For more cricket videos go to www.bongocricket.com.
সেই একই রকম লাফ। সেই একই রকম বাতাসে ঘুষি ছোড়া। একই রকম উদ্যাপন। এবার শুধু হাসতে হাসতে আঙুলের ইশারায় কিছু একটা দেখালেন। যেটা দেখাননি ছয় বছর আগে লর্ডসে সেঞ্চুরির উদ্যাপনে।
তাৎক্ষণিক মনে হলো, তামিম ইকবাল বুঝি তাঁর নবজাতকের উদ্দেশে কিছু বোঝাতে চাইলেন। আবার এটাও হতে পারে, ড্রেসিংরুমের বাইরে বসে থাকা কোচকে কিছু বললেন। কাল ব্যাটিং শেষে মাঠ ছাড়ার সময় সংক্ষিপ্ত টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তামিম বলছিলেন, ‘হাথুরুসিংহেকে বলেছিলাম এই বিশ্বকাপে তোমাকে একটা সেঞ্চুরি উপহার দেব।’
সেঞ্চুরি তামিম এর আগেও ১৩টি করেছেন। লর্ডস টেস্টের সেই সেঞ্চুরি এবং সেঞ্চুরি-পরবর্তী উদ্যাপন তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের অ্যালবামে বিখ্যাত এক ছবি হয়েই আছে। ওয়ানডের ৬টি সেঞ্চুরিকেই বা ভুলে যাবেন কীভাবে! তামিম ফিফটি করলেই তা দর্শক মনোরঞ্জনের খোরাক। এক শ করা মানে তো বিনোদনের বন্যা! সেই তামিম যখন টি-টোয়েন্টিতেও সেঞ্চুরি করেন, ৬৩ বলে ১০৩ রান করে অপরাজিত থাকেন, সেটার তুলনা কোথায় পাবেন?
কোথাও পাওয়ার কথা নয়। এই সংস্করণের ক্রিকেটে যে এর আগে বাংলাদেশের কেউ সেঞ্চুরিই করেননি! গৌরবের মালাটা তামিমের গলায় ঝুলবে বলেই বোধ হয় অপেক্ষায় ছিল এত দিন। তামিমের ব্যাটিংয়ে যে আক্রমণাত্মক সৌন্দর্য, তাতে এই ‘প্রথম’ তারই প্রাপ্য ছিল। হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের দর্শকদের সৌভাগ্য যে তাঁরা চর্মচক্ষে ইতিহাস গড়াটা দেখলেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের পক্ষে কারও প্রথম সেঞ্চুরি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় ইনিংসও। সত্যটা হলো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বাংলাদেশ এখন পারে।
শুরুটা এশিয়া কাপে। ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টি সামর্থ্য ফুল হয়ে ফুটতে শুরু করে ওই টুর্নামেন্টেই। প্রথম সন্তানের মুখ দেখতে ব্যাংককে থাকায় পুরো টুর্নামেন্ট খেলতে পারেননি তামিম। শেষ দিকে দুটি ম্যাচ খেলে নিজেকে মেলে ধরতে না পারায় আফসোস থেকে গিয়েছিল হয়তো। সেই আফসোস যেন ‘খ্যাপাটে ষাঁড়’ হয়ে দূর করছেন বিশ্বকাপে!
প্রথমে হল্যান্ড, এরপর বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া আয়ারল্যান্ড ম্যাচ, কাল ওমান। তামিমের ব্যাটে নিষ্পেষিত আইসিসির ‘সহযোগী সমাজ’। ৩ ম্যাচে ২৩৩ রান। মাত্র এক ম্যাচে আউট হওয়ায় গড়ও ২৩৩, স্ট্রাইক রেট ১৫৮.৫০। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে তামিমের চেয়ে বেশি রান তো আর কারও নেই-ই, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করা আফগান ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শেহজাদের রানও মাত্র ১৪২। এটা ঠিক, ‘ছোট’দের সঙ্গে রান করে এত বাহাদুরির কিছু নেই। আসল চ্যালেঞ্জ এখনো বাকি। কিন্তু নিজের দিনে তামিম ইকবাল যে ‘ছোট’-‘বড়’ ভেদাভেদ করেন না, সেটা আগেও বহুবার প্রমাণিত। দ্বিতীয় পর্বের প্রবল প্রতিপক্ষদেরও তা ভালো করেই জানা।
পুত্রসন্তানের মুখ দেখার পর মুঠোফোনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তামিম ব্যাংকক থেকে বলেছিলেন, ‘দায়িত্বটা আরও বেড়ে গেল।’ তিনি বোধ হয় সেদিন শুধু ‘বাবা তামিমে’র দায়িত্বের কথাই বলেননি, বলেছিলেন ‘ব্যাটসম্যান তামিমে’র দায়িত্বের কথাও।