সেন্ট লুসিয়ায় বৃষ্টি নামল আরেকবার। পুরো দিনটাই গেছে এমন। বৃষ্টির কারণে খোয়ানো ওভার পুষিয়ে দিতে বর্ধিত সেশনের খেলা চলছিল, তাতেই বাধা পড়ল। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল এমন, ওই সময় নামা বৃষ্টির সৌজন্যেই খেলা গড়াল চতুর্থ দিনে—এমন বললে খুব একটা আপত্তি করার সুযোগ নেই। ১৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে ১৩২ রান তুলতেই যে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে তারা। অবশ্য অ্যান্টিগা টেস্টেও দ্বিতীয় ইনিংসে এমন পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ ইনিংস পরাজয় এড়িয়েছিল সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসানের জুটিতে। তবে এবার নুরুলের সঙ্গী হিসেবে সাকিবও নেই, আপাতত আছেন এখনো কোনো রান না করা মেহেদী হাসান মিরাজ।
দ্বিতীয় ইনিংসের এমন ব্যাটিং দুর্দশায় ম্লান হয়ে গেছে খালেদ আহমেদের ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেটও। বাংলাদেশের দুর্দশার শুরুটা হয় কেমার রোচের হাত ধরে—ইনিংসের প্রথম ৩টি উইকেটই নেন তিনি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই তাঁর অনেক বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন তামিম ইকবাল, মাত্র ৪ রান করে। তামিমের উইকেট ছিল রোচের টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৫০তম, এ উইকেট দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় মাইকেল হোল্ডিংকেও ছাড়িয়ে গেলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ নিয়ে ১২ বার তামিমকে আউট করলেন এই উইন্ডিজ পেসার।
২৫১ ও ২৫২তম উইকেটের জন্যও রোচকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ইনিংসের সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলেই আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান ধরা পড়েন তাঁর সেট-আপে। ওভারের প্রথম দুটি বল ফুললেংথে পেয়ে বাউন্ডারিতে পাঠালেও তৃতীয় বলে লেংথ কমিয়ে আনা ডেলিভারিতে আউটসাইড-এজড হন মাহমুদুল। পরের ওভারে রোচ ফেরান এনামুল হককে। বিশাল ইনসুইং ডেলিভারি ফ্রন্টফুট থেকে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লু হন এনামুল, অবশ্য বল ওপর দিয়ে যাবে এমন আশায় রিভিউ নিলেও সফল হয়নি সেটি। উইকেটে হয় আম্পায়ার্স কল।
টেলিভিশন আম্পায়ার ওই রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই আরেক দফা বৃষ্টি নামে ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে, আম্পায়ার জোয়েল উইলসন আউটের সিদ্ধান্ত দেন বৃষ্টি থেকে বাঁচতে দৌড়ে যেতে যেতে। বৃষ্টি নামলেও মধ্যাহ্নবিরতির মতো চা-বিরতিও নেওয়া হয় নির্ধারিত সময়েই। বিরতির পর দ্রুতই উইকেটের দেখা পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেটির জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের।
বরাবরের মতোই আশাজাগানিয়া শুরু করা লিটন দাস ফিরেছেন অসময়ে। সিলসের গুডলেংথ ডেলিভারিটা ঠিক যতটা মনে করেছিলেন, ততটা ওঠেনি। অবশ্য আম্পায়ার আউট না দেওয়াতে একটু আশা ছিল লিটনের, তবে এলবিডব্লুর রিভিউটা দারুণভাবে কাজে লাগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
লিটন ফিরলেও ইতিবাচকই ছিলেন নাজমুল ও অধিনায়ক সাকিব। শুরুতেই ফিলিপের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া নাজমুল শট খেলেছেন সুযোগ পেলেই, তবে শট খেলার অতি-আক্রমণাত্মক মানসিকতাই কাল হয়েছে তাঁর। ৯১ বলে ৮ চারে ৪২ রান করে জোসেফের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ব্যাট ছুড়ে উইকেটটাও ছুড়ে আসেন তিনি। উইকেট ছুড়ে এসেছেন সাকিবও। জোসেফের গুডলেংথ ডেলিভারিতে খোঁচা মেরে স্লিপে ধরা পড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক, করেন ৩২ বলে ১৬ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবার ব্যাটিং করাতেই বাংলাদেশের তখন প্রয়োজন ৫৬ রান। নুরুল ও মিরাজের জুটি সে ব্যবধানকে ৪২ রানে নামিয়ে আনতে পেরেছেন।
এর আগে ৫ উইকেটে ৩৪০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসে প্রথম আঘাতটা করেন মিরাজ, তাঁর ঝুলিয়ে দেওয়া বলে সুইপ করতে গিয়ে জশুয়া ডা সিলভা এলবিডব্লু হন আগের দিনের স্কোরের সঙ্গে ৩ রান যোগ করতেই। কাইল মায়ার্সের সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল ৯৬ রানের। ডা সিলভা আউট হওয়ার পরের ওভারে মিরাজের ওপর চড়াও হন মায়ার্স, মারেন দুইটি চার। পরের ওভারে আলজারি জোসেফও চার মারেন খালেদকে। এক বল পরই অবশ্য অ্যাঙ্গেল করে ভেতরের দিকে ঢোকা বাড়তি বাউন্সের বলটা ঠেলতে গিয়ে মিডউইকেটে লিটনের হাতে সহজ ক্যাচ দেন জোসেফ।
প্রথম সেশনে খেলা হতে পারে মাত্র ৪৪ মিনিট। তবে টানা বোলিং করতে থাকা খালেদ দ্বিতীয় সেশনে পান উইন্ডিজ ইনিংসের সবচেয়ে মূল্যবান কাইল মায়ার্সের উইকেট। ১৪৬ রান করে খালেদের অফ কাটারে বোকা বনেন তিনি, ধরা পড়েন মিড-অনে। অ্যান্ডারসন ফিলিপের উইকেট নিয়ে অবশ্য খালেদের ৫ উইকেট পাওয়া শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিলেন শরীফুল ইসলাম। তবে এরপরই গুডলেংথ থেকে ওবল সিমে বেরিয়ে যাওয়া খালেদের ডেলিভারিতে কট-বিহাইন্ড হন জেইডেন সিলস। দেশের বাইরে ৬ষ্ঠ বাংলাদেশি পেসার হিসেবে ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন তিনি, সর্বশেষ এ বছরের শুরুতে মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিয়েছিলেন ইবাদত হোসেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
তৃতীয় দিন শেষে
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৬৪.২ ওভারে ২৩৪ (তামিম ৪৬, লিটন ৫৩; জোসেফ ৩/৫০, সিলস ৩/৫৩, ফিলিপ ২/৩০, মায়ার্স ২/৩৫) ও ২য় ইনিংস : ৩৬ ওভারে ১৩২/৬ (নাজমুল ৪২; রোচ ৩/৩২, জোসেফ ২/৩১, সিলস ১/১৫)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস : ১২৬.৩ ওভারে ৪০৮ (মায়ার্স ১৪৬, ব্রাফেট ৫১, ক্যাম্পবেল ৪৭, ব্ল্যাকউড ৪০; খালেদ ৫/১০৬, মিরাজ ৩/৯১, শরীফুল ২/৭৬)
বাংলাদেশ ৪২ রানে পিছিয়ে