মাহমুদউল্লাহদের একরাশ হতাশা উপহার দিয়েছে স্কটল্যান্ড
মাহমুদউল্লাহদের একরাশ হতাশা উপহার দিয়েছে স্কটল্যান্ড

বাংলাদেশ চড়া মূল্য দিয়ে বুঝল, আল আমেরাত মিরপুর নয়

নিদারুণ ব্যর্থতায় বাংলাদেশ বুঝল, সব সাফল্যেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে নেই।

বিশ্বকাপের আগে মিরপুরের ধীরগতির, স্পিনবিষ ছড়ানো উইকেটে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জেতা বাংলাদেশ বারবার জয়ের অভ্যাসে আত্মবিশ্বাস খুঁজে নিয়েছিল। মিরপুরের উইকেটের সঙ্গে ওমান-আমিরাতের উইকেটের মিল নেই, মিরপুরের উইকেটে সিরিজগুলোয় জয় তাই আসলে কতটা ভালো প্রস্তুতি—এমন প্রশ্নে মেশানো উদ্বেগকে বাংলাদেশ বারবার ঢেকে দিতে চেয়েছে জয়ের অভ্যাসের মোড়কে।

কিন্তু স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গতকাল ৬ রানের হারটা আবরণ খুলে দেখিয়ে দিল প্রস্তুতির দৈন্য।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়াও এখন শঙ্কায় পড়ে গেল। বাংলাদেশের জন্য এখন ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচে জেতা ‘অবশ্যকর্তব্য’। এর পাশাপাশি রানরেটের হিসাবের ঝামেলায় যেতে না চাইলে প্রার্থনায় থাকতে হবে যেন স্কটল্যান্ডের কাছে ওমান হেরে যায়।

তা না হলে? রানরেটের মারপ্যাঁচ শুরু হয়ে যাবে। যেখানে কাল পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে জেতা ওমান অনেক এগিয়ে। গ্রুপের শীর্ষে থাকা ওমানের নেট রানরেট (+) ৩.৩৩৫, বাংলাদেশের (-) ০.৩০০। দুইয়ে থাকা স্কটল্যান্ডের স্বাভাবিকভাবেই তাই (+) ০.৩০০। রানরেটের এই হিসাবা মেলানো হয়তো একেবারে অসম্ভব হবে না। তবে এর আগে মিরপুরের অভ্যাস থেকে বেরোতে হবে বাংলাদেশকে।

সৌম্য আরেকবার ব্যর্থ

১৪১ রানের লক্ষ্য মিরপুরের মাটিতে অনেক বড় কিছু—মিরপুরে রান তাড়া করতে গিয়ে সর্বশেষ ১৪ ম্যাচে মাত্র একবারই এর চেয়ে বেশি রান করেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু গত দুই মাসে ওমানের মাটিতে সহযোগী দেশগুলোর ‘হাই-স্কোরিং’ ম্যাচগুলো বুঝিয়ে গেছে, ওমানের আল আমেরাতে ১৪১ অত বড় কিছু নয়। তুলনামূলক দুর্বল স্কটিশ বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বাংলাদেশের এ ম্যাচ সহজেই জেতার কথা ছিল। কিন্তু মিরপুরের অভ্যাস বিশ্বকাপে গিয়েও বদলাতে পারল না বাংলাদেশ।

দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার ২১ বলের মধ্যে ফিরলেন দলকে ১৮ রানে রেখে। বিশ্বকাপের আগে এ বছরে বাংলাদেশের ১৬ টি-টোয়েন্টির সব কটিতে খেলা মোহাম্মদ নাইমের বদলে উদ্বোধনী জুটিতে লিটনের সঙ্গী করে নামানো হলো দুই প্রস্তুতি ম্যাচে মধ্য তিরিশের ইনিংস খেলা সৌম্যকে। বাংলাদেশ দলের নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেওয়া সিদ্ধান্তটাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়ে সৌম্য আরেকবার ব্যর্থ।

তিনে নামা সাকিবের ২০ রান এল ৭১.৪২ স্ট্রাইক রেটে। মাঝে তৃতীয় থেকে নবম ওভারের মধ্যে টানা ৩৫ বলে বাউন্ডারি পায়নি বাংলাদেশ। নবম ওভারে টানা দুই ছক্কায় সেই বাউন্ডারি–খরা ঘোচানো মুশফিক ৩৬ বলে ৩৮ করেছেন বটে; কিন্তু চাপে পড়লেই বারবার স্লগ সুইপ, প্যাডল স্কুপ করার চেষ্টায় ক্যারিয়ারে অনেকবার দৃষ্টিকটুভাবে আউট হওয়া মুশফিক কালও আরেকবার দলের বিপদ বাড়িয়ে দিয়ে ফিরলেন স্কুপ করার চেষ্টায় বাজেভাবে বোল্ড হয়ে।

