেন...এত দিন তো আমরা টিভিতে রোহিত শর্মার ব্যাটিং দেখেছি। সেদিন মুমিনুল ভাইকে দেখছিলাম। এত দ্রুত রান তুলছিলেন তিনি!’

তাসকিন তো হতাশার মধ্যেও আনন্দের খোঁজ পেয়েছেন। তাঁকে পূর্ণ ছন্দে ফিরে পেলে রোডসও পেয়ে যেতে পারেন একজন লম্বা পেসার, যাঁর বলে আছে গতিও।