সুপার টেনে বাংলাদেশ

তামিম-ঝড়ে বিধ্বস্ত ওমান

bongos
bongos

For more cricket videos go to www.bongocricket.com.

কোচ হাথুরুসিংহেকে কথা দিয়েছিলেন, এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁকে একটা সেঞ্চুরি উপহার দেবেন। কথা রাখলেন তামিম ইকবাল।
কদিন আগে যে বাবা হলেন, ছেলেকে উপহার দেওয়ার কোনো তাড়না ছিল না? ওটা সম্ভবত ভাবতেই চাননি। সন্তানের মুখ দেখার পর এশিয়া কাপে খেলতে ব্যাংকক থেকে যেদিন দেশে ফিরলেন, প্রসঙ্গটা তুলতেই যেন আঁতকে উঠেছিলেন, ‘না, না, এমন কিছু ভাবতেই চাই না। আগে থেকে ভাবলে আমার আর তা হয় না। একবার রাতে স্বপ্ন দেখলাম, আমি ডাবল সেঞ্চুরি করছি, ট্রিপল সেঞ্চুরি করছি। পরদিন চেয়ে চেয়ে দেখলাম, সাঙ্গাকারা ট্রিপল সেঞ্চুরি করে ফেলল!’
স্ট্রোক প্লের মতো তামিমের উদ্যাপনও দেখার মতো। ব্যতিক্রমী কিছু না কিছু থাকবেই। ব্যাট-হেলমেট রেখে শূন্যে লাফিয়ে ওঠাটা অনুমিতই ছিল। এরপর যা করলেন, সেটিতে যথারীতি নতুনত্ব। হাথুরুসিংহের টাক মাথা বোঝাতে চুলে হাত বোলালেন। কোচকে মনে করিয়ে দিলেন, তোমাকে বলেছিলাম না!
৬০ বলে সেঞ্চুরি আর ৬৩ বলে অপরাজিত ১০৩ রানের ইনিংস এটাও কি মনে করিয়ে দেয়নি, একটু খারাপ সময় এলেই যেভাবে তাঁর দিকে সমালোচনার তির ছোটে, তা বড় অন্যায়। তামিম ইকবাল বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক আশীর্বাদের নাম।
ওমানের বিপক্ষে নকআউটে পরিণত ম্যাচে অস্বস্তিকর শুরুটা যে অমন হাওয়ায় উড়ে গেল, সে তো তামিমের সৌজন্যেই। সৌম্য সরকারকে যিনি মনে করেন ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ’। হয়তো তা-ই। তবে এই ম্যাচে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রায় অন্ধকার করে দিতে যাচ্ছিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ২২ বলে ১২ রান, স্ট্রাইক রেট মাত্র ৫৪.৫৪। ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে স্কোরবোর্ডে যে মাত্র ২৯ রান, সেটির মূলেও ধুঁকতে থাকা সৌম্য। এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগের দুই ম্যাচে তো বটেই, মাত্র দেশে খেলে আসা এশিয়া কাপে প্রবলতর প্রতিপক্ষের সঙ্গেও পাওয়ার প্লের শেষে এতটা বিবর্ণ থাকেনি বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড (সর্বনিম্ন ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৩১/২)।
টানা পঞ্চম ম্যাচে মাশরাফির টস হেরে বসাটা তখন বিরাট তাৎপর্য নিয়ে দেখা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। বৃষ্টির কারণে হল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড ম্যাচটি টোয়েন্টি-টোয়েন্টি থেকে সিক্স-সিক্স হয়ে গেছে। এই ম্যাচ শুরুর সময়ও বৃষ্টির চোখরাঙানি। প্রথমে ব্যাটিং করা মানেই অনিশ্চয়তার আবর্তে ডুবে যাওয়া। তার ওপর এমন দুঃস্বপ্নের শুরু!
