সোনালি স্বর

ফাইনালে উঠেছে সেরা দলটিই

লুইস ফিগো
লুইস ফিগো

ব্রাজিলিয়ানদের জন্য এটা ছিল দুঃস্বপ্ন, ফুটবল-বিশ্বের জন্যও। কোনো কিছুই ওদের পরিকল্পনামতো হয়নি। এক ম্যাচে ৭ গোল হজম করা তো অবিশ্বাস্য! জার্মানির মুখোমুখি হওয়ার মতো কোনো প্রস্তুতিই ব্রাজিলের ছিল বলে মনে হয় না। আশা ছিল, নেইমারকে ছাড়াও ওরা লড়াই করবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। নিজের মাঠে নেইমার আর থিয়াগো সিলভাকে ছাড়া বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলার চাপ সেলেসাওরা নিতে পারেনি। তবে ব্রাজিলের কর্মকর্তারা যেন এই খেলোয়াড়দের ব্রাত্য মনে না করেন। খেলায় এমনটা হতেই পারে। এ রকম লজ্জাজনক অধ্যায় কোনো ক্লাব বা দেশ ভুলেই যেতে চাইবে।
সেমিফাইনালের আগেও ব্রাজিলের মধ্যভাগে বা আক্রমণভাগে এমন কেউ ছিল না যে বল ধরে রাখে। আর্জেন্টিনাতে যেমন মাচেরানো, ডি মারিয়া, মেসি আর গ্যাগো। জার্মান দলে ক্রস, লাম, শোয়েনস্টাইগার। প্রথম লাইন থেকে আক্রমণ শুরু করতে পারবে এমন কেউ কিন্তু ছিল না ব্রাজিল দলে। স্কলারির উচিত ছিল উইলিয়ান অথবা হার্নানেসকে খেলানো, যারা মাঝখান দিয়ে প্রতি-আক্রমণ শাণাতে পারবে। সব দিক থেকেই ব্রাজিল ধরাশায়ী হয়েছে, না ছিল কোনো পরিকল্পনা, না ছিল কোনো কার্যকরী কৌশল। জার্মানি ছিল নির্ভুল। ওদের পাসিং ছিল নিখুঁত, আক্রমণ ছিল পরিকল্পিত। আর ব্রাজিল একদমই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো খেলেনি।
জার্মানি ঐতিহাসিকভাবেই পরিকল্পিত ফুটবলে খেলে, আর নয়্যার তো বিশ্বের সেরা গোলরক্ষকদেরই একজন। তবে মূল কৃতিত্ব জার্মান মাঝমাঠের। লাম ওখানে খেলুক আর না-ই খেলুক, জার্মান মাঝমাঠ ছিল নিখুঁত। ব্রাজিল যেটা করতে পারেনি। শুরু থেকে অস্কার, বার্নার্ড, হাল্ক, ফ্রেডরা আক্রমণ করেছে, কিন্তু ১১ মিনিটের মাথায় তো সব অন্য রকম হয়ে গেল। জার্মান কোচ ব্রাজিল দল নিয়ে ভালোই গবেষণা করেছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন বাঁ প্রান্তে ব্রাজিল দুর্বল। লো দলকে বলেছিলেন বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণ শানাতে, আর সেটার ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে।
এর পরের ১২ মিনিট ব্রাজিল এমনভাবে খেলেছে যেন খেলার আর মাত্র ৩০ সেকেন্ড বাকি। কোনো পরিসংখ্যানই সেই বিপর্যয়ের উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারবে না। ৬ মিনিটে ৪ গোল ধুলোয় মিশিয়ে দিল ব্রাজিলের ম্যাচে ফিরে আসার স্বপ্ন। জুনিগার ফাউলে দলটার ভেঙে পড়া শুরু, ষোলোকলা পূর্ণ হলো ক্লোসা যখন রোনালদোর বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভেঙে দিল। আমার তো মনে হয় জার্মান দল ইচ্ছা করেই পরের দিকে ধীরেসুস্থে খেলেছে, না হয় বেলো হরিজন্তের ট্র্যাজেডি আরও মর্মন্তুদ হতো।
সবশেষে বলব, সেরা দলটাই ফাইনালে উঠেছে এবং জেতার মতো খেলেই উঠছে। এখন দেখার বিষয় লোর দল ২৪ বছর পর শিরোপা জিততে পারে কি না।