শুধু ব্যবসার জগৎ বা সংবাদমাধ্যম নয়। ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনও হারিয়েছে একজন সুহৃদকে। লতিফুর রহমানের পরিচিতি ব্যবসায়ী হিসেবেই বেশি হলেও তাঁকে নিজেদের মানুষ মনে করত ক্রীড়াঙ্গন। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেশের ক্রীড়া উন্নয়নে তাঁর অবদান কখনো ভোলার নয়।
২০০০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পেপসি এশিয়া কাপ ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষকতা করে পেপসি। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে পেপসি ২১তম জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপেরও পৃষ্ঠপোষক ছিল। সে সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, 'লতিফুর রহমান সাহেব খুব ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ ছিলেন। তাঁকে যখনই দেখেছি বা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, কখনো মনে হয়নি তিনি এত বড় একজন ব্যবসায়ী। দেখা হলেই ক্রিকেটের খোঁজখবর জিজ্ঞেস করতেন।'
ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলায়ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে লতিফুর রহমানের মালিকানাধীন ট্রান্সকম গ্রুপ। ভলিবল, হ্যান্ডবলসহ বিভিন্ন খেলার উন্নয়নে তাঁর অবদান স্মরণ করেন ক্রীড়া সংগঠকেরা। বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী বলছিলেন, 'জাতীয় ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপ, বিজয় দিবস টুর্নামেন্টসহ আরও কিছু আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন লতিফুর রহমান সাহেব। তবে কখনো তিনি প্রচার নিতে চাইতেন না।'
গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন ট্রান্সকম বেভারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব পদেও তাঁকে দেখা গেছে। লতিফুর রহমানকে নিয়ে স্মৃতিচারণায় ৭৯ বছর বয়সী এই ক্রীড়া সংগঠক বলেন, 'খেলাধুলায় তিনি অনেক সমর্থন দিয়েছেন। কখনো বাহবা নিতে চাননি। ওনার মতো ভালো মানুষ দেখিনি কখনো। আমি ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি থাকার সময় তাঁর সহায়তায় ট্রান্সকমকে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পেয়েছি। তখন সম্ভবত বাস্কেটবলেও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ট্রান্সকম।'
হ্যান্ডবলেও বেশ কয়েকবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ পৃষ্ঠপোষকতা করেছে পেপসি। পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আরও কিছু টুর্নামেন্টও। সেসব স্মৃতি মনে করে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনুর বলেন, 'তখনকার সময়েও হ্যান্ডবলে পৃষ্ঠপোষকতা বাবদ ট্রান্সকম আমাদের সর্বোচ্চ টাকা দিত। লতিফুর রহমান সাহেব একজন ব্যবসায়ী এবং একজন মানুষ হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ। ট্রান্সকম বেভারেজের সঙ্গে ব্যবসার সুবাদে ওনাকে আমার কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তাঁকে কখনো আগে সালাম দেওয়ার সুযোগ পাইনি। সব সময় উনিই আগে সালাম দিয়ে দিতেন।'
ক্রীড়াঙ্গনে অনেকটা নীরব উপস্থিতিই ছিল লতিফুর রহমানের। প্রচারবিমুখ মানিসকতা নিয়েই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে তাই ক্রীড়াঙ্গনেও ভর করেছে শোকের ছায়া। হ্যান্ডবল ফেডারেশন এক শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছে।