ভাই যখন প্রতিপক্ষ! অথবা ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই। চাইলেই একটা সিনেমার নাম হয়ে যেতে পারে এটি।
ক্রিকেটে দুই ভাই প্রতিপক্ষ, এমন ঘটনা নতুন নয় মোটেও। শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দেখা গেছে এমন। ২০০৬ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল এড জয়েসের, সে ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের ডম জয়েসেরও। নামের মিলেই বুঝে যাওয়ার কথা, দুজন সম্পর্কে ভাই।
ভাইয়ের বলে ভাই আউট—এমন ঘটনাও একেবারে দুর্লভ নয় তাই। তবে জেমি ওভারটন যা করলেন, সেটি একটু নতুনই। তাঁর বাউন্সারে আঘাত পেয়ে যে কনকাশনই হয়ে গেছে ক্রেইগ ওভারটনের। সম্পর্কে শুধু ভাই নন, দুজন একেবারে যমজই!
এ ঘটনা কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে সমারসেট ও সারের ম্যাচের। টন্টনে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। সমারসেটের প্রথম ইনিংসে নয়ে নেমেছিলেন ক্রেইগ ওভারটন। ইনিংসের ৫৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জেমির বাউন্সার গিয়ে লাগে ক্রেইগের হেলমেটে। সে সময় ২০ রানে ব্যাটিং করা ক্রেইগ এরপর সম্ভাব্য কনকাশনের শঙ্কায় মাঠই ছাড়েন ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে।
জেমি ওভারটন এদিন বেশ বিপজ্জনকই হয়ে উঠেছিলেন সমারসেট ব্যাটসম্যানদের জন্য। ভাই ক্রেইগকে ‘নকআউট’ করে দেওয়ার ঠিক পরের ওভারে আরেকটি বাউন্সারে জশ ডেভিকেও ছিটকে দেন জেমি। উঠে যেতে হয় ডেভিকেও।
ডেভির জায়গায় এরপর আবার নামেন ক্রেইগ। দলের ফিজিও ততক্ষণে খেলার জন্য ফিট ঘোষণা করেন তাঁকে। জেমি অবশ্য শর্ট বল করা বন্ধ করেননি এরপরও। মাথায় আঘাত পাওয়ার পরও খেলা চালিয়ে যান ক্রেইগ ওভারটন, জেমির বাউন্সার অবশ্য নিরাপদেই এড়াতে পেরেছেন সে দফা।
শেষ পর্যন্ত ২৯ রান করে গাস অ্যাটকিনসনের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন ক্রেইগ। ডেভি অবশ্য এরপর আর নামতে পারেননি, তাঁর কনকাশন বদলি হিসেবে এরপর নামেন কেসি আল্ড্রিজ। তবে আজ ম্যাচের দ্বিতীয় দিন সকালে আবার পরীক্ষার পর বিলম্বিত কনকাশন ধরা পড়ে ক্রেইগের। তাঁর বদলে নামানো হয়েছে মার্চেন্ট ডি ল্যাঙ্গেকে।
প্রথম ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ৩৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন জেমি ওভারটন। সঙ্গে ভাই ক্রেইগ ও ডেভিকে ‘নকআউট’ করা তো আছেই। প্রথম ইনিংসে ১৮০ রানেই গুটিয়ে গেছে সমারসেট।
এমনিতে ক্রেইগ ও জেমি—দুজনই ছোটবেলা থেকে খেলে এসেছেন একই দলে। প্রথম শ্রেণির অভিষেকের পর থেকে সমারসেটেই দুজন একসঙ্গে খেলেছেন দীর্ঘদিন। ২০২০ সালে প্রাথমিকভাবে ধারে সারের হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন ক্রেইগ, এরপর সেখানেই থেকে গেছেন। ক্রেইগ অবশ্য থেকে গেছেন সমারসেটেই।
ইংল্যান্ডের হয়ে এর মধ্যে ১২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলে ফেলেছেন ক্রেইগ ওভারটন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজের দলেও ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১১ জনের দলে জায়গা পাননি, সমারসেটের হয়ে খেলতে ইংল্যান্ড তাঁকে ছেড়েও দিয়েছে।
জেমি অবশ্য এখনো ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার অপেক্ষায়। তবে এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ভালো ফর্মেই আছেন। নিয়মিত ঘণ্টায় ৯০ মাইল গতিতে বোলিং করছেন। জফরা আর্চার, মার্ক উড, ওলি স্টোনসহ বেশ কয়েকজন পেসারের চোটে দুয়ার খুলেও যেতে পারে জেমি ওভারটনের।
অভিষেক হলে ভাইয়ের সঙ্গে খেলার স্বপ্নই দেখেন জেমি, ‘আজীবনের স্বপ্ন এটি আমাদের। আমার মনে হয়, ইংল্যান্ডের হয়ে একসঙ্গে খেলা প্রথম যমজ হব আমরা। আমাদের এবং আমাদের পরিবারের জন্য এটি দারুণ একটা ব্যাপার হবে।’
তবে এর আগে পরিবারে একটা অস্বস্তির হাওয়াই বয়ে দিলেন জেমি।