‘বিশ্বকাপে কে কে সোনার পদক জিততে চাও?’ শুটিং ফেডারেশনের বিশাল হলরুমে বসে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের সভাপতি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারোয়ার হাসান প্রশ্নটা করতেই একসঙ্গে হাত তুললেন ১৫ শুটার। মুহূর্তেই হলরুমজুড়ে করতালি।
২৭ মে থেকে ৭ জুন আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত হবে শুটিং বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেবেন বাংলাদেশের ১৫ শুটার। বাকুর উদ্দেশে আগামীকাল রাতে ঢাকা ছাড়বেন শুটাররা। এর আগে শুটারদের অনুপ্রেরণা দিতে আজ গুলশানের শুটিং কমপ্লেক্সে আসেন সারোয়ার হাসান। সেখানে তাঁর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে অংশ নেন শুটাররা।
আজারবাইজান যাওয়ার আগে শুটারদের অনুপ্রাণিত করতে কোনো কমতি রাখেননি সভাপতি। তিনি হাসিমুখে জানিয়ে দেন, ‘বিশ্বকাপে সোনার পদক জিততে পারলে প্রত্যেক শুটারকে দেওয়া হবে পাঁচ লাখ টাকা।’ তবে শুধু সোনার পদকের জন্যই নয়, রুপা জিতলে দুই লাখ ও ব্রোঞ্জজয়ীর জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন তিনি।
পদক জেতার পাশাপাশি কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডের স্কোরের জন্যও অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেশন। কোনো শুটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে ৬৩০ পয়েন্ট করলে পাবেন বাড়তি এক লাখ টাকা। আর পিস্তল ইভেন্টের সেট স্কোর হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৫৭৬ পয়েন্ট। ৫৭৫ পয়েন্ট টপকাতে পারলেই পিস্তলের শুটাররা পাবেন এক লাখ টাকা।
বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের শুটারদের অনুশীলনের স্কোর বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার মতো আশাজাগানিয়া নয়। রাইফেল ইভেন্টে অনুশীলনে সর্বোচ্চ ৬২৭-৬২৮ স্কোর করছেন রাব্বি হাসান। আর পিস্তলে নিয়মিত ৫৭৫ পয়েন্ট করছেন শাকিল আহমেদ।
কিন্তু বিশ্বকাপের ফাইনাল রাউন্ডে যেতে হলে ৬৩০–এর ওপরে পয়েন্ট পেতেই হবে শুটারদের। মিসরে গত মার্চে হওয়া শুটিং বিশ্বকাপে ছেলেদের রাইফেল এককে সর্বশেষ শুটার হিসেবে ফাইনালে ওঠেন রাশিয়ার ভ্লাদিমির। কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে তাঁর স্কোর ছিল ৬৩২.৭। মেয়েদের ইভেন্টে ৬৩১.২ পয়েন্ট পেয়ে ফাইনালে ওঠেন ফ্রান্সের ওশেন মুলার।
বিশ্বকাপে পদক জেতার ব্যাপারে অবশ্য কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে পারলেন না ইরানি কোচ মোহাম্মদ জায়ের রেজাই। তবে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুটারদের ফাইনালে ওঠার আশা করছেন কোচ, ‘অনেক কিছুই ঘটতে পারে বিশ্বকাপে। যদি কেউ ৬৩০ পয়েন্ট করতে পারে, তাহলে তার ফাইনালে যাওয়ার ভালো সম্ভাবনা থাকবে। আমি এই দলের কারও নাম উল্লেখ করতে চাই না। তবে যে কারোরই ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা আছে। এমনও দেখা গেছে, কোনো প্রতিযোগিতায় কেউ ৬২৭ পয়েন্ট পেয়েই ফাইনালে উঠেছে, অন্য আরেকটিতে ৬৩২ পেয়ে ফাইনালে উঠেছে। তাই আমি আশা ছাড়ছি না।’
বাংলাদেশের শুটারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলা। সাধারণত অনুশীলনে নিয়মিত যে স্কোর করেন শুটাররা, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সেটার ধারেকাছেও যেতে পারেন না।
কম টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে জানালেন জায়ের রেজাই, ‘আমাদের শুটারদের আরও বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়াটা জরুরি। কারণ, এই সমস্যা তখনই হয়, যখন শুটারদের অভিজ্ঞতা কম থাকে। এ জন্য শুটারদের বেশি বেশি টুর্নামেন্টে অবশ্যই অংশ নিতে হবে।’
গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছেন জায়ের রেজাই। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ দল অংশ নেয় ইন্দোনেশিয়ায় শুটিং গ্রাঁ প্রিতে। তাঁর অধীন মাত্র এক মাসের অনুশীলন করে বাংলাদেশ ১টি রুপা ও ৪টি ব্রোঞ্জপদক জেতে ইন্দোনেশিয়ায়।
কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ হতে পারে কোচের জন্য পরীক্ষাই। বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ তেমনটাই বললেন, ‘এই বিশ্বকাপ নতুন কোচের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। গত পাঁচ মাসে তার অধীন কতটা উন্নতি হয়েছে শুটারদের, সেটাও দেখা যাবে এবার। যদিও অনুশীলনে মুন্না (রাব্বি হাসান) ও নাতাশা (নাফিসা তাবাসসুম) যথেষ্ট ভালো স্কোর করছে। বিশ্বকাপে ওরা এই স্কোর করলে অন্তত একটা পদক আসবেই আমাদের।’
বিশ্বকাপের রাইফেল ইভেন্টে অংশ নেবেন রাব্বি হাসান, শোভন চৌধুরী, রবিউল ইসলাম, মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, তামজিদ বিন আলম, নাফিসা তাবাসসুম, মনিকা আহমেদ, সাজিদা হক, সৈয়দা আতকিয়া হাসান। পিস্তলে শাকিল আহমেদ, আব্বাস আলী, পিয়াস হোসেন, আরদিনা ফেরদৌস, আনজিলা আমজাদ ও নীলুফা ইয়াসমিন।