সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোরটি ভারতের। ২০০৬ সালে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তারা তুলেছিল ৫৬১ রান। সে ইনিংসে তারা মেরেছিল ৫৫টি চার (২টি ছয়)। তালিকায় পরের সর্বোচ্চ ইনিংসটি বাংলাদেশেরই, ২০০৪ সালে নিজেদের ‘ঐতিহাসিক’ ড্রয়ের ম্যাচে তারা মেরেছিল ৪২টি চার। এ মাঠে প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি চারের তালিকায় এরপরই আছে বাংলাদেশের আজকের ইনিংসটি। ৩৯টি চার এসেছে ঠিকই, তবে বাংলাদেশ ২৩৪ রানের বেশি তুলতে পারেনি।
যে উইকেটে শট খেলা এমন সহজ, সেটি যে ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন নয়—আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে, ২ উইকেটে ১০৫ রান তোলার পরও এত কম রানে আটকে যাওয়াই বলে দেয়, বাংলাদেশ বড়সড় একটা সুযোগই হারাল। ‘মঞ্চ’ তৈরি করার পরও সেখানে দালানকোঠা তুলতে না পারার হতাশায় পুড়ছেন তামিম ইকবালও। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজেই বললেন, সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি তারা। আর ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স বলছেন, ইনিংস বড় করার বিকল্প নেই কোনো।
অ্যান্টিগার প্রথম দিনের দুঃস্বপ্নের পর সেন্ট লুসিয়ায় বাংলাদেশের শুরুটা ইতিবাচকই হয়েছিল। তামিম ওই মঞ্চের কথা বললেও সুযোগ হারানোর শুরুটা মূলত হয় তাঁকে দিয়েই। ৯ চারে ৪৩ রানের ইনিংসের পর বেশ আলগা শটে ফেরেন তিনি, হারান বড় স্কোরের সুযোগ। এরপর লিটন দাস অর্ধশতক পেয়েছেন, লোয়ার অর্ডারে শরীফুল ইসলাম-ইবাদত হোসেনরা চেষ্টা করেছেন। তবে এমন উইকেটের চাহিদা মেটানো ব্যাটিং করে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই।
তামিম বলছেন, আফসোসই হচ্ছে তাঁর, ‘টেস্ট ক্রিকেটে এমন শুরু পেলে আমার ইনিংসগুলো সাধারণত বড় হয়। দুঃখজনক যে আজ বড় করতে পারিনি। বলটা হয়তো আমি ছেড়ে দিতে পারতাম। হয়তো বলটা যতটা ওঠার কথা ছিল না, ততটুকু উঠেছে। এ কারণে আমার ব্যাটের স্টিকারে লাগে। (তবে) আমি এমন অজুহাত দেওয়ার মতো কেউ না। দলের অভিজ্ঞ সদস্য হিসেবে এমন শুরু পেলে আমার উচিত সেটাকে বড় করা।’
তামিমের মতে, দল হিসেবেও ব্যাটিংটা যুতসই হয়নি তাঁদের, ‘দেখুন, জুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যদি বড় জুটি হয়, তখনই বড় ইনিংস খেলা সম্ভব। আজ আমরা ভালো শুরু করেছি। কিন্তু বড় রান হয়নি। তবু একটা পর্যায়ে আমরা ১২০ রানে (১০৫) ২ উইকেট ছিলাম। সেখান থেকে মিডল অর্ডারে ধস নামে। এরপর লোয়ার অর্ডারে শরীফুল, ইবাদত কিছু রান করেছে। অবশ্যই লিটন ভালো খেলেছে। তবে আমাদের আজ ওই মঞ্চটা তৈরি ছিল বড় করার। টেস্টের প্রথম দিন ১২০ রানে ২ উইকেট, এমন শুরু যে কোনো দিনই নিতে চাইবেন। কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারিনি। ৩০০-৩২০ রান যদি করতাম, তাহলে এই উইকেটে সেটা ভালো রান হতো।’
তবে এ জন্য টপ অর্ডার বা মিডল অর্ডার—নির্দিষ্ট কারও কথা বলতে চান না তিনি, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, ওই অবস্থা থেকে এই অবস্থায় চলে এসেছি। মূলত ব্যাপারটা হচ্ছে, হয় প্রথমে হচ্ছে না, না হলে মাঝে হচ্ছে না। এটিই সমস্যা। আমি এমন কেউ নই যে বলব, অমুকের কারণে হচ্ছে না বা তমুকের কারণে হচ্ছে না। ব্যাটিং বিভাগ হিসেবেই হচ্ছে না। আমি ভালো করি না করি, ছয় নম্বর ভালো করুক বা না করুক, টপ অর্ডার বা মিডল অর্ডারের দিকে আঙুল তুলে লাভ নেই।’
অ্যান্টিগার তুলনায় এখানে বোলারদের জন্য তেমন সহায়তা ছিল না, তামিম স্বীকার করে নিয়েছেন সেটি। কোনো স্বীকৃত স্পিনার ছাড়াই নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং-ও ঠিক ছন্দময় ছিল, বার বার লেংথ গড়বড় করে ফেলেছেন তারা।
ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সও বলছেন, এমন উইকেটে ২৩০ রান যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট রান করতে কী করা উচিৎ ছিল, দিনের খেলাশেষে ড্যারেন গঙ্গার সঙ্গে কথা বলার সময় মনে করিয়ে দিয়েছেন সিডন্স, ‘আমাদের লম্বা সময় ব্যাটিং করতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করাটাই আসল। আমাদের দিন শেষে অপরাজিত থাকতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা সেটি করতে পারছি না। ছেলেদের এখানকার বাউন্সে স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলতে দেখলাম। তামিম ও লিটনের ব্যাটিং ভালো লাগছিল। কিন্তু ৪০-৫০ রানের ইনিংস আমাদের ম্যাচ জেতাবে না। যারা শুরু পাচ্ছে, তাদের বড় ইনিংস খেলতে হবে।’
কী করতে হবে, সেটি অবশ্য নতুন কথা নয় মোটেও। প্রথম দিনের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর তামিমও শোনালেন পুরোনো আশার কথাই, ‘আমরা জানি এর চেয়ে ভালো দল আমরা। এর থেকে পথ খুঁজে বের করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে যাতে সব সময় না হয়।’
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য এমন হতাশাজনক ব্যাটিং হয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়মিত ঘটনাই।