চুক্তি ছিল এ বছরের জুন পর্যন্ত। তবে জাস্টিন ল্যাঙ্গারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল আরও আগেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন, ঘরের মাঠে অ্যাশেজ জিতিয়েছেন, টেস্ট দলকে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে তুলেছেন গত কয়েক মাসের ব্যবধানে। কিন্তু ল্যাঙ্গারের জন্য যথেষ্ট হয়নি সেসব। পালাবদলের দিকে এগোতে চায় বলে জুনের পর ছয় মাসের সংক্ষিপ্ত মেয়াদের চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ল্যাঙ্গারকে। সে প্রস্তাব গ্রহণ না করে পদত্যাগ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ছেলেদের দলের প্রধান কোচ।
ল্যাঙ্গারের সঙ্গে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এ আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রিকি পন্টিং, মিচেল জনসন, ম্যাথু হেইডেনরা। ল্যাঙ্গারের আচরণ মাঝেমধ্যেই ‘বেশ কড়া’ বলে তাঁর সঙ্গে এখনকার বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফ কাজ করতে চান না বলেও গুঞ্জন আছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী নিক হকলিকে দেওয়া এক চিঠিতে নিজের অবস্থানটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন ল্যাঙ্গার।
দ্য অস্ট্রেলিয়ান পেয়েছে ল্যাঙ্গারের এ চিঠি। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সেটিই—
‘অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ঘরের (ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া) বাইরে আমি। গতকাল অনেক ঝড় গেছে। ফিরে এলেও কোয়ারেন্টিনের কড়াকড়ি আছে বলে প্রকাশ্যে কিছু করতে পারছি না এখন। তবে মানুষকে জানাতে চাই, নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে খুশি আমি। যা অর্জন করেছি, তাতে গর্বিত।
‘শেষ ১২ মাসে অস্ট্রেলিয়ার ছেলেদের দলের কোচ হিসেবে আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অনেক ধারণা তৈরি হয়েছে, এটা আমার পরিবারের ওপর বেশ বড় একটা চাপ ফেলেছে। আশা করি, এ সময়ে দায়িত্বে থাকার পুরোটা সময়েই আমি সততা ও মর্যাদা ধরে রাখতে পেরেছি।
‘এ বছর অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত মেয়াদে আমাকে চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল গতকাল। “মাথা উঁচু করে বিদায় নেওয়ার” আবেগটা কাজ করেছে এর পেছনে। সতর্ক বিবেচনার পর আমি চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার বিশ্বাস, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের পরবর্তী অধ্যায় এখনোই শুরু করার স্বার্থে এটাই সবার জন্য সবচেয়ে ভালো।
‘সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো যদি ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেট ও সাপোর্ট স্টাফ আমার সঙ্গে সামনে এগোনোর ব্যাপারটায় সমর্থন করেন না। এখন এটাও স্পষ্ট, সিএর বোর্ড এবং আপনি—নিক, অন্যদিকে এগোতে চান। আমি এ সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই।
সততা, সম্মান, বিশ্বাস, সত্য এবং পারফরম্যান্সের গুণাবলির ওপর আমার জীবনটা গড়া। যদি সময়ে সময়ে সেটা ‘বাড়াবাড়ি’ মনে হয়ে থাকে, তাহলে আমি ক্ষমা চাই।জাস্টিন ল্যাঙ্গার
‘সততা, সম্মান, বিশ্বাস, সত্য এবং পারফরম্যান্সের গুণাবলির ওপর আমার জীবনটা গড়া। যদি সময়ে সময়ে সেটা ‘বাড়াবাড়ি’ মনে হয়ে থাকে, তাহলে আমি ক্ষমা চাই। যেকোনো ক্ষেত্রেই এটা বলা হয়—কোনো কিছুকে যে অবস্থায় পেয়েছেন, এর চেয়ে ভালো অবস্থায় সেটিকে রেখে যেতে পারলে আপনি নিজের কাজটা করেছেন।
‘যদিও এটা বিচার করার ভার আমার ওপর নয়, তবে আশা করি গত চার বছরে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ানদের সম্মান ফিরে পেয়েছে। প্রথম দিন থেকেই বিশ্বাস করে এসেছি, সমর্থকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী একই সঙ্গে ম্যাচে জেতা ও খেলার চেতনা ধরে রাখার কাজটি করা সম্ভব।
‘গত চার বছরে এটা প্রমাণিত হয়েছে, এটা অর্জন করা সম্ভব। মাঠে এবং মাঠের বাইরে দলের প্রচেষ্টায় আমি গর্বিত। আশা করি, আমরা অস্ট্রেলিয়ানদের গর্বিত করেছি, বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর সম্মান অর্জন করেছি।
‘আর “মাথা উঁচু করে বিদায় নেওয়া”র ব্যাপারে বলতে চাই, আমি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলের অংশ ছিলাম, অ্যাশেজজয়ী দলের অংশ ছিলাম, টেস্ট দলকে এক নম্বরে উঠতে দেখেছি, উইজডেনের বর্ষসেরা কোচ হয়েছি, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছি—সবই গত পাঁচ মাসে।
‘আজ আমি কৃতজ্ঞ, মাথা উঁচু করেই বিদায় নিচ্ছি আমি।
‘অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট আমার কাছে সবকিছু। যখন বাচ্চা ছিলাম, তখন থেকেই। খেলা এবং জাতীয় দলকে কোচিংয়ের সুযোগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। আমি বোর্ডকে এ সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। গত চার বছরের স্মৃতি ও বন্ধুত্ব আমার সঙ্গে থাকবে। আশা করি ভালো কিছুই হয়েছে, ভবিষ্যতের জন্য দলকে শুভকামনা জানাই।’