থিসারা পেরেরার ৩ উইকেটের পর আন্দ্রে ফ্লেচারের অর্ধশতক ও মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ৪৪ রানের ইনিংসে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে আটকে দিয়েছে খুলনা টাইগার্স। ভালো একটা ভিত পেয়েও মাঝের ওভারগুলোতে দ্রুত উইকেট হারিয়ে খেই হারানো চট্টগ্রাম তুলেছিল ৮ উইকেটে ১৪৩ রান। প্রায় একই রকম শুরু করা খুলনাকে ফ্লেচারের পর পথ দেখিয়েছেন মুশফিক। টানা ২ ম্যাচ জেতার পর অবশেষে হারল চট্টগ্রাম, আর তৃতীয় ম্যাচে এটি দ্বিতীয় জয় খুলনার।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে রানের দেখা মিলবে, দলগুলোর আশা ছিল এমন। চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে অনেক বড় স্কোর যে হলো, সেটা নয়। তবে যা হলো, ঢাকার দিনের ম্যাচের থেকে সেটাতেই ‘উন্নতি’ স্পষ্ট। ঢাকায় দিনের ম্যাচে ১৩০-এর বেশি ওঠেনি রান, আজ প্রথম ইনিংসেই চট্টগ্রাম টপকে গেল সেটি। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি যথেষ্ট হয়নি তাদের জন্য।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই নাবিল সামাদের বলে ক্যাচ দিয়ে কেনার লুইস ফিরলেও উইল জ্যাকস ও আফিফ হোসেন পাওয়ারপ্লেতে ভালো একটা ভিত এনে দেন চট্টগ্রামকে। প্রথম ৬ ওভারে ওঠে ৪৬ রান, এ মৌসুমে দিনের ম্যাচগুলোতে যেটি সর্বোচ্চ। ঢাকা পর্বে দিনের ম্যাচে পাওয়ারপ্লেতে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল মিনিস্টার ঢাকার, তবে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ৪১ রান তুলতে ৪ উইকেট হারিয়েছিল তারা।
ভিতটা শক্ত পেলেও চট্টগ্রাম পথ হারানো শুরু করে উইল জ্যাকসের (২৩ বলে ২৮) আউটের পর। থিসারা পেরেরার স্লোয়ারে স্টাম্পে বল ডেকে আনেন জ্যাকস, ভাঙে ৪৩ বলে ৫৭ রানের জুটি। আফিফকে এরপর সেভাবে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। সেকুগু প্রসন্নকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েছেন সাব্বির (৪ রান), আফিফের সঙ্গে ১৯ রানের জুটির পর মেহেদী হাসানকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ (৬)।
চট্টগ্রামের অন্যতম ভরসা বেনি হাওয়েল নেমেই রিভার্স সুইপে চার মেরেছিলেন একটা। কিন্তু পেরেরার স্লোয়ারে ধোঁকা খান তিনিও, দেন ফিরতি ক্যাচ। এতক্ষণ টিকে থাকা আফিফ ফেরেন ফরহাদ রেজার প্রথম ওভারে। দারুণ টাইমিং হয়েছিল, তবে সেটা সোজা যায় লং অনে মেহেদীর হাতে। তাতে শেষ হয় ৩৭ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় আফিফের ৪৪ রানের ইনিংস। এরপর পেরেরার স্লোয়ারের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন শামীম। ১ উইকেটে ৬০ থেকে ৭ উইকেটে ১০২—৪২ রান তুলতে চট্টগ্রাম হারায় ৬ উইকেট। শেষ দিকে নাঈম ইসলামের ১৯ বলে ২৫, শরীফুল ইসলামের ৬ বলে ১২ রানে ১৪৩ পর্যন্ত যায় চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রামের মতো শুরুতেই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে হারায় খুলনাও। কোভিড-১৯ নেগেটিভ হয়ে দলে ফেরা সৌম্য সরকার (১ রান) ফ্লিক করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন শরীফুল ইসলামের বলে। অবশ্য খুলনাও শুরুতে উইকেট হারানোর ধাক্কা সামাল দেয় ভালোভাবেই।
আগের ম্যাচে কাঁধে আঘাত পেয়ে উঠে যাওয়া ফ্লেচার দ্বিতীয় উইকেটে রনি তালুকদারের সঙ্গে ৫০ রানের জুটির পর মুশফিকের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে তোলেন আরও ৪৬ রান। পাওয়ারপ্লেতে খুলনা তুলেছিল ৪৩ রান। ১৭ বলে ১৭ রান করে নাসুম আহমেদের বলে লং অনে লাফিয়ে ওঠা উইল জ্যাকসের হাতে ধরা পড়েন রনি। ঠিক আগের বলেই রনি বেঁচে গিয়েছিলেন ‘এডিআরএস’ নিয়ে, আম্পায়ার তানভীর আহমেদ এলবিডব্লু দিলেও স্লো-মোশন রিপ্লে দেখে টিভি আম্পায়ার সে সিদ্ধান্ত নাকচ করেন বল ব্যাটে লেগেছিল বলে।
পাওয়ারপ্লের পর থেকে অবশ্য বাউন্ডারি-খরায় ভুগছিল খুলনা। সপ্তম থেকে ১৩তম ওভারের মাঝে আসে মাত্র দুটি বাউন্ডারি। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে রেজাউর রহমানকে ফ্লিক করে ছয় মারেন মুশফিক, সে ওভারে ওঠে ১৪ রান। পরের ওভারে মিরাজের ফুলটসে ছয়ের পর ফুল লেংথের বলে আবার তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন ফ্লেচার—৪৭ বলে ৫৮ রান করার পর।
ফ্লেচার ফিরলেও খুলনাকে ঠিক পথে রাখেন মুশফিক। খুলনা অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৩০ বলে ৪৪ রান করে। স্কোর সমান হওয়ার পর ফিরেছিলেন ১৫ বলে ২৩ রান করা প্রসন্ন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৪৩/৮ (লুইস ১, জ্যাকস ২৮, আফিফ ৪৪, সাব্বির ৪, মিরাজ ৬, হাওয়েল ৫, নাঈম ২৫*, শামীম ২, রেজাউর ৭, শরীফুল ১২*; কামরুল ১/৪১, নাবিল ১/১৪, মেহেদী ১/২৭, প্রসন্ন ১/২৪, পেরেরা ৩/১৮, ফরহাদ ১/১৬)
খুলনা টাইগার্স: ১৮.৫ ওভারে ১৪৪/৪ (ফ্লেচার ৫৮, সৌম্য ১, রনি ১৭, মুশফিক ৪৪, প্রসন্ন ২৩, পেরেরা ০*; মিরাজ ২/২৪, শরীফুল ১/৩২, নাসুম ১/২৬, রেজাউর ০/৪০, হাওয়েল ০/২১)
ফল: খুলনা ৬ উইকেটে জয়ী