সেখান থেকে ২০ ওভার শেষে ১৮০। প্রথমে ব্যাট করে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। ওমানের ইনিংসে মাঠকর্মীদের সঙ্গে বৃষ্টির অমন রসিকতায় মেতে ওঠাটা তাই বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমেও রসিকতার বিষয়ই হয়ে থাকল। দুশ্চিন্তার নয়।
প্রথম বৃষ্টি-বিরতি ৭ ওভার পর। ওমানের স্কোর তখন ২ উইকেটে ৪১। ডাকওয়ার্থ-লুইসের হিসাবে পার স্কোর থেকে ১৯ রান পিছিয়ে। তার মানে, সেখানেই খেলা শেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশ ১৯ রানে জিতত। আবারও দুবার বিরতি পড়ল এরপর। ১৬ ওভারে ১৫২ রানের নতুন লক্ষ্য নিয়ে ওমান আবার ব্যাটিংয়ে নামার ১.২ ওভার পরই আবারও বৃষ্টি। স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৪৫। খেলার জন্যই খেলা হচ্ছে, এটি অনেক আগেই পরিষ্কার। আবারও বৃষ্টি, আবারও নতুন লক্ষ্য—এবার ১২ ওভারে ১২০। যার মানে ২২ বলে ৭৫ রান করতে হবে ওমানকে।
সমীকরণটা এমন অসম্ভব থেকে আরও অসম্ভব বানিয়ে দেওয়ার মূলেও তো তামিমের ওই ইনিংস। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ১১০ রান, এর ৬৬-ই তাঁর অবদান। এর আগে দুবার আশির ঘরে অপরাজিত থেকে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ফিরেছেন। কাল ১৭তম ওভারেই সেই আশঙ্কা শেষ। তামিম ৮৬ রানে অপরাজিত। আউট হয়ে গেলে ভিন্ন কথা, নইলে সেঞ্চুরি না হওয়ার কোনো কারণই নেই। প্রথম বলে ২ রান নিলেন, পরের বলে রান নেই, তৃতীয় বলে ৬, পরের দুই বলে ২ আর ১ রান নিয়ে তামিম অপরাজিত ৯৭। পরের ওভারের প্রথম তিনটি বল যে ‘ডট’ দিলেন, মনে হয় না সেটি বোলিংয়ের গুণে। বোলিং নয়, তামিম তখন খেলছেন ইতিহাসের বিপক্ষে!
পরের বলে এক্সট্রা কাভার দিয়ে মারা চারে নতুন ইতিহাস। তামিমের কথা বলতে বলতেই তো দেখি ম্যাচ রিপোর্ট শেষ! এর বাইরে বলার মতো আর আছেই বা কী! আছে, সাব্বির রহমানের কথা একটু না বলাটা অন্যায় হবে। ২৬ বলে করেছেন ৪৪ রান। তামিমের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১০.৫৮ রানরেটে ৯৭ রানের জুটি। অমন শামুকের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সূচনাটা তো এ কারণেই গায়ে লাগল না।
সাকিবের কথাও একটু বলা উচিত। এই ম্যাচের আগে তামিমের সঙ্গে তাঁর একটা ‘লড়াই’ ছিল। লড়াই বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ১ হাজার রান করা নিয়ে। তাতে হেরে গেছেন। তবে ৯ বলে অপরাজিত ১৭ রানের ছোট্ট ঝড়ের পর ১৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার-সেরা বোলিং। সাকিবও এই ম্যাচটা মনে রাখবেন।
মনে রাখবে বাংলাদেশও। ওমানের বিপক্ষে জয় আর এমন কী, তবে এই জয়েই যে টি-টোয়েন্টির আসল পর্বে উত্তরণ। যেটির শুরু আগামী বুধবার পাকিস্তানকে দিয়ে।
বাংলাদেশকে ডাকছে ইডেন গার্ডেন!

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৮০/২

ওমান: ১২ ওভারে ৬৫/৯
ফল: বাংলাদেশ ৫৪ রানে জয়ী (ডি/এল)