শচীন টেন্ডুলকার, মিতালি রাজ ও সনাৎ জয়াসুরিয়া
শচীন টেন্ডুলকার, মিতালি রাজ ও সনাৎ জয়াসুরিয়া

যেখানে টেন্ডুলকার-জয়াসুরিয়ার চেয়েও এগিয়ে মিতালি

স্মৃতি মান্ধানার বয়স তখন তিন বছর। শেফালি বর্মা, রিচা ঘোষের জন্মই হয়নি। ১৯৯৯ সালের ২৬ জুন মিল্টন কিনসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডেতেই ১১৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন ১৬ বছর বয়সী মিতালি রাজ। মেয়েদের ওয়ানডে অভিষেকে এখনো যেটি তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। শুধু ভারত ক্রিকেটে নয়, মেয়েদের ক্রিকেটেই মিতালির ‘রাজত্ব’ চলেছে এরপর। সেটিও প্রায় ২৩ বছর ধরে!

স্মৃতির সঙ্গে মিতালি খেলেছেন ৬৮টি ম্যাচ। তাঁর ওয়ানডে অভিষেকের পর জন্ম নেওয়া শেফালির সঙ্গে খেলেছেন ১৫টি, রিচার সঙ্গে ১৪টি। মিতালি তাই পেরিয়ে গেছেন প্রজন্মের রেখাই!

মিতালি তাই পেরিয়ে গেছেন প্রজন্মের রেখাই!

গতকাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব সংস্করণ থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক মিতালি। সর্বশেষ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটিই তাই হয়ে থাকল তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। ১৯৯৯ সালের ২৬ জুন থেকে ২০২২ সালের ২৭ মার্চ—মাঝে কেটে গেছে ২২ বছর ২৭৪ দিন। শুধু মেয়েদের নয়, ছেলেদের ওয়ানডেতেও এত লম্বা ক্যারিয়ার নেই আর কারও।

মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মিতালি আছেন তিন নম্বরে। শীর্ষে থাকা নেদারল্যান্ডসের ক্যারোলিন ডি ফুর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ২৬ বছর ৩৬১ দিন লম্বা। তবে ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলেননি তিনি। এরপর আছেন চামানি সেনেভিরাত্না। ১৯৯৭ সালে শ্রীলঙ্কার অভিষেক, ২০১৮ সাল থেকে খেলছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে। এখন পর্যন্ত তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ২৪ বছর ১৫৫ দিন দীর্ঘ।

প্রায় ২৩ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন মিতালি

দীর্ঘ সময়ে ২৩২টি ওয়ানডে খেলেছেন মিতালি, মেয়েদের মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ। মিতালি ছাড়া ২০০টি মেয়েদের ওয়ানডে খেলেছেন একজনই—তাঁর সতীর্থ পেসার ঝুলন গোস্বামি। শুধু ওয়ানডে নয়, সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ (৩৩৩), সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক রানের (১০৮৬৮) রেকর্ডও মিতালির। সব মিলিয়ে ছয়টি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছেন মিতালি। এ ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে আছেন শুধু শচীন টেন্ডুলকার ও জাভেদ মিঁয়াদাদ।

ছেলেদের ওয়ানডেতে সবচেয়ে লম্বা ক্যারিয়ার টেন্ডুলকারেরই। ১৯৮৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর ৪৬৩ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথমটি খেলেছিলেন টেন্ডুলকার। সর্বশেষটি খেলেন ২০১২ সালের ১৮ মার্চ। ফলে তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ার ছিল ২২ বছর ৯১ দিনের।

ওয়ানডেতে দীর্ঘতম ক্যারিয়ারের পরের নামটি সনাৎ জয়াসুরিয়া। ১৯৮৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের ২৮ জুন পর্যন্ত ২১ বছর ১৮৪ দিন লম্বা ছিল এ শ্রীলঙ্কানের ক্যারিয়ার। এ সময়ে তিনি খেলেন ৪৪৫টি ওয়ানডে। পাকিস্তানের মিঁয়াদাদের ওয়ানডে ক্যারিয়ার এ সংস্করণের প্রায় শুরু থেকেই। ১৯৭৫ সালের ১১ জুন থেকে ১৯৯৬ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত ২৩৩টি ম্যাচ খেলেন পাকিস্তান ব্যাটসম্যান।

ছেলেদের ওয়ানডেতে সবচেয়ে লম্বা ক্যারিয়ার টেন্ডুলকারেরই

মেয়েদের টেস্টে দীর্ঘতম ক্যারিয়ারের রেকর্ডটি ভেরা বার্টের। ১৯৪৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হওয়ার পর ক্যারিয়ারে তিনটি টেস্ট খেলেন এই নিউজিল্যান্ড ব্যাটার। দ্বিতীয় টেস্টটি ১৯৪৯ সালে হলেও তৃতীয়টি খেলেন ১৯৬৯ সালে গিয়ে! অবশ্য এ তালিকায় বার্টের পরই আছেন মিতালি। ২০০২ সালের ১৪ জানুয়ারি লক্ষ্ণৌতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল তাঁর ও ঝুলনের। গত বছরের ৩ অক্টোবর ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন দুজন। ফলে দুজনেরই টেস্ট ক্যারিয়ার ১৯ বছর ২৬২ দিনের। তবে মেয়েদের টেস্ট নিয়মিত নয় বলে প্রায় দুই দশক লম্বা ক্যারিয়ারেও ১২টি করে টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা।

ছেলেদের টেস্টে দীর্ঘতম ক্যারিয়ারের রেকর্ডটি উইলফ্রেড রোডসের। ১৮৯৯ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার খেলেন ৫৮টি ম্যাচ। যদিও ১৯১৪ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে কোনো টেস্টই খেলা হয়নি তাঁর।