রোমান সানা কোথায় বসেছেন, খুঁজে বের করলেন আতহার আলী খান। এরপর বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে যেভাবে নিজের পরিচয় দিলেন সাবেক ক্রিকেটার, তাতে লাজুক হাসলেন এশিয়ান র্যাঙ্কিং আর্চারিতে সোনাজয়ী। আতহার-সানাই শুধু নন, এমন দেখা-সাক্ষাৎ হয়ে গেল ক্রীড়াঙ্গনের আরও অনেকের। ক্রীড়াঙ্গনের এ মিলনমেলা বসেছিল আজ ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে। রুপচাঁদা-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারের প্রীতি সমাবেশে এসেছিলেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সাবেক ও বর্তমান তারকা থেকে সংগঠক।
একেবারেই ঘরোয়া আয়োজনের এ প্রীতি সমাবেশে ছিল না কোনো বাহুল্য। উৎসব আর রসিকতার আমেজে ক্রীড়াবিদদের মুখ ফুটে বেরিয়ে এসেছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা। কেউ আবার এক কাঠি সরেস হয়ে গাইলেন গান। ক্রিকেট নিয়ে কেউ মনে করিয়ে দিলেন, এ খেলাটির ফেলে আসা পথ মোটেও সহজ ছিল না। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের প্রীতি ও কুশলজ্ঞাপনের কৌশলও ছিল রসোদীপ্পক কিন্তু মার্জিত। সঞ্চালক সাজু খাদেমের কুশলী পরিবেশনায় মনে রাখার মতো আলোই বিচ্ছুরিত হয়েছে ক্রীড়াঙ্গনের এই ‘চাঁদের হাট’ থেকে।
ক্রিকেটের প্রসঙ্গ উঠতে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তুলে আনলেন তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের গল্প—শৈশব-কৈশোরে বেশির ভাগ স্কুলপড়ুয়াদের যেমন থাকে আরকি! ক্রীড়াঙ্গনের ডাকসাইটে সব তারকাদের সামনে তাঁর সেই স্মৃতিচারণ অন্যরকম আনন্দই দিয়েছে সবাইকে। ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সাবেক খেলোয়াড় ক্রিকেট সংগঠক বশির আহমেদের সামনে মঞ্চে উঠে বল কুড়োনোর গল্পও ভাগ করে নিয়েছেন তিনি, ‘১৯৫৮ সনে ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে যুক্ত হই, ভালো খেলোয়াড়েরা অনুশীলন করে, আমরা বল টোকাই (কুড়োই)। আমি ১৯৬০ সনে ক্লাস নাইনে নেটে অনুশীলন, তার এক বছর পর আমি প্রথম বিভাগে খেলি। সব সময় বলতাম আমি ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সমর্থক। একমাত্র ক্লাব শুরুতে এবং শেষে।’
দেশের প্রথিতযশা ক্রীড়া সংগঠকদের সামনেই ক্লাবগুলোর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন প্রথম আলো সম্পাদক। সম্প্রতি ‘ক্যাসিনো কাণ্ড’ নিয়ে দেশের সেরা ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোর ভাবমূর্তি হুমকির মুখে। মতিউর রহমান এ নিয়ে বললেন, ‘সবশেষ ক্রীড়াঙ্গনের ঘটনায় ভিক্টোরিয়া ক্লাবও আছে। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবও আছে। এসব ক্লাবের ঘটনাগুলো দেখলে শুনলে মন খারাপ হয়ে যায়। আপনারা সবাই আছেন, ফুটবল-ক্রিকেট, ক্রীড়ার নানা ক্ষেত্রে। আমরা কীভাবে জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়গুলো নষ্ট করে ফেললাম? বিগত দিনে,এখন,আগামী দিনেও। ক্রিকেট, ফুটবল, অ্যাথলেটিকস, সবকিছু মিলিয়ে খুবই মন খারাপ। খুবই কষ্টকর। একটা ক্রীড়াজগত যদি এভাবে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে আমাদের সামনে, তরুণদের সামনে কী থাকে তখন? আমরা কি কিছু করতে পারি না? আমরা কি পরিবর্তন আনতে পারব? আমরা কি চেষ্টা করব? আমরা কি ভাবব কি না? এ প্রশ্ন আপনাদের সামনে।’
বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাইসউদ্দীন আহমেদ ফিরে গেলেন সেই সত্তরের দশকে, যখন ক্রিকেট বোর্ড শুরু করেছিল হাঁটি হাঁটি পা পা করে, ‘আমাদের অবস্থা তখন ছিল ঢাল নাই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতো! মোমবাতি জ্বালিয়ে অফিস করে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। বর্তমানে ক্রিকেট সব চাইলেই পাচ্ছে। তখন আমরা ৫০ টাকার বেশি দিতে পারতাম না ক্রিকেটারদের। বলতে গেলে নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে ক্রিকেট চালিয়েছি।’
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁদের লড়াইয়ের সেই গল্প আবার শোনালেন। সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান আশাবাদ ব্যক্ত করলেন, ক্রিকেট যতটা এগিয়েছে অন্য খেলাও এগোবে। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম প্রশংসা করলেন রুপচাঁদা-প্রথম আলো পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের। বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাকের প্রত্যাশা, যেকোনো খেলা অনেক উন্নতি করতে হলে লম্বা সময় প্রয়োজন। ক্রিকেট সেই পর্যায়ে যাবে বলে তাঁর আশা। বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বিপণন ব্যবস্থাপক ফয়সাল মাহমুদ জানালেন আয়োজন নিয়ে তাঁদের তৃপ্তির কথা।
ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের এমন কথার ফাঁকে এসআই টুটুল, দিনাত জাহান মুন্নি, কণা, ইমরান, সাব্বির গান গেয়ে মুগ্ধ করেছেন অতিথিদের। গান গেয়ে শুনিয়েছেন টেবিল টেনিসে পাঁচ বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মানস চৌধুরীও। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল প্রথম আলো সম্পাদককে হট সিটে বসিয়ে উপস্থাপক সাজু খাদেম ‘কে হতে চায় কোটি মতি’ পর্বটা! পুরো অনুষ্ঠানই ছিল ভীষণ উপভোগ্য। অতিথিদের চাওয়া, এমন অনুষ্ঠান হোক প্রতি বছর।