ফুল লেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা ঠেকানোর চেষ্টা করলেন মুমিনুল হক। তবে একটু দেরি হয়ে গেল বেশ। ব্যাটটা আটকে গেল প্যাডে, বলের নাগালই পেল না শেষ পর্যন্ত। এর আগে ক্রমাগত বেরিয়ে যাওয়া বল করে ক্ষেত্রটা প্রস্তুত করেছিলেন কাইল মায়ার্স, ভেতরের দিকে ঢোকা ওই বলই হয়ে গেল মুমিনুলের মৃত্যুশেল। ক্রিজে ২৮ মিনিটের নড়বড়ে অবস্থান শেষ তাতেই।
অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল প্রথম যে রান পেয়েছেন, সেটিও ব্যাটের কানায় লেগে পাওয়া চারে। এরপর একবার বেঁচে গেছেন রানআউট হতে হতে। সর্বশেষ ১০ ইনিংসে দুই অঙ্কের রান নেই, এর মধ্যে চারটিই শূন্য—পেছনের এই ইতিহাসের পরিষ্কার প্রতিচ্ছবি ছিল মুমিনুলের ব্যাটিংয়ে।
এমনিতে টেস্টে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল। ১১টি শতকেই যার প্রমাণ। তবে তাঁর ব্যাটে দীর্ঘ রান–খরা নিশ্চিতভাবেই ভোগাচ্ছে দলকে। এমন পারফরম্যান্সের পর দল থেকে বাদ পড়ার কথা ওঠাটাই স্বাভাবিক। এটিকেই একটু ভদ্রভাবে বললে কেউ প্রশ্নটা এভাবে করতে পারেন—এখন কি একটু বিরতি নেওয়ার সময় হয়েছে মুমিনুলের? অ্যান্টিগা টেস্টের পর সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্নই করা হয়েছিল অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে। এই টেস্টের আগে মুমিনুলের কাছ থেকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নেওয়া সাকিব সরাসরি মন্তব্য করতে চাইলেন না। তবে বললেন, মুমিনুল বিরতি চাইলে সেটি ‘হতে পারে’।
অধিনায়কত্বের চাপ প্রভাব ফেলছে ব্যাটিংয়ের ওপর, এমন কারণে নিজে থেকেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন মুমিনুল। সেটিও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দল ঘোষণার পর। তবে নেতৃত্বের ভার থেকে মুক্ত হওয়ার পরও মুমিনুলের ব্যাটিং সেই আগের মতো হতশ্রী।
স্বাভাবিকভাবেই তাই মুমিনুলের বিরতি নেওয়ার প্রয়োজনের প্রসঙ্গটি চলে আসে। তবে সাকিব বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সময় নিতে চান, ‘এটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল। যেটা হচ্ছে, ওর সঙ্গে সব সময় কথা হয়। আবারও কথা হবে। ও যদি মনে করে ওর ব্রেক দরকার আছে, সেটা হতে পারে। এখন আসলে একটা ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বা চিন্তা করাটা ভালো কিছু না। পরের দুই দিন আমাদের বিরতি আছে। এরপর যখন সেন্ট লুসিয়াতে অনুশীলন করব, ওই দিনই চিন্তা করব, আমাদের দলের জন্য কোনটা ভালো হতে পারে।’
এটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল। যেটা হচ্ছে, ওর সঙ্গে সব সময় কথা হয়। আবারও কথা হবে। ও যদি মনে করে ওর ব্রেক দরকার আছে, সেটা হতে পারে।সাকিব আল হাসান
শুধু মুমিনুলই তো নয়, বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটিংই তো সাম্প্রতিক সময়ে রীতিমতো ভঙ্গুর। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা সিরিজ, এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট—বাংলাদেশকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে ব্যাটিংই।
সাকিব তাই বলছেন, পরিবর্তন আনলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না, ‘খুব বেশি বদলালে যে খুব যে ভালো কিছু হবে, আপনি সেটির গ্যারান্টি দিতে পারবেন না। যেটা বললাম, একটা পরিসংখ্যানের কথা বলছিলাম, শেষ ১৩-১৪-১৫ বা এমন ইনিংসে ১০০-এর নিচে ৪ বা ৫ উইকেট হারিয়েছি (সর্বশেষ ১৬ ইনিংসে ১০০ বা এর নিচে বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়েছে ১৩ বার)। সে জায়গা থেকে চিন্তা করলে, ওখানে অনেক সমস্যা হচ্ছে।’
সমস্যা যত গভীরই হোক, অধিনায়ককে তো আশার কথা বলতেই হয়। সাকিবও যথারীতি তা বললেন, ‘সমন্বিত দলীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আসলে আমরা বের হয়ে আসতে পারি এখান থেকে। বের হয়ে আসা সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। এ জায়গায় আগেও পড়েছি, বের হয়েও এসেছি। আমার বিশ্বাস আছে, আমরা ফিরে আসতে পারব।’
সাকিবের এই আশা পূরণ হবে কি না, তা জানতে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। ২৪ জুনই তো সেন্ট লুসিয়ায় শুরু হয়ে যাচ্ছে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট।