বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিয়েছেন কাগিসো রাবাদা
বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিয়েছেন কাগিসো রাবাদা

রাবাদার বোলিংয়ে ওয়ান্ডারার্সে মিরপুরের সেই স্মৃতি

মুমিনুল হক হয়তো একটু স্বস্তিই পাবেন।

সেঞ্চুরিয়নে দারুণ জয়ের পর জোহানেসবার্গে সিরিজ জয় নিশ্চিত করা দূরের কথা, বাংলাদেশ হেরেছে বড় ব্যবধানে। মুমিনুল ওয়ানডে দলে নেই, তবুও তাঁর ‘স্বস্তি’ পাওয়ার কথাটা বলা মূলত কাগিসো রাবাদার কারণে। জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে রাবাদার বোলিংয়েই উড়ে গেছে তামিম ইকবালের দল। তবে আইপিএলের কারণে এই ফাস্ট বোলার খেলবেন না টেস্ট সিরিজে। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল তো একটু স্বস্তি পেতেই পারেন!

বুল রিংয়ের অসম বাউন্সের উইকেটে রাবাদা হয়ে উঠেছিলেন রীতিমতো আতঙ্ক। তামিমকে ফিরিয়ে দিয়ে শুরুটা করেছিলেন লুঙ্গি এনগিডি। এরপর বলতে গেল রাবাদা একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং। ৭ ওভারের প্রথম স্পেলে সাকিব আল হাসান, লিটন দাস ও ইয়াসির আলীকে আউট করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন বাংলাদেশের ইনিংসকে। পরে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরিয়েছেন সপ্তম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ দুজনকেই। বাংলাদেশের ইনিংসটাকে তাই অনায়াসেই ‘বাংলাদেশ বনাম রাবাদা’ বলা যায়, যে লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার নিরঙ্কুশভাবে জয়ী।

প্রায় সাত বছর আগের স্মৃতিও ফিরে এসেছে রাবাদার বোলিংয়ে

প্রায় সাত বছর আগের স্মৃতিও ফিরে এসেছে তাতে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল ২০ বছর বয়সী রাবাদার। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই তামিম ইকবালকে বোল্ড করে পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট। তামিমের পরের বলেই লিটন, এর পরের বলে মাহমুদউল্লাহ—ক্যারিয়ারের প্রথম ৩ উইকেটেই হ্যাটট্রিক হয়ে গিয়েছিল রাবাদার। আগের বছর মিরপুরেই ওয়ানডে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করার প্রথম কীর্তি গড়েছিলেন বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। রাবাদা বসেছিলেন তাঁর পাশে।

সেদিন তিনি সেখানেই থামেননি। হ্যাটট্রিকের পর নিয়েছিলেন আরও ৩ উইকেট। ৮ ওভার, ৩ মেডেন, ১৬ রান, ৬ উইকেট—অভিষেকে এখনো সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ডটা রাবাদারই।

ওই ম্যাচের পর আজকের আগে রাবাদা ওয়ানডে খেলেছেন আরও ৮২টি। ছয়বার ৪ উইকেট পেলেও অভিষেকের পর ইনিংসে ৫ বা এর বেশি উইকেট এই প্রথম। ক্যারিয়ারের মাত্র দুবার ম্যাচে পাঁচ বা এর বেশি উইকেট। দুবারই প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে একটু আলাদাভাবে মনে রাখারই কথা রাবাদার।

ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে রাবাদা বললেন, ‘যখন প্রথম উইকেটটা (এনগিডির বলে তামিম) পিচের ফাটলে আঘাত করে উঠে গেল, বুঝলাম আজ কিছু একটা হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ান্ডারার্সে বাড়তি বাউন্স মিলেছে নতুন বলে, তবে বল একটু পুরোনো হলে আর তা পাওয়া যায়নি। তবে আজ অসম বাউন্স ছিল। বল পিচে গ্রিপও করছিল, আমাদের পেসাররা সেটি ভালোভাবে ব্যবহার করেছে।’

অভিষেকেই বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট পেয়েছিলেন রাবাদা

মাঝে আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের জুটিতে লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। রাবাদাকে শুরুতে টানা ৭ ওভার বোলিং করিয়েছিলেন বাভুমা, তবে দ্বিতীয় স্পেলে আনতে অপেক্ষা করেছেন ৪২তম ওভার পর্যন্ত। নিজের শেষ ওভারে বাংলাদেশের ব্যাটিং কফিনে শেষ ‘পেরেক জোড়া’ও ঠুকেছেন রাবাদা। আফিফ ও মিরাজকে ফিরিয়ে।

রাবাদার মূল অস্ত্র ছিল শর্ট বল। সেটিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার গুরুত্বটাও বুঝিয়ে বললেন ম্যাচ শেষে, ‘আপনি যতটা পারেন, সবকিছু সরল রাখার চেষ্টা করবেন। শুধু আক্রমণ করে গেলে হবে না, নিজেদের ট্যাকটিকসের ওপর ভরসা করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। সেসবের ওপর ভরসা করা ও বাস্তবায়ন করাটাই আসলে আগ্রাসন, শুধু শর্ট বোলিং করা নয়।’

দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে ফিরিয়েছেন রাবাদা

আগের ম্যাচেও যে ভালো বোলিং করেছেন, মনে করিয়ে দিলেন সেটিও, ‘আমরা সেঞ্চুরিয়নেও ভালো বোলিং করেছি, কিন্তু উইকেট পাইনি। এমন হয়ই, এটাই ক্রিকেট। আপনাকে শুধু মৌলিক ব্যাপারগুলো প্রয়োগ করার চেষ্টা করে যেতে হবে।’

এর আগে যে একবারই ৫ উইকেট, এই প্রসঙ্গ তোলায় রাবাদা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, ‘সেটা তো কখনোই ভুলব না।’

পরের ওয়ানডেতে রাবাদাকে ‘ভুলে’ বাংলাদেশ ফিরে আসতে পারবে কি না, দেখার বিষয় সেটিই। তবে তামিমের দল চাইলেই অনুপ্রেরণা নিতে পারে অতীত থেকে। রাবাদার অমন অভিষেকের পরও পরের দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত যা হয়ে আছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একমাত্র সিরিজ জয়।