১৭ বছরের কিশোর ফাদওয়া যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ফুটবল পায়ে যাঁদের কারুকাজ এত দিন দেখে এসেছেন টিভি পর্দায়, সেই মেসি, নেইমার, ইনিয়েস্তারা চোখের সামনে! শুধু ফাদওয়াই কেন, ফিলিস্তিনের হাজারো শিশু-কিশোরের জন্যই পরশুর দিনটা ছিল ঐতিহাসিক। সহিংসতার সঙ্গে যাদের নিত্য বসবাস, যুদ্ধ যাদের কাছে একেবারেই আটপৌরে ব্যাপার, সেই ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোরদের কল্পনার নায়কদের বাস্তবে দেখার অনুভূতিটা অন্য রকম তো হবেই। গত ফেব্রুয়ারিতেই বার্সেলোনা ঘোষণা করেছিল আগস্টে প্রাক-মৌসুম এশিয়া সফরের আগে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলে আসছে তারা। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত পরশু বার্সা পা রেখেছে পশ্চিম তীরের দুরা বিমানবন্দরে। সেখানে অগুনতি ভক্ত অভ্যর্থনা জানায় প্রিয় দলকে। তবে দুর্ভেদ্য নিরাপত্তাব্যূহ ভেদ করে কাতালান ক্লাবটির খুব একটা কাছে তারা যেতে পারেনি। মেসিরা বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যান পশ্চিম তীরের শহর দুরার নতুন স্টেডিয়ামে। ২৫ হাজার দর্শকের গ্যালারি ছিল ঠাসা। বার্সার নাম লেখা ব্যানার উঁচিয়ে, গান গেয়ে সমর্থকেরা মাতিয়ে রাখে গ্যালারি। যেন এক টুকরো ন্যু ক্যাম্পই হয়ে উঠেছিল এই স্টেডিয়াম। বার্সা অবশ্য কোনো প্রীতি ম্যাচ খেলেনি, ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী ৪০ জন ফিলিস্তিনি খুদে ফুটবলারকে নিয়ে আয়োজন করেছে প্রশিক্ষণ শিবির। এক দিনের জন্য মেসিরা হয়ে উঠেছিলেন কোচ। বার্সা খেলোয়াড়েরা পরে মাঠজুড়ে দিয়েছেন ল্যাপ অব অনার। আরব আইডল মোহাম্মদ আসাফের গান দিয়ে শেষ হয়েছে এই আয়োজন। রয়টার্স, ওয়েবসাইট। ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে একটা প্রীতি ম্যাচ খেলার প্রস্তাব বার্সা আগেই দিয়েছিল। কিন্তু দুই দেশের বৈরিতার কারণে প্রস্তাবটা নাকচ করে দেন ফিলিস্তিন ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান জিব্রিল রাজুব। বার্সার সফরটা অবশ্য শুধু ফুটবল মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। যিশুর জন্মস্থান বেথলেহেম ও হেবরনেও গিয়েছিল পুরো দল, ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে করেছে সৌজন্য সাক্ষাৎ।
কালই প্রতিবেশী ইসরায়েলের তেল আবিবে গিয়েছে বার্সা। দেখা করেছে ইসরায়েল প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজের সঙ্গেও। দারুণ একটা সম্মানও পেয়েছে। সাক্ষাতে পেরেজ বলেছেন, বার্সা নিছক একটা ক্লাব নয়, এর চেয়েও বেশি কিছু। মেসিদের বলেছেন ‘শান্তির অগ্রদূত’। পরে শিশু-কিশোরদের অনুশীলন শিবির করে থাইল্যান্ড রওনা হয়ে যাওয়ার কথা মেসিদের।