টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও অ্যাশেজ জয়—ক্রিকেটের যেকোনো কোচের ক্যারিয়ারেই অন্যতম সাফল্য বলে বিবেচিত হওয়ার কথা এসব। অথচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে কিনা সরে যেতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে এসব জেতানোর পরপরই! দায়িত্ব ছাড়ার পর এ ব্যাপারে এত দিন ঠিক মুখ খোলেননি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক কোচ। যখন খুললেন, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে ধুয়েই দিলেন তিনি।
সাফল্য পেলেও ল্যাঙ্গারের সঙ্গে কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারের সম্পর্ক ভালো নয়, বলা হয়েছিল এমন। মাত্র ছয় মাসের জন্য চুক্তি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে, যেটিকে ‘অপমানজনক’ বলেছিলেন ল্যাঙ্গার। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব ছাড়ার পর এবার এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান রিচার্ড ফ্রয়েডেনস্টাইনের দিকে সরাসরি আঙুল তুলেছেন সাবেক এই ব্যাটসম্যান।
ল্যাঙ্গারের সঙ্গে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দর–কষাকষির ব্যাপারে তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সাবেক সতীর্থ মার্ক ওয়াহ, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, রিকি পন্টিং, স্টিভ ওয়াহ, ম্যাথু হেইডেন, প্রয়াত শেন ওয়ার্ন। ল্যাঙ্গারের সঙ্গে আচরণে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে ধুয়ে দিয়েছিলেন এ কিংবদন্তিরা।
দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঠিক পরদিন তাঁর সঙ্গে আলোচনায় ফ্রয়েডেনস্টাইন এ বিষয়ে ল্যাঙ্গারকে খোঁচা দিয়েছিলেন। পার্থে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এক অনুষ্ঠানে ল্যাঙ্গার বলেছেন, ‘প্রথম যে বিষয়টা সে আমাকে বলেছিল, “তোমার সব বন্ধু সংবাদমাধ্যমে তোমাকে নিয়ে ভালো ভালো কথা বলছে, নিশ্চয়ই দারুণ লাগে তোমার”।’
‘আমি বলেছিলাম, “অবশ্যই, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তবে বিনীতভাবে বলছি, আমার ওই বন্ধুরা অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। তারা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের কাঠামো। তারাই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট। বিশ্বজুড়েও ক্রিকেট নিয়ে কাজ করে তারা। ফলে অবশ্যই, আমি খুশি যে আমার বন্ধুরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আপনার (এমন বন্ধু) আছে কি না, জানি না”।’
যদি আপনি জানেন যে আপনার পেছনে মানুষ আছে, তাহলে জাদুকরি ঘটাতে পারবেন আপনি। আর তেমনটি না হলে আপনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বেন। নেতৃত্ব খুবই নিঃসঙ্গ হতে পারে।জাস্টিন ল্যাঙ্গার, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধান কোচ
২০১৮ সালে কেপটাউন টেস্টে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির ডামাডোলের পর অস্ট্রেলিয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ল্যাঙ্গার। তার আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ সফল ছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব কতটা চাপের হতে পারে, সে বিষয়ে ল্যাঙ্গার বলেছেন, ‘তিন-চার বছর ধরে আমি রাজনীতি, সংবাদমাধ্যম, স্পনসর—সবকিছুর দিকে মনোযোগ দিয়েছি। সবকিছু করার চেষ্টা করেছি। সবার কাছে সবকিছু হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি। এর ফলে যে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, সেটিই স্বাভাবিক। আপনার স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়বে, সেটি মানসিক স্বাস্থ্য, শারীরিক স্বাস্থ্য। আপনি সবাইকে যে খুশি রাখার চেষ্টা করছেন!’
তবে শেষ দিকে এসে কোচিং উপভোগ করছিলেন, ‘মজার ব্যাপার হলো, ১২ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে শেষ ছয় মাস সবচেয়ে উপভোগ করেছি আমি। শুধু যে সব জিতেছি তা নয়, আমার সেই জীবনীশক্তিটা ছিল, নির্দিষ্ট দিকে নিবদ্ধ ছিলাম। আমি খুশি ছিলাম। অবশ্যই, বাজে রাজনীতি বাদ দিয়ে আরকি।’
কোচিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী, ল্যাঙ্গার বলেছেন সেটিও, ‘সবচেয়ে বড় যে শিক্ষাটা পেয়েছি—আমার সামনে থেকে সবকিছু সরিয়ে দিয়েছি। হুট করেই আমার সামনে মাত্র দুটি ব্যাপার ছিল। একটা জেতা, আরেকটা আমার মানুষেরা।’
অবশ্য এমন কঠিন কাজ করতে গেলে কী দরকার পড়ে, ল্যাঙ্গার মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটিও, ‘যদি আপনি জানেন যে আপনার পেছনে মানুষ আছে, তাহলে জাদুকরি ঘটাতে পারবেন আপনি। আর তেমনটি না হলে আপনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বেন। নেতৃত্ব খুবই নিঃসঙ্গ হতে পারে। কিন্তু সমর্থন পেলে সেটি ভিন্ন ব্যাপার।’
ল্যাঙ্গারের জায়গায় সাবেক সহকারী কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ডকে দায়িত্ব দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের কোচ হতে যাচ্ছেন ল্যাঙ্গার, এমন কথাও উঠেছিল। যদিও তিনি বলছেন, ইংল্যান্ডের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ভাবেনইনি তিনি, ‘ইংলিশ ক্রিকেটের সঙ্গে কখনোই কথা হয়নি আমার। ইংল্যান্ডকে কোচিং করানোর কথা… (ভাবতেই পারি না)!’
ভবিষ্যতে কী করবেন, সেটি এখনো ঠিক করেননি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১০৫টি টেস্ট খেলা ল্যাঙ্গার, ‘আমি ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াকে ভালোবাসি। ঘরে থাকাটা ভালোবাসি। ৩১ বছর ধরে ঘরে ছিলাম না আমি।’