বাংলাদেশের ওমানপ্রবাসী সমর্থকেরা মাঠে এসে হতাশ হয়েছেন

তখনো বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি দেখাচ্ছিল। দেখাবেই-না কেন! অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, আফিফ, নুরুল, সাইফউদ্দিন...বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার কাগজে-কলমে তো বেশ লম্বা। কিন্তু এই লম্বা ব্যাটিং অর্ডার তো তখনই কাজে আসবে, যখন ব্যাটসম্যানদের চাপের মুহূর্তে চার-ছক্কা বের করা, এক-দুই রানে প্রতিপক্ষকে উল্টো চাপে ফেলার প্রস্তুতি আর অভ্যাস থাকবে!

তা ছিল না বলেই মাহমুদউল্লাহ-আফিফদের ১০০-র একটু বেশি স্ট্রাইক রেটের ইনিংসগুলো ২০ রানের আশপাশেই থামল। ছিল না বলেই ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ, আফিফ, নুরুল তিনজনই। ছিল না বলেই শেষ পর্যন্ত ১৩৪ রানের বেশি আর যাওয়া হলো না বাংলাদেশের।

মজার ব্যাপার কী, তা জানেন, মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচেও ঠিক ১৩৪ রানই করেছিল বাংলাদেশ। প্রস্তুতি বটে!

এর আগে স্কটল্যান্ডের ইনিংসে অবশ্য আল আমেরাতকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত মিরপুর বলে মনে করিয়েছেন সাকিব-মেহেদীরা। অনেকক্ষণ বলতে ১২তম ওভারের আগ পর্যন্ত।

মিরপুরের ধীর উইকেটে ক্ষুরধার মোস্তাফিজ কাল আল আমেরাতের পিচে সেভাবে কাটার-স্লোয়ার দিতে পারেননি। শেষ ওভারে স্কটল্যান্ডের অষ্টম ও নবম উইকেট নিলেও মোস্তাফিজ নিজের বোলিংয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয়

কিন্তু ওই ১২ ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশের বোলিং যদি ব্রডগেজ লাইনে ছুটতে থাকা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস হয়ে থাকে, পরের আট ওভারে তা লাইনচ্যুত। ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে ৫৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানো স্কটল্যান্ড শেষ আট ওভারে তুলেছে ৮৫ রান! পুরো কৃতিত্বই সাতে নামা ক্রিস গ্রিভসের।

মূলত, লেগ স্পিনে দলকে সাহায্য করা তাঁর দায়িত্ব, বোলিংয়ে এসেই সাকিব ও মুশফিককে তুলে নিয়ে সেই দায়িত্বটা দারুণভাবেই পালন করেছেন গ্রিভস। কিন্তু ব্যাট হাতে ‘বোনাস’ যে দায়িত্বটা পালন করেছেন, সেটিই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে ম্যাচে। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে মোস্তাফিজের বলে সাকিবের ক্যাচ হওয়ার আগে তাঁর ব্যাট থেকে ২৮ বলে এল ৪৫ রান। চার ৪টি, ছক্কা ২টি। এর মধ্যে ১৮তম ওভারে তাসকিনের পরপর তিন বলেই মেরেছেন ২টি চার ও ১টি ছক্কা।

আটে নামা মার্ক ওয়াটের (১৭ বলে ২২) সঙ্গে অষ্টম উইকেটে গ্রিভসের ৩৪ বলে ৫১ রানের জুটিই হঠাৎ করে স্কটল্যান্ডকে ফিরিয়ে আনে ম্যাচে। স্কটল্যান্ডের ইনিংসের মাঝপথে যেখানে বাংলাদেশের ১০০-র কম লক্ষ্য তাড়া করতে হবে বলে মনে হচ্ছিল, সেখানে ইনিংস শেষে বাংলাদেশের সামনে ১৪১ রানের লক্ষ্যটা খুব বড় না হলেও স্কটল্যান্ডকে তা দারুণ আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে গেছে।

যে আত্মবিশ্বাসের সামনে বাংলাদেশ দলের মিরপুর থেকে নিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস আর ধোপে টিকল না।